মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মহাসাধক সত্যানন্দ নির্বিকল্পে লীন। নামে না মন। নামতে চায় না মন। তবে কি জগৎ-কল্যাণ লোকসংগ্রহ কিছুই হবে না এবার? টল্লো শক্তির আসন, টল্লো ব্রহ্মের আসন। ছুটে এলেন মা মহাসাধকের ধ্যানলোকে বিজুলীর বালা পরে। আর এলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ আলোময় রূপ নিয়ে। রূপের বন্যা এসে ভাসিয়ে দিল অরূপের জগৎ। বহুদিন তাঁর ধ্যানে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন গোপাল। তখন বাড়িতেই ছিলেন বিগ্রহরূপে। কখনও ঠাকুর ধ্যান থেকে উঠে চন্দন পরিয়ে দিতেন, কখনও বা কিছু ভোগ দিতেন। কিন্তু আমল দেননি বেশী। মন তখনও ব্রহ্মলীন। এলেন মা ভবতারিণী, এলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ, আর এলেন বৃন্দাবনের রাখালরাজা মোহনীয়া গোপাল। সেই অশব্দ অরূপ থেকে নেমে আসার পর লীলায় ধরে রাখলো তাঁকে ঐ মিষ্টি ছোট্ট আদরকাড়া ছেলে। সেই ভাঙ্গালো সমাধির নিথরতা। সাধক জাগায় বিগ্রহকে, আবার বিগ্রহ জাগায় সাধককে—
“সেদিন হ’তে দোঁহার মাঝে মিষ্টি বাঁধন
নিবিড় ক’রে জড়িয়ে যেন গেল কখন
দুটি প্রেমের একটি মালা
কার হিয়াকে করলো আলা
বুঝতে গিয়ে ভাবনা শুধু হয় নিরুপায়
কার সাথে কার ঠাকুরালীর লীলার সাধন।”
জটাধারীর ছোট্ট রামলীলা চলে এলেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। তারপর কত মিষ্টি খেলা, কত আবদার, কত বায়না, কত মান অভিমান আনন্দ বিরহের আনুভূতিতে ভরে উঠলো লীলার রাজ্য।
“কলৌ জাগর্ত্তি কালী, কলৌ জাগর্ত্তি গোপালঃ।” কলিকাল ভোগমুখী নিম্নমুখী। কালী আর গোপাল, দুটী জাগ্রত রূপ। মা আর শিশু। মাতৃভাব, সন্তানভাব—এই তো পথ! আধ্যাত্মিক জগতে এগোবার সহজতম নিরাপদ অবলম্বন। তাইতো যুগের দিশারীর জীবনে এ দু’টীর যুগপৎ প্রাধ্যান্য। ঠাকুরের কাছে যেমন এসে পড়লেন মা ভবতারিণী, তেমনি এলেন গোপাল। একদিকে তিনি নিজেই ছোট্ট শিশু, মা-মা বলে ডাকছেন ব্যাকুল হয়ে, মায়ের কোলে নিশ্চিন্ত আশ্রয় চেয়ে কাঁদছেন অঝোরে। আবার বাৎসল্যরসে ভরপুর হয়ে গোপালের সঙ্গে খেলছেন কত খেলা। খেলছেন গোপালকে নিজ সত্তায় সত্তান্বিত ক’রে। এ লীলা তাই মধুর এত জীবন্ত জাগ্রত প্রাণবন্ত।