মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
জগতের সঙ্গে ভগবানের সংযোগ করতে তাঁরা উৎসুক কেন? তাঁদের মনে অজ্ঞাত সুপ্ত জাগতিক ভোগবাসনাই তার কারণ। তাঁদের ত্যাগ অসম্পূর্ণ। মনও ভগবানের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই জগতের অনিত্যতাসূচক মায়াবাদ খণ্ডনের জন্য এবং জগতের নিত্যত্ব প্রমাণের জন্য এত ব্যগ্রতা। এই দর্শন কালে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। এ তো আর আধ্যাত্মিক অনুভূতিপ্রসূত নয়—বুদ্ধির কারসাজি মাত্র। তাই ত্যাগের প্রয়োজন। অন্ততঃ মানসিক ত্যাগের উপর সকল আচার্যগণ জোর দেন। আমাদের মনকে এভাবে শিক্ষা দিতে হবে, যাতে বহির্মুখীবৃত্তি ও বিষয়াসক্তি ত্যাগ করে, সে অবিচ্ছিন্ন ভগবদ্ চিন্তায় ডুবে থাকতে শেখে। যেখানে, যে অবস্থায়, থাকি না কেন, সর্বদা ভগবান ব্যতিরেকে অন্য সব বিষয়ে অনাসক্তি অভ্যাস করতে হবে। দেশসেবা, জনসেবা, দয়া, পরদুঃখকাতরতা, বুদ্ধিগত আদর্শের নামে বিক্ষেপ আসবে। যে ভগবানকে চায়, তাকে এসব কাটিয়ে উপরে উঠতে হবে। বিষয়রূপে এসব ভাল, তবে যাঁদের মনে সংসারাসক্তি রয়েছে তাঁদের এসব করা উচিত। তাঁদের পক্ষে এসব সহায়ক। কিন্তু যাঁরা মনেপ্রাণে অনুভব করেছেন যে এক ভগবানই সত্য, তাঁদের পক্ষে ভগবান ছাড়া সব ভুলে তাঁকে উপলব্ধি করার জন্য সব মন ও শক্তি দিয়ে উঠে-পড়ে লাগা উচিত। আধুনিক মন—সমাজ, দেশ ও মানবজাতির উপর ভগবানলাভের প্রভাব কতটুকু—যাচাই করতে চায়। প্রচলিত জড়বাদপ্রসূত এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতঃ ভুল। বরং এর বিপরীতটি হচ্ছে সত্য; আমরা বস্তুবিচার করব এইভাবে—ভগবানলাভের পথে সাহায্য করতে বস্তুটির সামর্থ্য কতটুকু?
বাহ্যিক ত্যাগের কি কোন প্রয়োজন আছে? মানসিক ত্যাগ কি পর্যাপ্ত নয়? আমাদের মতে শুধু অন্তরের ত্যাগই যথেষ্ট নয়। একটি কারণ অতি স্পষ্ট। আমাদের বাহ্যিক ব্যবহার হচ্ছে আমাদের চিন্তা ও উদ্দেশ্যের অভিব্যক্তি। আমরা যদি অন্তরে ত্যাগ করি, অকপট হলে এর বাহ্যিক অভিব্যক্তি ফুটে উঠবেই। যাঁর সংসার নেই, পরিবার-বোধ নেই, বাইরেও সেসব থাকতে পারে না। তিনি যেন একটি শুকনো পাতার মতো ভগবদিচ্ছার ঝড়ে উড়তে থাকেন। নির্দিষ্ট স্থান বা বিশেষ পাত্রের প্রতি নিরাসক্ত হয়ে তিনি ঘুড়ে বেড়ান। তাঁর গৃহ থাকতে পারে না। যদি ভিতরে-বাইরে, চিন্তায় ও ব্যবহারে পার্থক্য দেখা যায়, বুঝতে হবে তাঁর ভিতরে এমন গলদ আছে, যে কারণে মনে প্রাণে তরিপূর্ণ ত্যাগ আসেনি। কিন্তু এ হচ্ছে ত্যাগের আদর্শ। সংসারে এমন লোকও আছেন, যাঁরা মনের দিক দিয়ে যথেষ্ট নিরাসক্ত। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা এত কম, ব্যতিক্রম বলে তাঁদের গণ্য করা উচিত। জনক রাজা তো আর বহু নেই। তাঁকে আমাদের আদর্শ করা ঠিক নয়, কারণ এ আদর্শ অনুসরণ করে বস্তুলাভ করা খুবই কঠিন। আমরা সফলতার পরিবর্তে বিফল হব বেশি পরমাণে। যদি আমরা পারি তবে আমাদের স্বাভাবিক ও সহজ পথ অবলম্বন করা উচিত, অর্থাৎ ভিতরে এবং বাইরে দুদিকে ত্যাগ।