মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
এই সব আশঙ্কা সত্ত্বেও এ কথাটা স্বীকার করতেই হবে যে, চিঠিপত্রে, ব্যক্তিবিশেষের ভাব-অনুভূতি, চিত্তের দোলাচলতা, সংশয় বা সংশয়কে অতিক্রম ক’রে এক সত্যে উপনীত হবার আনন্দ এ সবই প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি এমন একজন মানুষের কাছেই প্রকাশ করা সম্ভব, যার হৃদয়বেত্তার ওপর আছে আমার অপরিসীম আস্থা, যার সংবেদনশীলতার ওপর আছে আমার অপার বিশ্বাস। কাব্যে, প্রবন্ধে বা গদ্য রচনায় যে মনের ভাব প্রকাশিত হত তা বৃহত্তর পাঠক-সমাজের জন্য। কিন্তু বোধহয় সকলের চেয়ে নিবিড়ভাবে মনের কথা বলা যায় চিঠিতে, তার কারণ চিঠিতে একটি মাত্র মনের মানুষকেই বলা হয়, বাইরের পাঠক-সমাজ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এই কারণেই চিঠিতে আমরা কী প্রত্যাশা করি? লেখক এবং প্রাপকের যুগল উপস্থিতিই চিঠির প্রধানতম রস সৃষ্টি করে। যে শোনে এবং যে বলে এই দু’জনে মিললে তবে রচনা বা সাহিত্য হয়। সাহিত্য কথাটার মধ্যেই এই মিলনের অর্থ নিহিত। চিঠি যখন রচিত হয় তখন লেখকই এমমাত্র বক্তা নন, তখন সেই রচনা একরকম নাটকীয় একোক্তিতে পরিণত হয়। আর একোক্তির ধর্মই তো এই যে অন্তরালবর্তী অন্য একটি অস্তিতের প্রত্যুক্তি প্রদানের দ্বারা তা অনেক পরিমাণে চালিত। অর্থাৎ চিঠি দাঁড়িয়ে আছে সংলাপের কিনারায়। কুয়াশাচ্ছন্ন অন্য কূলায় সবসময়ে দেখা যাবে না ভেবেই বরং পত্রলেখক কখনও বিপন্ন বোধ করে।
এই অনুপস্থিত শ্রোতাটির সঙ্গে কীভাবে সংলাপ শুরু করা যায়, লেখিকার এই দ্বিধাই প্রকাশিত হয়েছে ৪ নভেম্বর, ১৮৯৯ মিস্ ম্যাকলাউডকে লেখা নিবেদিতার একটি পত্রে—‘তুমি হয়ত ভাবছ যে চিঠি লেখার ব্যাপারটা আমি অবহেলা করছি। তা কিন্তু নয়। অন্তরের কথা বলার চেয়ে বরং নীরব থাকাই ভালো এবং পুরোপুরি বলব ব’লে অপেক্ষা করছিলাম।’