মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
প্রতিটি মানবের আপন প্রকৃতিগত সংস্কার বা স্বভাব বিদ্যমান। মানবের ঐ স্বভাবই হল মানবের বৈশিষ্ট্য। ঐ স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য মানবের পূর্ব হতেই সহজাতক্রমে তার প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। স্বভাব-নির্দিষ্ট কর্মের দ্বারা ঐ বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করে তার বিকাশ করাই হল সাধনা।
সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ—এই ত্রিগুণ মানব প্রকৃতিতে বিদ্যমান। আর গুণের তারতম্য অনুসারে মানব প্রকৃতিতে স্বভাবের বৈচিত্র্য বিদ্যমান। এই কারণে আপন আপন প্রকৃতিগত স্বভাব অনুযায়ী সংসারে অনেক প্রকার উপাসনাগত ভেদ দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং আচার-অনুষ্ঠানগত ভেদ, অধিকারী বিশেষে ভেদরূপে পরিলক্ষিত হয়। অতএব আমরা নিশ্চিত হলাম—সমস্ত উপাসনার উদ্দেশ্য বা পরম লক্ষ্য হল ঈশ্বর উপলব্ধি। যতক্ষণ পর্যন্ত আত্ম-অনুভব বোধ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত চিত্তশুদ্ধির হেতু মানবের কর্ম ও উপাসনা একান্ত প্রয়োজন বা আবশ্যক। এই উপাসনা আবার অধিকারী বিশেষ ধ্যান, জ্ঞান, প্রেম, কর্ম ইত্যাদি বৈচিত্র্যে পরিলক্ষিত হয়। যার সদ্গুরুর প্রতি অটুট শ্রদ্ধা এবং সাধনার প্রতি নিষ্ঠা আছে, তার অতি শীঘ্রই সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয়। ধৈর্য্যের সঙ্গে একাগ্রচিত্তে আপন সাধনা করতে হবে। তাহলে ভগবৎ কৃপায় অতি শীঘ্রই সিদ্ধিলাভ করা যায়। তাই সাধনায় প্রথমতঃ প্রয়োজন শ্রদ্ধা, দ্বিতীয়তঃ ধৈর্য্য এবং তৃতীয়তঃ অনুরাগ বা ব্যাকুলতা। এগুলি সাধকের জীবনে একান্ত প্রয়োজন। প্রতিটি জীবন সচ্চিদানন্দ পরমাত্মার প্রকাশ। প্রত্যেক জীবনে রয়েছে আধ্যাত্মিক রহস্য বা সেই তত্ত্ব। সুতরাং ঐ পরম সত্য প্রত্যেককেই অনুভব করতে হবে। পরমাত্মার প্রকাশের জন্য মানব জীবন লাভ হয়েছে। তাঁর প্রতি অনুরাগ আসবার জন্য দেহে প্রাণ এসেছে। তাঁকে মনন করবার জন্য মানসিক বল এবং তাঁকে চিন্তা করবার জন্য বুদ্ধি আর তাঁর উপলব্ধির জন্য এই আনন্দময় তনু বা দুর্লভ মানব জীবন লাভ হয়েছে।
সৎসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ না করলে বিবেক জাগ্রত হয় না আর বিবেক জাগ্রত না হলে বৈরাগ্য আসে না এবং বৈরাগ্য না এলে সত্যনিষ্ঠা ও সত্যলাভ হয় না। ভাব ও অভাবের অধিষ্ঠান হল মানবের স্বভাব। এই স্বভাবই হল—মানব জীবনের বৈশিষ্ট্য। অভাব হতে স্বভাবে এবং স্বভাব হতে মহাভাবে মানবকে উত্তরণ করাই হল উপাসনার লক্ষ্য।
স্বামী পরমানন্দের ‘সহজতা ও প্রেম’ থেকে