নিপীড়িত মেয়েদের পাশে থাকার কাজটি তিনি করে আসছেন গত ২৫ বছর ধরে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘স্বয়ম’-এর ডিরেক্টর অনুরাধা কাপুর সম্প্রতি তাঁর কাজের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন কেবিসি-তে। তাঁর অভিজ্ঞতা শুনলেন অন্বেষা দত্ত।

গত জুন মাসে ‘আমরা মেয়েরা’ পাতাতেই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন অনুরাধা কাপুর। সেই বার কথা হয়েছিল লকডাউনে বাড়তে থাকা মেয়েদের ওপর পারিবারিক হিংসা বিষয়ে। সবসময়ের মতো তখনও মেয়েদের পাশে থেকে ভরসা দিয়েছিল তাঁর সংস্থা। ওই সময়েই সোনি টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ (কেবিসি) থেকে ফোন পেয়েছিলেন অনুরাধা। তাঁর কাজের কথা জেনে উৎসাহিত হয়ে ওই চ্যানেল তাঁকে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যেমন তেমন নয়, ‘কর্মবীর’ শীর্ষক বিশেষ পর্বের অতিথি হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। অনেক প্রশ্ন, খুঁটিনাটি, নানা ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত অক্টোবর মাসে শ্যুটিংয়ের জন্য মুম্বই গিয়েছিলেন অনুরাধা। শো-এর উপস্থাপক এবং বলিউডের মহাতারকা অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি তো হয়েইছিলেন। কেবিসি-তে অনুরাধার পাশে বসে খেলার সঙ্গী ছিলেন আর এক বিখ্যাত অভিনেত্রী রত্না পাঠক শাহও। গতকাল রাতে সম্প্রচারিত হয়েছে সেই বিশেষ পর্বটি। তার আগেই অনুরাধা কাপুর আমাদের পাঠকদের জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।
‘লকডাউনে ফোন পেলেও সময় গড়িয়ে গিয়েছিল অনেকটাই,’ বলছিলেন অনুরাধা। তাঁর সংস্থা সম্পর্কে তো বটেই, কীভাবে তাঁর পথ চলা শুরু, কোথা থেকে অনুপ্রেরণা পেলেন, সবই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছে তাঁর কাছে। তারপরেই তাঁকে অতিথি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। এরপরে শ্যুটিংয়ের নির্ধারিত তারিখটি ঠিক হওয়ার পরে মুম্বই গিয়ে কোভিড পরীক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। এসবের পরে আসে গেম সম্পর্কে বোঝানোর পালা। তারপর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে আলাপ। শ্যুটিং শুরুর আগে একপ্রস্থ মক প্রশ্নোত্তর নিয়ে বসেছিলেন তাঁরা। তারপর শুরু হয়েছিল ফাইনাল গেম।
অনুরাধা জানালেন, বেলা ১১টা থেকে ৩ টে পর্যন্ত টানা শ্যুটিং হয়েছিল। কোভিড প্রোটোকল মেনে সেটে অন্য দর্শক ছিলেন না। শ্যুটিংয়ের দায়িত্বে থাকা লোকজন ও শুধু তাঁরা তিনজনই ছিলেন। এসব আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি পেরিয়ে তিনি যখন বসলেন অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি, তখন আলাদা করে কেমন অনুভূতি হয়েছিল? তিনি জানালেন, তারকাসুলভ কোনও আলাদা দূরত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগই দেননি অত্যম্ত জনপ্রিয় প্রবীণ অভিনেতা। তাই অনুরাধাও কথা বলতে এতটুকু হোঁচট খাননি। বরং তাঁর কথায়, ‘বচ্চন সাহেব এবং রত্নাদেবী দু’জনেই দারুণ মনোযোগী শ্রোতা। তাই একটা সমৃদ্ধ আলোচনা করতে পেরেছি। শ্রোতা যদি অন্যমনস্ক হন, আপনি বুঝতে পারবেন। ওঁরা এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত এবং আগ্রহী ছিলেন, যে কোনও অসুবিধা হয়নি। কখনও কথা, কখনও গেমের প্রশ্ন। এইভাবে সহজভাবে পারস্পরিক আদানপ্রদান এত সুন্দর এগিয়েছিল যে ভুলেই গিয়েছিলাম কোনও সেটের মধ্যে রয়েছি আমি। কোনও বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীর সামনে বসে আছি, সেটাও মাথায় ছিল না। কোথা দিয়ে সময়টা পার হয়ে গেল, বুঝতেই পারিনি!’ সমাজে এখনও মহিলাদের ‘বস্তু’ হিসেবে দেখা হয়, অনুরাধার মুখে এই মন্তব্য শুনে দৃশ্যতই লজ্জিত দেখিয়েছে অমিতাভকে। ‘হিংসা বন্ধ করতে হবে, মেয়েরা আর সহ্য করবে না,’ অনুরাধার মুখে এই বার্তা শুনে সাধুবাদ দিয়েছেন মহাতারকা। রত্নাও দরাজ প্রশংসা করেছেন অনুরাধার।
কেবিসি-তে জেতা অর্থ তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজেই ব্যয় হবে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এমন একটা জনপ্রিয় মঞ্চে আসার সুযোগ দেওয়ায় তাদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ দিয়েছেন অনুরাধা। বহু মানুষ মেয়েদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা নির্যাতন নিয়ে আরও একবার ভাববে। অনুরাধার কথায়, ‘পারিবারিক হিংসা তো পরিবারের মধ্যে হয়। পরিবার যদি সেটা আটকাতে না পারে, তাহলে কী করে চলবে? তাদের নতুন করে চিন্তা করা দরকার। এই অনুষ্ঠান পুরুষতন্ত্রের মনে সেই ধাক্কাটা আশা করি দিতে পারবে। নতুন করে আলোচনা হবে।’ ‘কর্মবীর’ পর্বে এমন অনেক মানুষই গুরুত্ব পান, যাঁদের নিরন্তর কাজ গোটা সমাজকে সাহায্য করছে। সেটাও প্রশংসা করার মতো, জানিয়েছেন অনুরাধা।
শো চলাকালীন দেখা গিয়েছে স্বয়ম-এর অন্য কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছেন চ্যানেলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কলকাতায় এসে সামনাসামনি কথা বলে বুঝতে চেয়েছেন হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মেয়েদের জবানবন্দি। কীভাবে এই সংস্থা সেই সব মহিলার মনোবল বাড়িয়েছে, জেনে নিয়েছেন সেটাও। এই মহিলারা এখন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। অনুরাধার মতোই তাঁরা জোরের সঙ্গে বলতে চান, ‘ব্যস আর নয়। হিংসা অনেক হয়েছে। এবার বাঁচার পালা।’