উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
আমরা জানি যে শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য, বৈষ্ণব প্রভৃতি অনেক সম্প্রদায় রয়েছে হিন্দুধর্মে। দ্বৈত, অদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত—কত মতবাদ; জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, যোগ—কত মার্গ! এগুলো ধর্মের সোপান। কাজেই কোন পথ অবলম্বন করা উচিত তা নির্ণয় করা একটু কঠিন বৈকি! কঠিন হলেও এর সমাধান আছে। বিশেষ বিবেচ্য যে, এর কোন একটিকে বাদ দিলে হিন্দুধর্মের সার্বিক রূপ পাওয়া যাবে না। আসলে এসব ভিন্ন মতবাদ সকলই সমসূত্রে গাঁথা। এ সূত্রটি হল বেদচতুষ্টয়। বেদ হিন্দুর মূল ধর্মগ্রন্থ সম্মন্ধে ধারণা করা সমীচীন। বেদ অর্থ জ্ঞান। খ্রিস্টের জন্মের বহু হাজার বছর পূর্ণ থেকে এ বেদের সৃষ্টি। এর দুটি বিভাগ আছে—কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। সংহিতা এবং ব্রাহ্মণ কাণ্ডে যাগযজ্ঞাদি ক্রিয়া এবং মন্ত্রাদি আছে। আরণ্যক নামে আরও একটি অংশ আছে যাতে কর্ম ও জ্ঞান উভয়েরই কথা আছে। বেদের অন্তভাগে রয়েছে বেদান্ত—যা সমগ্র বেদের সার, এটি জ্ঞানের বিষয়। জ্ঞানকাণ্ডের অপর নাম উপনিষদ্। গুরুর পাদপদ্মে উপবিষ্ট হয়ে এ বিদ্যা আহরণ করতে হয়। সমগ্র বেদের শীর্ষস্থানীয় এ বিদ্যাকে ব্রহ্মবিদ্যা বলা হয়। যে-সব মতবাদ বা ভাবাদর্শ বেদকে প্রমাণ বলে গ্রহণ করে না বা উপনিষদে সংগৃহীত বেদের সারতত্ত্বগুলিকে গ্রহণ করে না সেসব মতবাদকে হিন্দুধর্মের অঙ্গ বলা যায় না। উপনিষদে শ্রুতিকে বেদ বলা হয়। এটি কোন ব্যক্তিবিশেষের রচিত নয়। পরমার্থ তত্ত্ব ঋষিগণের উপলব্ধ এবং গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রুত বলে এর নাম শ্রুতি। যুগ যুগ ধরে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির দ্বারা এ জ্ঞান আহরণ করা হয়েছে।
সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণের এ অতীন্দ্রিয় জ্ঞান জড় বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা নিশ্চয়ভূত হয় না। দ্রষ্টার অনুভূতি অঙ্কশাস্ত্রের মত অভিন্ন না-ও হতে পারে। এতদ্সত্ত্বেও ঋষিগণের পুঞ্জিভূত অনুভূতির মধ্যে এক মৌলিক ভাবধারায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত। একারণে এঁদের তুরীয় দর্শনের সত্যতা প্রমাণিত। কাজেই বেদ স্বপ্রমাণ ও স্বপ্রকাশিত। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখার প্রবক্তাদের মধ্যে কিছু গৌণ অনুসিদ্ধান্ত ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে; কিন্তু মৌলিক তত্ত্বের মতভেদ নেই। এ পার্থক্যগুলো দেখে সাধারণ মানুষ বিচলিত হতে পারে। একটি প্রশ্ন থেকে যায়— আধ্যাত্মিক জীবনের উচ্চস্তরে আরোহণ না করে এসব সূক্ষ্ম তত্ত্বগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যার নিগূঢ়তা উপলব্ধি করা অসম্ভব নয় কি? এ বিসম্বাদ বিড়ম্বনা মাত্র। কাজেই এসব বিষয়ের ভ্রান্ত ধারণা বর্জনীয়। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের আচার-ব্যবহারে কিছু কুসংস্কারে রয়েছে। বহু বিজাতীয় মতবাদ এ-ধর্মকে গ্রাস করবার চেষ্টা করেছে। এসবকে উপেক্ষা করেও এই ঔপনিষদিক ধর্ম মাথা উঁচু করে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে আজও। এ অবিনাশী শক্তির মূলে রয়েছে এর সার্বভৌমত্ব।
হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব বেদান্তে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বেদান্তের সার। স্বামী বিবেকানন্দ গীতাকে বেদান্তের দৈবভাষ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ধর্মের মূল উৎসগুলিতে সাম্প্রদায়িক মতবাদের কোন স্থান নেই।