শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
মহাযোগী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দপুরী মহারাজের অধ্যাত্ম-যোগশক্তির প্রভাব ছিল তুলনাহীন। লোক-লোচনের অন্তরালে লোকোত্তর নিগুঢ়লোকে তিনি সর্ব্বক্ষণ আত্মগোপন করে থাকলেও সময়ে সময়ে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা বাইরে প্রকাশ করে ফেলতেন, যা দেখে সাধারণ মানুষেরা বিস্ময়াভূত না হয়ে পারতেন না। একবারের ঘটনা। গুরুদেবের শরীরে সাংঘাতিক একটি বিষফোড়া হয়েছিল। যন্ত্রণায় একশেষ হলেও গুরুদেবের দেহাত্ম-বোধ বর্জিত মনের শান্তি বিঘ্নিত হতো না বা উদ্বেগ প্রকাশ করতেন না। সাধকের দেহাত্মবোধ আছে কিনা অনেক সময় মহামায়াও রোগাদি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। ইহাও সেরূপ ঘটনা কিনা কে জানে? সে যা হোক, শহর হতে ডাঃ সুধীর রঞ্জন দাস মহাশয়কে নিয়ে আসা হলো। তিনি এসে গুরুদেবের পায়ে হাত রেখে প্রণাম করলেন। তাঁকে দেখে সন্তানবৎ গুরুদেবও অভিভূত হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি গুরুদেবের শরীরস্থ ফোড়ায় অস্ত্রোপচারের বিধি ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হলেন। কিছু না করে এমনিভাবে অস্ত্রোপচার করার জন্য গুরুদেবও ক্ষত স্থানটি বাড়ায়ে ধরলেন। ডাক্তার বাবু বললেন-“ঐ ভাবে তো অস্ত্রোপচার করা যাবে না, মেজর অপারেশন। আগে সংজ্ঞা হীন করে নিতে হবে তৎপর অস্ত্রোপচার সম্ভব।” গুরুদেব বললেন, “দেখ, আমাকে সংজ্ঞাহীন করতে হবে না, নিশ্চিন্তে তোমার কাজ সমাধা করতে পার, আমার কথা বিশ্বাস করে দেখ না।” সাধু-মহাপুরুষের অলৌকিকত্ব সম্বন্ধে ধারণা তাঁর তেমন একটা নাই। ডাক্তারী বিধান মতে চিকিৎসা না করে রোগীর নির্দেশানুসারে চিকিৎসা করতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না শেষে কি হতে কি হয়- এই ছিল তার ভয়। গুরুদেব অভয় দিলেন। ডাক্তার বাবু অগত্যা কি করবেন? রোগীর ইচ্ছামত সংজ্ঞাহীন না করেই ফোড়াস্থানে অস্ত্র চালাতে লাগলেন। ডাক্তার বাবু ভেবে অবাক হয়ে গেলেন-এত বড় অস্ত্রোপচারেও রোগীর চোখে মুখে বিন্দুমাত্র ব্যথার ছাপ দেখলেন না। গুরুদেব ফেল্ ফেল্ দুটি চোখে কাষ্ঠবৎ স্তব্ধ হয়ে অস্ত্রোপচারের দিকে তাকায়ে রয়েছে। অপারেশন পর্ব সমাপ্তির পর ডাক্তার বাবু অত্যন্ত কৌতুহলী হলেন। গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন- “বাবা, এত বড় অস্ত্রোপচার করলাম, কিন্তু আপনার কোন প্রকার জ্বালা যন্ত্রণা কিছু দেখলাম না, আপনার কি কোন দেহবোধ নেই? গুরুদেব সস্নেহে বললেন- “তুমি যখন অস্ত্র বসাতে যাচ্ছ, তখন দেহ ও মনকে নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম। বের হয়েই দেখলাম-পার্শ্বের পাহাড়ের পাদদেশে বিচরণরত গরুর উপর একটি বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাই দেখে বাঘটিকে তাড়া করতে গেলাম। শরীরে ছিলাম না বলে তাই কোন ব্যথা অনুভব করিনি। এ কথা শুনে ডাক্তার বাবুর চমক লাগল। কিছুক্ষণ পরেই সংবাদ আসল-পাহাড়ের নীচু জমিতে সত্যিই বাঘ গরুকে আক্রমণ করেছিল। এই খবর শুনে ডাক্তার বাবুর সংশয় দূর হয়ে গেল। বিপদে-আপদে-দৈব-দুর্বিপাকে গুরুদেব ভক্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচাবার জন্য প্রয়োজন হলে অধ্যাত্ম শক্তিও তিনি প্রয়োগ করতেন। ১৯৬০ ইংরেজীর শতাব্দীর স্মরণকালের প্রলয়ঙ্করী এতদ্ঞ্চলে প্রকৃতির তাণ্ডব নৃত্যের সংবাদ কারো অজানা নয়। ঐ সময় আমাদের অনেক গুরু ভাই গিয়েছিলেন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। যে জায়গায় তারা গিয়েছিলেন সেই স্থান তীর হতে প্রায় ৮০/৮৫ কিঃ মিঃ মাইল দূরে। মাছ ধরাই তাদের একমাত্র জীবিকা। যখন হঠাৎ করে সমুদ্রে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্ট হলো তখন তাঁরা আত্মরক্ষার মরণপণ লড়াই করেও নিজেদের জীবন ও নৌকা রক্ষায় অক্ষম হলে আর্ত্তের ভগবান শ্রীগুরু চরণে নিলেন ঠাই। কাতরে গুরু গুরু বুক ফাটা কান্না করতে লাগলেন।
দীপঙ্কর চৌধুরীর ‘অমৃত পুরুষ অদ্বৈতানন্দ’ (৩য় খণ্ড) থেকে
