মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
নারীশিক্ষার ব্যবস্থা ইউরোপীয় মিশনারিরাও করেছেন, করেছেন ব্রাহ্ম চিন্তাবিদেরাও। তাঁর নারীশিক্ষার মূলসুরটি বাঁধা ছিল ভারতীয় সুকুমারী নারী-আদর্শের সঙ্গে ইউরোপীয় দৃঢ়তা ও দৃষ্টিভঙ্গির মেলবন্ধন। তাঁর শিক্ষা-উদ্যোগ কেবল কর্তব্যবোধের মধ্যে শেষ হবার নয়; অজ্ঞানের জন্য, নিরক্ষর মানুষজনের জন্য গভীর প্রেম ও অন্তরীণ ব্যাকুলতা ছিল তাঁর শিক্ষাদর্শনের মূলমন্ত্র। জ্ঞানদানের মধ্যেই কেবল শিক্ষাকে সীমিত না রেখে কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অন্তরমহলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই বাগবাজারের অখ্যাত এক গলির মধ্যেই তিনি নির্মাণ ক’রে ফেললেন এক অনন্য শিক্ষাতীর্থ। তাঁর ছাত্রীরা তাঁর কাছে হয়ে উঠল ‘My Child’। তাদের সঙ্গে পড়া পড়া খেলে, হিন্দু সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে বজায় রেখে চলল একদেশীয় ঢঙের হৃদয়ের উত্তাপ। বানালেন না তোতাপাখির খাঁচা, গাইলেন না দীর্ঘমেয়াদি বিরাট পরিকল্পনার বিলম্বিত-লয়ের শিক্ষা-গান। বরং সামর্থ্যের প্রয়াস ভারত-রূপ পাখির নারী-পক্ষকে অপরিসীম আনন্দে জুড়ে দিলেন।
ভারতবর্ষের দুঃখ-দারিদ্রকে উপেক্ষা করে, এদেশের গ্রীষ্মপ্রধান জল- বায়ুকে সহ্য ক’রে, ইউরোপের সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে হেলায় দূরে সরিয়ে রেখে তিনি ভারতবাসীর সেবা করেছেন। ১৮৯৯-এর কলকাতার প্লেগ রোগ নিবারণে তাঁর কাজ আজও মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। স্থানীয় স্বেচ্ছা- সেবকবৃন্দের কাজকে তিনি কেবল তদারকিই করেননি, নিজেই ঝাঁটা হাতে রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করতে নেমেছেন, মুমুর্ষু রোগীদের নিজ হাতে সেবা করেছেন। বানভাসি, মন্বন্তর-দীর্ণ বরিশালে ছুটে গেছেন সেবাসামগ্রী নিয়ে হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে, একাত্ম হতে ও পাশে দাঁড়াতে।
নিবেদিতা স্বদেশী আন্দোলনে কতটা যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তার বিবরণ দিয়েছেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘A Nation in making’ গ্রন্থে। শুধু যে আন্দোলনের জোয়ারে অবগাহন করেছিলেন তাই নয়, অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করতে স্বদেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্যও মানুষকে প্রভাবিত করেছিলেন। ‘প্রবাসী’ সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “প্রয়োজনবিশেষে বা স্থলবিশেষে বলপ্রয়োগ ও যুদ্ধ তিনি আবশ্যক মনে করতেন।” বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের মতে—‘তিনি বিপ্লবীদের উৎসাহ দিতেন, তাদের পড়ার জন্য নানান বই দিতেন এবং বিপ্লবীদের কাজে তাঁর অনুমোদন ছিল।’
স্বামী আত্মবোধানন্দের ‘ভারত-সাধিকা নিবেদিতা’ থেকে