পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কপালে টিপ। হালকা খোঁপা। আটপৌরে শাড়ির আরতি মজুমদার চাকরি করতে যায়। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন তাকে স্বাধীনতার আস্বাদ দেয়। সত্যজিৎ রায় ‘মহানগর’-এ এভাবেই সাজিয়েছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়কে। আবার ‘বসন্ত বিলাপ’-এর অনুরাধাকে মনে পড়ে? সাধারণ সুতির শাড়িতেই সে ঘরে-বাইরে স্বচ্ছন্দ। দীনেন গুপ্তর নির্দেশনায় সেভাবেই ‘অনুরাধা’ হয়ে উঠেছিলেন অপর্ণা সেন। কর্মক্ষেত্রে শাড়ি বাঙালির সমাজে চিরাচরিত বিষয়। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সিনেমাতেও। যে নারী প্রতিদিন তিন ঘণ্টা জার্নি করে কোনও গ্রামের স্কুলে পড়াতে যান, শাড়ি পরাটা হয়তো তাঁর কাছে বাধ্যতামূলক। আবার যিনি আধ ঘণ্টার মেট্রো সফরে অফিস ডেস্কে হাজিরা দিতে পারেন, শাড়ি হয়তো তাঁর উৎসবের সঙ্গী। এর উল্টো চিত্রও বাস্তব। ইচ্ছে করে অথবা বাধ্য হয়ে কর্মক্ষেত্রে শাড়ি পরতে হলে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আপনার আলমারি সাজাবেন কীভাবে?
ডিজাইনারের মত
ফ্যাশন ডিজাইনরা সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আমার মতে প্রতিদিন শাড়ি পরতে হলে আরামদায়ক হালকা শাড়ি বেছে নিন। যাঁরা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাঁদেরও কিন্তু গরমের কথা মাথায় রাখতে হবে। দক্ষিণ ভারতের কোনও সুতির শাড়ি বা সুন্দর ব্লক প্রিন্ট বা সুতির উপর কোনও সুতোর কাজের শাড়ি পরুন। অফিসের জরুরি মিটিংয়ে সুতির উপর কাঁথা কাজের শাড়ি পরতে পারেন। শাড়িটা হয়তো গর্জিয়াস। কিন্তু রংটা এমন প্যাস্টেল শেডের হল যে দেখতে ভালো লাগবে। যাঁরা একেবারেই শাড়ি পরতে পারেন না অথচ এমন কাজ করেন, দৈনিক শাড়ি পরাটা যেখানে আবশ্যিক, তাঁরা প্রিন্টেড মলমল পরুন। অথবা ধনেখালিতে সুন্দর ছাপা শাড়ি, হালকা কোটার শাড়ি সহজে সামলাতে পারবেন। কোটাতে বাটিক, মাড প্রিন্ট, কলমকারি, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন রকমের প্রিন্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে এখন। সেসব শাড়ি একটু অন্যরকম ব্লাউজ দিয়ে পরতে পারেন। অফিসে অনেকে হাইনেক ব্লাউজ পরতে পছন্দ করেন, একটা সাধারণ সরু পাড়ের সুতির মলমল শাড়ি আজরখ বা কলমকারির ব্লাউজ দিয়ে পরতে পারেন। নিজেরও ভালো লাগবে, যাঁরা দেখছেন, তাঁদেরও ভালো লাগবে।’
গরমে স্টাইল করতে একরঙা শাড়ির উপর জোর দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার স্রোতস্বিনী মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘মিনিমালিস্টিক লুক ক্রিয়েট করতে এক রঙের শাড়ি পরুন। তার মধ্যে বেশি কাজ না থাকাই ভালো। এক রঙা সুতি, লিনেন, টিস্যু বা অরগ্যাঞ্জা শাড়ি পরুন অফিসে। এগুলো ওজনে খুব হালকা। ফলে সহজেই ঘাম শুষে নিতে পারে। যে কোনও ফ্যাব্রিকে সাদা রং ট্রাই করুন।’
সৈকত মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমি নিজে আরাম পাচ্ছি কি না এবং উল্টোদিকের মানুষটা আমাকে দেখে আরাম পাচ্ছেন কি না, ফ্যাশন মানে আমার কাছে সেটাই। রঙের দিকে খেয়াল রাখুন। একটু ভারী কাজের শাড়ি হালকারঙা হলে অফিসে ক্যারি করতে পারবেন। পিচ, পেস্তা গ্রিন, লাইট পিঙ্ক, ডাস্কি রোজ পিঙ্ক, সাদা, অফ হোয়াইট, লেমন গ্রিন গরমে দারুণ লাগবে। ইয়াং জেনারেশন কিন্তু সাদা, অফ হোয়াইটকে ভীষণ প্রাধান্য দেয়।’
ফ্যাশনের জন্য বাজেটে আপস করা তো সম্ভব নয়। তাই অধিকাংশের সাধ ও সাধ্য মেটাতে দড় কোন কোন শাড়ি আপনার তালিকায় রাখতে পারেন, তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
ব্লক প্রিন্ট
গরমের দিনে আরামের সঙ্গী সুতির ব্লক প্রিন্টের শাড়ি। হালকা রঙে ট্রেন্ডি প্রিন্ট ট্রাই করুন। লিনেন বা খাদির কাপড়েও প্রিন্ট ভালো মানায়। যেসব ডিজাইনার নিজস্ব ব্লক নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের শাড়ি এক্সক্লুসিভ। কারণ ওই নির্দিষ্ট ব্লক বাকিদের কাছে পাবেন না। বাজেট থাকলে সেই সব ব্লক প্রিন্টেড শাড়ি কিনে রাখুন। যা ভিড়ের মধ্যে আপনাকে আলাদা করবে।
প্রাদেশিক শাড়ি
সম্বলপুরের সুতির শাড়ি, ইক্কত হোক অথবা দাক্ষিণাত্যের সুতির গাদোয়াল— যে কোনও প্রাদেশিক সুতির শাড়ি গরমে আদর্শ। কোটা, কেরালা কটন, সুতির পোচমপল্লি, মাহেশ্বরী শাড়ি, বাংলার ধনেখালি, প্রতিদিনের কর্মক্ষেত্রে ভালো মানাবে।
জামদানি
আসল বাংলাদেশি জামদানি শাড়ির সুতো এত মিহি যে পরলে আরাম নিশ্চিত। সেই শাড়ি আপনি বিয়েবাড়ি থেকে অফিস— সর্বত্র পরতে পারবেন। কিন্তু পকেটের কথা ভাবলে হাত বাড়ান সাধারণ জামদানির দিকে। যেসব জামদানি মূলত ফুলিয়ায় তৈরি হয়, তার দাম অনেকটাই বাজেটের মধ্যে থাকে। সুতির এই সব শাড়ি গরমের জন্য আদর্শ।
চান্দেরি
হালকা অথচ অভিজাত লুক চাইলে চান্দেরি গরমের জন্য আদর্শ। দিনভর অফিসের পর ছোটখাট কোনও অনুষ্ঠানেও এই ধরনের শাড়ি পরে যোগ দিতে পারেন। শুধু বদলে নিন গয়নার লুক।
মলমল
আসল মলমল শাড়ি অনেকটা রুমালের মতো। গ্রীষ্মের দিনে গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা শাড়ি খোঁজেন অনেকেই। যদি আপনিও সেই দলের হন, তাহলে মলমল আপনার জন্য সেরা। এর সঙ্গে রকমারি ব্লাউজ ট্রাই করতে পারেন।
তাঁত
কিছুদিন আগে পর্যন্তও মধ্যবিত্তর সংসারে তাঁতের শাড়িই পরতেন মা, মাসিরা। সেই তাঁত তার আগের জৌলুস হারিয়েছে। তবে পুরনোর মধ্যে নতুনকে খুঁজে নেওয়ার প্রয়াস তো প্রশংসনীয়। তাই পুরনো শাড়ির দোকান ঘুরে নরম ধনেখালি তাঁত খুঁজে বের করুন। হালকা জমির উপর নকশাদার বুটি বা চিকন পাড়ে জ্যামিতিক নকশা নিমেষে বদলে দিতে পারে সাজ।