সংবাদদাতা, কাঁথি: এবার লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা এলাকায় লিড বাড়াতে কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। বরাবর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কাঁথিতে শাসকদল বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে দক্ষিণ কাঁথিতে একটু একটু করে তৃণমূলের রাশ আলগা হয়েছে এবং বিজেপির প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে। সেবার দক্ষিণ কাঁথিতে তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় করকে ১০ হাজার ভোটে পরাজিত করে বিধায়ক হন বিজেপির অরূপকুমার দাস। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার অধীন কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির দখলে আসে। কাঁথি-১ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাজিলাপুর, নয়াপুট, মহিষাগোট, দুলালপুর ও হৈপুর তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। শুধু রাইপুর-পশ্চিমবাড়, বাদলপুর ও সাবাজপুট তৃণমূল পুনর্দখল করে। কাঁথি-৩ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দুরমুঠ বিজেপি দখল করেছে। কুসুমপুর তৃণমূল পুনর্দখল করেছে। দক্ষিণ কাঁথিতে জেলা পরিষদের চারটি আসনের মধ্যে দু’টি বিজেপি এবং দু’টি দখল করেছে তৃণমূল। দক্ষিণ কাঁথির মধ্যেই রয়েছে কাঁথি শহর। কাঁথি পুরসভা তৃণমূল দখল করলেও ২১টি আসনের মধ্যে তিনটি আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। ফলে এই ক’বছরে দক্ষিণ কাঁথিতে বিজেপি যে তাদের সংগঠন এবং প্রভাব অনেকটাই বাড়িয়েছে, একথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তাই এবার লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভার নিরিখে বিজেপিকে পিছনে ফেলে লিড বাড়ানোই লক্ষ্য শাসকদলের নেতাদের। একইসঙ্গে লক্ষ্য, বিধানসভা ভোটের আগে লড়াইয়ের জন্য শক্ত জমি তৈরি করা। তৃণমূল মনে করে, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি ও বঞ্চনার রাজনীতি ভোট বাক্সে তাদের পালে হাওয়া আনবে। এই তত্ত্বকেই সামনে রেখেই তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক দিনরাত এক করে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক নানা ইস্যুকে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছে গেরুয়া ব্রিগেড। জোরদার প্রচার করছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীও। প্রচারে পিছিয়ে নেই বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী ভট্টাচার্য। ফলে দক্ষিণ কাঁথিতে লড়াইটা বেশ জমেই উঠেছে।
কাঁথি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীত পট্টনায়ক ও কাঁথি-৩ ব্লক সভাপতি নন্দদুলাল মাইতি বলেন, দক্ষিণ কাঁথিতে যা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। ইতিমধ্যে ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে ব্লকে আশি শতাংশ বাড়িতে পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছে গিয়েছে। একশো শতাংশ ঢালাই রাস্তা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এলইডি পথবাতি ও হাইমাস্ট আলোকস্তম্ভ বসেছে। আমরা প্রচারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু, স্বাস্থ্যসাথী সহ নানা সরকারি জনমুখী প্রকল্পের কথা তুলে ধরছি। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা এবং আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়েছে। তেমনি বিজেপি সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার একটাও পূরণ করেনি। আমরা প্রচারে বেরিয়ে মানুষকে বিজেপির বঞ্চনার রাজনীতির কথাই বলছি। দক্ষিণ কাঁথিতে এবার তৃণমূল সম্মানজনক লিড দেবে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মানস করমহাপাত্র বলেন, দিদি ও মোদি একই কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ। দু’টি দলই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা মানুষ ভালোভাবে বুঝে গিয়েছেন। তাই মানুষ এদের কাছ থেকে পরিত্রাণ চাইছেন, পরিবর্তন চাইছেন। এবার ভোটে তার প্রতিফলন পড়বেই। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, কোথাও উন্নয়নের লেশমাত্র নেই। মানুষ তৃণমূলের মতো দলকে আর চাইছেন না। অনাস্থা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। তারই প্রতিফলন পঞ্চায়েত ভোটে পড়েছে, লোকসভা ভোটেও পড়বে। তাই দক্ষিণ কাঁথিতে আমরাই এগিয়ে।
রবিবার পটাশপুরে তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিকের প্রচার।-নিজস্ব চিত্র