পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
ত্বকচর্চার একটা বাইবেল আছে, বলেন রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন। তা হল ক্লেনজিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং। বিউটি থেরাপির মূলেই রয়েছে এই নিয়ম। বৈদিক যুগ থেকেই এই নিয়মে রূপচর্চা করা হতো। ত্বকে মাটির প্রলেপ, শিশিরের ছোঁয়া বা চন্দন চর্চায় তা কোমল করে তোলা সবই এই পরিষ্কার করা, টানটান রাখা ও নরম রাখারই উপায়। তবে এই পরিচর্যাকে বাইবেল বলা হলেও এটাই ত্বকের যত্নের শেষ কথা নয়। আধুনিকতার সঙ্গেই রূপচর্চা বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা ও গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত ত্বকের ধরন বিভিন্ন। আর সেই অনুযায়ী তার দেখভালও দরকার।
বাইরে বেরনোর আগে ত্বকের চর্চা করি আমরা। কিন্তু রাতে? তখন কেমন দেখভাল চায় ত্বক? শেহনাজ জানালেন বয়স ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত যত্নের কথা।
ত্বকের সাধারণ যত্ন
সারাদিনের ক্লান্তি যাতে ত্বকের গায়ে বাসা বাঁধতে না পারে তার জন্য শোওয়ার আগে হার্বাল ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে, বললেন শেহনাজ হুসেন। তারপর গোলাপের পাপড়ি ও কাঁচা হলুদ বেটে মুখে লাগানো যেতে পারে। তারপর তা অল্প শুকিয়ে নিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর অ্যালোভেরা জেল লাগান। ত্বক যখন এই জেল টেনে নেবে তখন হালকা কোনও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এই ময়েশ্চরাইজার সারা রাত ত্বক আর্দ্র রাখবে। ঠোঁটের জন্য সামান্য নারকেল তেল বা ঘি অল্প গরম করে লাগানোই সবচেয়ে ভালো।
নাইট কেয়ার ঠিক কোন বয়স থেকে করা দরকার? তা নির্ভর করে আপনার ত্বকের ধরনের উপর। নর্মাল স্কিন হলে মোটামুটি পঁচিশ বছর বয়স থেকে নিয়ম করে নাইট কেয়ারে চর্চিত রাখুন ত্বক। তবে অতিরিক্ত শুষ্ক বা তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে টিনএজ থেকেই শুরু করতে হবে যত্ন।
অ্যাকনে থাকলে কেমন যত্ন
অনেক টিনএজারেরই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক থেকে অ্যাকনে বা ব্রণর সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো ময়েশ্চারাইজার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে চায়। মনে করে তাতে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে যাবে, ব্রণ বাড়বে। এই ধারণা একেবারেই ভুল, জানালেন শেহনাজ। তাঁর কথায়, ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এই ধরনের ময়েশ্চারাইজার সবচেয়ে ভালো। সেক্ষেত্রে শুধুই বিউটি ট্রিটমেন্ট যথেষ্ট নয়। বরং পুষ্টিকর ডাল, সব্জি সমৃদ্ধ ডায়েট, প্রচুর জল ইত্যাদিও দরকার। অ্যাকনে থাকলে ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যায় বলে বারবার মুখে জল দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় কিশোরীদের মধ্যে। এতে ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল জলের সঙ্গে ধুয়ে যায়। ফলে ত্বকে আর্দ্রতার অভাব হয়। রাতে মুখ ধোয়ার আগে একটা হালকা ক্লেনজার (ফেস ওয়াশ, বেসন, মুসুর ডাল বাটা ইত্যাদি) মুখে মেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর অ্যালোভেরা জেল সারা মুখে মেখে নিতে হবে। এছাড়াও গ্রিন টি ব্যাগ ঠান্ডা জলে বা বরফ জলে ভিজিয়ে সেই টি ব্যাগ ব্রণর উপর বারবার লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। এরপর ওয়াটার বা জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলেই ত্বকের যত্ন সম্পূর্ণ হবে। তৈলাক্ত ত্বকে সিরামও ভালো। রাতে শোওয়ার আগে অবশ্যই সিরাম ব্যবহার করা উচিত।
শুষ্ক ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন জানালেন বিউটিশিয়ান। তাঁর মতে এই ত্বক খুবই সেনসিটিভ। অল্প বয়সে খুব একটা বোঝা যায় না, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে ত্বকের রূপ পরিবর্তন হতে থাকে। এই ধরনের ত্বকের যত্ন শুরু করতে হয় অল্প বয়সেই। রাতে মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করার পাশাপাশি সপ্তাহে একবার ওটমিল ও মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে তা দিয়ে মুখ ধোয়া ভালো। হেভি ক্রিম বেসড ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। নারকেল তেল লাগাতেও পারেন শোওয়ার আগে।
বয়স অনুযায়ী যত্নের ধরন ভিন্ন
কুড়ির কোঠায় বয়স হলে ক্লেনজিং আর ময়েশ্চারাইজিং যথেষ্ট, বলেন শেহনাজ।
তিরিশের ঘরে ক্লিনিংয়ের সঙ্গে স্ক্রাবিং যুক্ত করুন। সপ্তাহে একটি রাত ঘরোয়া স্ক্রাব লাগান মুখে। তৈলাক্ত ত্বকে বেসন, কমলাবেলুর খোসা, টকদই দিয়ে স্ক্রাব বানান। শুষ্ক ত্বকে বেসনের সঙ্গে মধু ও মুসুর ডাল বাটা মেশান স্ক্রাবে।
চল্লিশে গিয়ে দরকার অতিরিক্ত হাইড্রেশন। ক্লেনজার থেকে ময়েশ্চারাইজার সবেতেই হাইড্রেটিং এজেন্ট রয়েছে কি না দেখে নিন। গ্রিন টি আর বেকিং সোডা মিশিয়ে ঘরোয়া প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। সঙ্গে রাতে আন্ডার আই ক্রিম লাগান।
পঞ্চাশ বছরে ও তার পরে শুধুই বিউটি থেরাপি নয়, ডায়েটও চাই বিশেষ। ডায়েটে ফল ও সব্জি রাখতে হবে। নিয়ম করে তিন লিটার জল খেতে হবে। সিরাম খুবই জরুরি। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর সিরাম লাগাতে হবে। অ্যালোভেরা জেল, হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার পুরু করে লাগাতে হবে।
সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বয়স, ষাটের কোঠা। ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে। কুঞ্চন আসে। ত্বক পরিষ্কার করে সিরাম ও টোনার লাগিয়ে নিন। তারপর অ্যালোভেরা জেল। জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার মাসাজ করে ত্বকে দিন। এরপর ত্বকে কোকো বাটারের মতো হেভি ক্রিমযুক্ত লোশন লাগান। ত্বকে মিশে গেলে দু’হাতের তালুতে নারকেল তেল নিয়ে তা মুখে ও ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। সঙ্গে আন্ডার আই ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না। এছাড়াও ভিটামিন ই, আদার গুঁড়ো, গ্রিন টি অয়েল যুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।
গ্লিসারিন ট্রিটমেন্ট
ষাটের উপর বয়স যাঁদের তাঁরা ত্বকের যত্ন একটু কমিয়ে ডায়েট ও এক্সারসাইজে বেশি মন দিন, বলেন শেহনাজ। শরীর ফিট থাকলে মন ভালো থাকবে যার প্রভাব পড়বে ত্বকে। এই বয়সে সবচেয়ে উপযুক্ত গ্লিসারিন ট্রিটমেন্ট। রাতে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার পর তার উপর অল্প গ্লিসারিনের পরত বুলিয়ে নিন। এই বয়সে ঘন ক্রিম প্রয়োজন নেই। রোজ রাতে গ্লিসারিনে অল্প জল মিশিয়ে পাতলা করে লাগান সারা মুখে। চোখের পাশে, ঠোঁটের পাশে একটু পুরু করে পরত দিন। হাতের পাতায়, কনুইয়ের কাছেও গ্লিসারিন লাগাবেন।