মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মনুষ্যেতর প্রাণীজগতের হৃদয়বত্তার সম্পূর্ণ অভাব না হইলেও বিকাশ নাই বলিলে খুব একটা অযৌক্তিক কথা হইবে না। পরার্থে ত্যাগের ভাব পশুজগতের মধ্যে খুবই অল্প সচরাচর দৃষ্ট হয়, কিন্তু মনুষ্যজগতে হৃদয়বত্তার অভিব্যক্তি কিছু না কিছু আছেই। হৃদয়বত্তার অপর নাম নিঃস্বার্থ প্রেম। যেখানে নিঃস্বার্থ প্রেম সেখানে নিজের হিতের কোনও প্রশ্নই আসে না। একজনকে সেবা করিলাম যাহাতে সেও আমাকে সেবা করে—এই মনোভাবে কিন্তু দান-প্রতিদানের সম্পর্ক রহিয়াছে। তাই ইহা নিষ্কাম বা নিঃস্বার্থ হইতে পারে না। একজনকে টাকা-পয়সা দিয়া সাহায্য করিলাম বা খাওয়াইয়া সন্তুষ্ট করিলাম এই আশায় যে সে ব্যক্তিও ভবিষ্যতে আমাকে টাকা-পয়সা দিয়া সাহায্য করিবে অথবা খাওয়াইয়া আমাকে সন্তুষ্ট করিবে—এইরূপ যাহার লক্ষ্য সে মানুষটির প্রেমের উদয় হইয়াছে, এ কথা বলা বা বোঝা হাস্যকর হইয়া দাঁড়াইবে।
আমরা মানুষ, তাই আমাদের মধ্যে উভয় জাতীয় প্রবৃত্তিই আছে। যেমন সৎ প্রবৃত্তি এবং অসৎ প্রবৃত্তি। সৎ ও অসৎ প্রবৃত্তির বিশ্লেষণ করিতেও আমরা সমর্থ। পরের দুঃখে দুঃখী হওয়া, পরের সুখে সুখী হওয়া, পরোপকারের প্রবৃত্তি, পরের বিপদে ঝাঁপাইয়া পড়া, কোনও অন্যায় কার্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বা সেই কার্যের প্রতিরোধ করা, সৎকার্য সাধনে দৃঢ়চিত্ত হওয়া প্রভৃতি সৎবৃত্তির অন্তর্গত। আবার ইহার বিপরীত দিকটাই অসৎ প্রবৃত্তি নামে খ্যাত। আমাদের সকলের মধ্যেই পবিত্র ও অপবিত্র দুইই ভাব যুগপৎ বিদ্যপান। এমন নর, নারী তুমি পৃথিবীতে দেখাইতে পারিবে না যে চিরকালের মতন অপবিত্র হইয়া গিয়াছে। হয়তো অশুদ্ধ ভাবটি অত্যন্ত প্রকট বা বলবৎ হইয়াছে, কিন্তু ইহার মানে এই নয় যে শুদ্ধ ভাবটি সম্পূর্ণ তিরোহিত হইয়াছে। এই জন্যই গীতায় দেবাসুর সম্পদ যোগ অধ্যায়ে এই বিষয়ে ইঙ্গিত আছে। সত্ত্বঃ, রজঃ, তমঃ—এই তিন গুণই একটি সত্য বস্তুরই পারস্পরিক আবরণ তথা পরিণাম। সত্য যা তাহা কোনও আবরণই নয় বা পরিণামও নয়। প্রকাশেরই আবরণ বলা হয় কিন্তু প্রকাশস্বরূপকে আবরণ বলা সঙ্গত হয় না। অপরিণামের পরিণাম ভাবা যায় না। পরিণামটি কাহার, খুঁজিতে যাইলে আমাদের কার্য হইতে কারণে আসিতে হইবে।
স্বামী পবিত্রানন্দের ‘এক ও একতা’ থেকে