উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
সনাতন হিন্দুধর্মে ও শান্তির উপলব্ধি গভীরতর। বিশ্বের সকল ধর্মে ‘ধর্ম ও শান্তি’র কথা উক্ত। হিন্দুধর্মে ‘ধর্ম ও শান্তি’ বিষয়ে জ্ঞানের ব্যাপকতা রয়েছে। এ ধর্মের নামকরণে দু’এক কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়। সিন্ধু নদের অববাহিকায় বাসিন্দাদের সিন্ধু শব্দ উচ্চারণে অসমর্থ পার্শিয়ানরা হিন্দ বা হিন্দু বলে সম্বোধন করতো। সেই থেকে এরা হিন্দু নামে পরিচিত হল এবং ক্রমশ ধর্মের সাথে এ নামটি যুক্ত হয়ে গেল। আসলে এ ধর্ম বৈদিক ধর্ম। এ ধর্মের কোন প্রবর্তক নেই। যে ধর্মানুভূতি ঘটেছে বিভিন্ন যুগে মুনি-ঋষিদের ধ্যানে এবং শ্রুত হয়েছে শাশ্বত ঐশী বাণী, তা পরবর্তীতে শিষ্য-প্রশিষ্য পরম্পরায় কথিত হয়ে বিধৃত হয়েছে বেদ ও উপনিষ্দ গ্রন্থে। বেদ-উপনিষদ্ই হিন্দুর ধর্মগ্রন্থ। এ ধর্মগ্রন্থগুলির অধ্যয়ন সহজতর করার জন্য রচিত হয়েছে বহু সহায়ক গ্রন্থ—স্মৃতি, দর্শন, পুরাণ, তন্ত্রশাস্ত্র ইত্যাদি। এগুলি সবই বেদভিত্তিক। এ ধর্মের উৎপত্তি কোন ব্যাক্তি বিশেষের দ্বারা নয়। এ ধর্ম অপৌরুষেয়, মৌল ও শাশ্বত, যা ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান সিদ্ধ। এ ভাবটি সনাতন। এ ধর্মের অন্য নাম সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের মর্মবাণী লক্ষণীয়:
ওঁ অসতো মা সদ্গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়,
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়। আবিরাবীর্ম এধিঃ।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
—অর্থাৎ অসৎ হতে আমাকে সতে নিয়ে যাও; অন্ধকার থেকে আমাকে আলোকে নিয়ে যাও, মৃত্যু হতে আমাকে অমৃতলোকে নিয়ে যাও; হে স্বপ্রকাশ ব্রহ্ম, আমার নিকট প্রকাশিত হও। আমাদের আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক বিঘ্নের শান্তি হোক।
উপরিউক্ত প্রার্থনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, অসৎ থেকে সতে, অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরণের প্রবণতা। আর সেই জ্যোতির্ময় পুরুষের ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তৎ-স্বরূপে বিলীন হওয়ার পরিমাণই আনন্দ ও শান্তি। এ উচ্চতর ভাবটি সাধনার বৈচিত্র্যে হিন্দুসাধকেরা উপলব্ধি করেছেন যুগে যুগে। এ উপলব্ধিতে সৃষ্টি হয়েছে তার জ্ঞানের গরিমা, কর্মের নিষ্কামতা ও ভক্তির অনুরাগ। সাধক যে কোন একটি পর্যায়ের গভীরতায় নিবিষ্ট হয়ে পরম সত্যস্বরূপকে লাভ করেন। শাস্ত্র তাই বলছেন—‘সত্যং জ্ঞানম্ অনন্তং ব্রহ্ম’। সেই সত্য-জ্ঞান-অনন্ত ব্রহ্মের ধ্যানে মগ্ন হয়ে সে জানল—সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম; যা কিছু দৃশ্য-অদৃশ্য সবই ব্রহ্ম। এভাবে বিশ্বপ্রপঞ্চে মানবের জ্ঞান প্রসারিত হল। এই সৃষ্টির মধ্যে যিনি অদৃশ্য হয়ে নিহিত রয়েছেন তিনিই হলেন সকলের ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা। শ্রীভগবদ্গীতায় এ অর্থ নিহিত:
যচ্চাপি সর্বভূতানাং বীজং তদহমর্জুন।
ন তদন্তি বিনা যৎ স্যান্মায়া ভূতং চরাচরম্।।
অর্থাৎ, যা সর্বভূতে বীজস্বরূপ তাও আমি (ঈশ্বর)। স্থাবর বা জঙ্গম এমন কোন বস্তু নেই যা তাঁর সত্তা ছাড়া; সর্ব ভূতেই তিনি।
স্বামী অক্ষরানন্দের ‘মহাশক্তির বিচিত্র প্রকাশ’ থেকে