গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
এই চ্যালেঞ্জারদের প্রত্যেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে সবচেয়েছ উল্লেখযোগ্য বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, বৈষম্য, আইনের কাটাছেঁড়া এবং তদন্তকারী কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহার, মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা সেনাবাহিনীর দখলদারি, কেন্দ্রীয় অর্থ হস্তান্তরে একচোখামি এবং সংবাদ মাধ্যমের উপর খবরদারি। তবে মাননীয় মোদি এই বিষয়গুলিকে ‘অবান্তর অভিযোগ’ দাবিসহ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি মুনশিয়ানার সঙ্গেই সেগুলি পাশ কাটিয়েছেন, যশপ্রীত বুমরাহের মতো ক্লিন বোল্ড করেছেন সম্মিলিত বিরোধীদের এবং ‘মহিষের উপর উত্তরাধিকার কর’ আরোপের ধারণা ছড়িয়ে বাজার মাত করার উপযোগী একটি ‘ন্যারেটিভও’ বানিয়েছেন। আমি ভাবছি যে, এমন একটি আইডিয়া ‘তামাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান’-এর উপর বহু বছরের গবেষণার ফল। ‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কি মহিষের উপর উত্তরাধিকার কর আরোপ করবেন?’ এই প্রশ্নে দেশব্যাপী ‘অ্যানিমালেটেড’—সরি, একটি ‘অ্যানিমেটেড’ বিতর্ক চলছে। বিতর্কটিকে আমার তরফে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করা যাক।
পশুদের উপর কর
এই বিষয়ে মৌলিক প্রশ্নটি উঠবে যে, কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের কর চাপালে সেটি সংবিধানসম্মত হবে কি? সপ্তম তফসিলের তালিকা ২-এর ৫৮ নম্বর এন্ট্রিতে ‘প্রাণী ও নৌকার উপর কর’ বিষয়ে লেখা আছে। প্রাথমিকভাবে, পশুদের উপর কর ধার্য করার ক্ষমতাটি রাজ্য সরকারের উপর ন্যস্ত এবং তার জন্য সংরক্ষিত। বিপরীতে, কেন্দ্রীয় সরকার তালিকা ১-এর ৮৬, ৮৭ বা ৮৮ নম্বর এন্ট্রির অধীনে এমন করকে ন্যায্য দাবি করতে পারে। ওই তিনটি এন্ট্রি যথাক্রমে সম্পত্তির মূলধনী মূল্যের উপর কর, এস্টেট ডিউটি এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত ডিউটি সংশ্লিষ্ট। আইনি পরিভাষায়, মহিষ কি সর্বদাই একটি প্রাণী? যখন এটি ‘উত্তরাধিকার’ সূত্রে প্রাপ্ত হয় কিংবা ‘উত্তরাধিকার’ বলে প্রাণীটির হাত বদল ঘটে তখন মহিষ কি একটি ‘সম্পদ’ হয়ে ওঠে? প্রশ্নটির মীমাংসার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স এবং একটি সাংবিধানিক বেঞ্চের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হতে পারে। অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার ‘অ্যানিমাল স্পিরিটস’ এক্ষেত্রে পুরোদস্তুর কার্যকর।
কর ভিত্তি
এই আইডিয়া রচয়িতা বলেছেন, ‘আপনার দুটি মহিষ থাকলে তার থেকে একটি কেড়ে নেওয়া হবে।’ অর্থাৎ এর থেকে এটাই বোঝায় যে, উত্তরাধিকার কর কেবলমাত্র দুটি বা ততোধিক মহিষের উপর ধার্য করা হবে এবং ওই করের হার হতে পারে ৫০ শতাংশ।
কিন্তু সমস্যা আরও আছে—কর পরিচালনা করা যে সহজ কম্ম নয়! আপনার দুটি মহিষ থাকলে কর আদায়কারী তার থেকে কোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন? যদি দুটিই একই লিঙ্গ এবং রঙের হয়, তবে কর আদায়কারীটি তার যেকোনও একটিকে নিয়ে চলে যেতে পারেন, যতক্ষণ না তিনি ‘বুরিদানের গাধা’ গল্পে বর্ণিত দ্বিধার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ক্লান্ত হয়ে মারা না যাচ্ছেন। তবে মহিষ দুটির মধ্যে একটি ‘মাদি’ এবং অন্যটি ‘মরদা’ হলে তিনি কোনটিকে বেছে নেবেন? এর উপর মহিষ অন্তত চারটি রঙেরও দেখা যায়—ছাইরঙা, কালো, সাদা এবং কালো-বাদামি মেশানো। ধরুন দুটি মহিষ কালো এবং সাদা, কর আদায়কারী কোনটি বেছে নেবেন? লিঙ্গ সংক্রান্ত পক্ষপাত বা জাতিগত কুসংস্কারের অভিযোগ এড়িয়ে কার্য সমাধা করতে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেসকে (সিবিডিটি) উপযুক্ত নিয়ম তৈরি করতে হতে পারে। তদুপরি, যদি সংশ্লিষ্ট এস্টেটে বিজোড় সংখ্যার মহিষ থাকে তবে অন্য একটি অদ্ভুত সমস্যা দেখা দেবে যে, কর আদায়কারী কীভাবে ৫০ শতাংশের হার প্রয়োগ করবেন এবং মহিষ হত্যার দায় থেকে রক্ষা পাবেন?
কর হার
আইডিয়া রচয়িতা ৫০ শতাংশ করের হার প্রস্তাব করেছেন। আইনটি কি চ্যালেঞ্জে টিকতে পারবে? কেননা, এমন হার প্রাথমিকভাবে খারিজ হওয়ার যোগ্য? কর্পোরেট ট্যাক্সের বর্তমান হার (১৫, ২২ বা ৩০ শতাংশ) বা ব্যক্তিগত আয় করের হার (৪২.৮ শতাংশ পর্যন্ত) প্রয়োগ করা হলে আইডিয়া রচয়িতার কল্পিত ‘স্বচ্ছ ও সুন্দর’ করটি হয়ে উঠবে গব্বর সিং ট্যাক্স বা জিএসটি’র মতোই জটিল। তাতে মহিষ ট্যাক্স সর্বজনীনভাবে ঘৃণার বিষয় হয়ে উঠবে। সংসদে শুধু এই কর হার নিয়েই বিতর্ক করলে কয়েকটি দিন পেরিয়ে যেতে পারে।
চার্জিং সেকশন
কর আইনের আসল জায়গা হল চার্জিং সেকশন। উপযুক্ত শব্দ চয়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়বেন স্বয়ং ড্রাফটসপার্সন। অবশেষে সিবিডিটি এক নির্বোধের মতো পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। তাতে বহু আপত্তি খারিজ হয়ে যাবে। পরিণামে ভুগতে হতে পারে চার্জিং সেকশনকে। কারণ বিভিন্ন আপত্তির ক্ষেত্রে তারা এমন মীমাংসা করতে চাইবে যা মানুষ মানবে না এবং আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে।
অনন্য কর?
মহিষের উপর ৫০ শতাংশ অভিন্ন হারে উত্তরাধিকার কর আরোপকে আইডিয়া রচয়িতার বিবেচনায় একটি ‘অনন্য কর’ (ইউনিক ট্যাক্স) মনে হতে পারে। নিশ্চিতরূপে, মৃত ব্যক্তির ‘সমস্ত’ সম্পত্তির উপর তিনি একটি উত্তরাধিকার কর প্রস্তাব করেননি। সম্ভবত, তিনি ভেবেছিলেন যে মহিষ নামক সম্পদটি নিয়েই বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। ভারতীয় পুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর দেবতা যম আসেন একটি মহিষের পিঠে চড়ে। মরণশীল মানুষের উদ্ভাবিত গাড়ি, মোটরবাইক কিংবা সাইকেলের মতো যানবাহনের সঙ্গে যমের স্বর্গীয় বাহনটিকে এক করে ফেললে সেটি ‘অপবিত্র’ হয়ে যাবে। মৃত ব্যক্তির সমস্ত সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার কর আরোপে কর-ক্ষুধার্ত সিবিডিটি অর্থমন্ত্রীকে রাজি করাতে পারলেই মহিষকে অন্যান্য করযোগ্য সম্পদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে (ক্লাবড উইথ আদার ট্যাক্সেবল অ্যাসেটস)। তখন মহিষের উপর আরোপিত উত্তরাধিকার করটি মৃত ব্যক্তির সম্পদসীমা অনুসারে ‘প্রগতিশীল’ কর বলে গণ্য হতে পারে।
মহিষই ভবিষ্যৎ
মাননীয় নরেন্দ্র মোদি—তাঁর পাবলিক ফিনান্স, বিশেষভাবে করনীতি সম্পর্কিত গভীর জ্ঞানের জন্য সুপরিচিত। তিনি একটি বৈপ্লবিক কর প্রস্তাব করেছেন। ভবিষ্যতে কর উদ্ভাবনে দেশকে সেটি প্রশস্ত রাস্তা দেখাবে। দুগ্ধ-প্রদায়ী মহিষ পালনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন কর্মসূচি চালু করতে পারে। তার জন্য প্রাথমিকভাবে খরচ করা হতে পারে মোট ৮ লক্ষ ৬ হাজার কোটি টাকা। দেশের প্রতিটি জেলার জন্য এক হাজার কোটি টাকা হারে ধরলে মোট ব্যয় বরাদ্দ এরকমই হতে হবে। মরদা মহিষগুলি যান্ত্রিক লাঙলের বিকল্প হয়ে উঠলে তাতে মিলবে ডিজেলের সাশ্রয়। ক্ষতিকারক রাসায়নিক সারের জায়গা নিতে পারে মহিষের গোবর থেকে উৎপন্ন জৈবসার। মহিষের দুধই হয়ে উঠতে পারে ভারতের পছন্দের দুধ।
আইডিয়া রচয়িতার ‘বিকশিত ভারত’-এর দৃষ্টিভঙ্গিকে আমি কুর্নিশ জানাই। অন্যান্য দেশকে পিছনে ফেলে ভারতে থাকবে দুটি জাতীয় প্রাণী—জঙ্গলে বাঘ মামা এবং মানুষের জীবন-জীবিকার নানামুখী ক্ষেত্রের জন্য বাড়িতে মহিষ।