মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
শ্রীশ্রীমা তখন থাকতেন উত্তর কলকাতার বাগবাজারের বোসপাড়া লেনের ভাড়াবাড়ীতে। সেটা ১৯৯৮ খ্রীঃ ১৭ মার্চের ঘটনা। এই দিনই প্রথম নিবেদিতা যুগমাতা সারদাদেবীকে সন্দর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। সে এক বিরল বৈপ্লবিক মুহূর্ত। শ্রীশ্রীমাকে দেখামাত্র নিবেদিতার হৃদয় আনন্দে অভিভূত হয়ে গেল। প্রত্যক্ষ করলেন যেন জীবন্ত ভারতমাতার প্রতিমূর্তি। দেখে মনে হলো যে ভারতের ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা, পবিত্রতা ও সংস্কৃতি সব মিলিয়ে যেন রূপ পরিগ্রহ করেছে শ্রীশ্রীমা সারদার মধ্যে। তিনি মুগ্ধ হয়ে অপলক অনিমেষ নয়নে প্রাণভরে প্রত্যক্ষ করেছেন শ্রীশ্রীমাকে। কিন্তু তিনি প্রাণের আবেগ আকুতি কিছুই ভাষায় প্রকাশ ক’রে বোঝাতে পারছেন না শ্রীশ্রীমাকে। কারণ, তিনি শ্রীশ্রীমায়ের ভাষায় কথা বলতে জানেন না। শ্রীশ্রীমা নিবেদিতার ভাষায় কথা বলতে পারতেন না। কিন্তু তাই বলে তাঁদের মনের ভাব প্রকাশ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। দেখামাত্রই তাঁদের সকল প্রশ্নের অবসান ঘটেছে। চোখাচোখিতেই উভয়ে উভয়ের হৃদয় দেওয়া-নেওয়া করে ফেলেছেন, আর প্রশ্ন করবেন কী! তাঁদের একজনের আত্মার সঙ্গে অপরের আত্মার মিলন হয়ে গেছে। তাই বাধাস্বরূপ হয়ে ওঠেনি তাঁদের ভাষায় ব্যবধান। হার্দিক ভালবাসায়, আন্তরিকতায় ভাষা তাঁদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। সেজন্য ভাষাভাষীর ব্যবধান সেখানে গৌণ। যদিও এই প্রথম পরিচয় নির্বাক নিরুত্তর ছিল, তথাপি তা ছিল মৌনমুখর নৈঃশব্দের রূপ এবং তা যেন অবলার নীরব গোপন ভাষায় জীবন্ত ও মূর্ত হয়ে উঠেছিল। তাঁদের জীবনে এটি একটি উজ্জ্বলতম মুহূর্ত স্মরণীয় দিন। নিবেদিতার এই মহামিলনের দিনটিকে তাঁর ব্যক্তিগত ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন এইভাবে ‘Day of Days’—‘জীবনের সেরা দিন’।
শ্রীশ্রীমা নিবেদিতাকে কন্যারূপে গ্রহণ করে স্থান দিয়েছিলেন হৃদয়মন্দিরে। তাঁকে আদর করে ‘খুকি’ বলে ডাকতেন। নিবেদিতাও ছোট্ট বালকাটির মতো চুপটি ক’রে বসে মা’র সকল উপদেশ শুনতেন বিস্ময়ভরা নয়নে মনোযোগ সহকারে। আন্তরিক শ্রদ্ধায় ও ভালবাসায় এক অনির্বচনীয় ঐশ্বরিক আনন্দে ভরপুর হয়ে যেত তাঁদের উভয়ের হৃদয়। শ্রীশ্রীমায়ের স্নেহ, মমতা, করুণায় নিবেদিতা আপনার থেকে আপনার জন হয়ে উঠেছিলেন। নিবেদিতাকে কখনো শ্রীশ্রীমা বিদেশিনী মনে করতেন না; (অর্থাৎ শ্রীরামকৃষ্ণের) ভাব ও বার্তা ওদেশে প্রচারের জন্য ওদেশে জন্মগ্রহণ করেছিল।’