কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
কথায় বলে, অজুহাতের হাতই হল সবচেয়ে লম্বা। দাম বৃদ্ধির জন্য এই অজুহাতই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বৃষ্টি কম হলে অনাবৃষ্টির অজুহাত। আর বৃষ্টি হলে অতিবৃষ্টির সাফাই। তারই মাঝে আইলা, লায়লা বা বুলবুল উপস্থিতি জাহির করলে তো কথাই নেই। দাম বাড়ছে কেন, জানতে চাইলেই বিক্রিতার আঙুল ওঠে তাদের দিকে। মানুষের এসব গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আর না সয়েই বা উপায় কী? যাদের হাতে অজুহাতের হাত খর্ব করার ক্ষমতা আছে, তাদের এসব দেখার সময় কোথায়? এসব তো মামুলি ব্যাপার। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী প্রকৃতি। বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির জন্য ফসল নষ্ট হলে দাম বাড়বে। বাড়বে কালোবাজারি। জ্বলবে মানুষ। আর বেশি ফলন হলে তা বিকোবে জলের দরে। তখন মরবে চাষি। এসবের প্রভাব খুবই সাময়িক। আসবে, আবার চলেও যাবে। তাঁদের বিচারে, আসল সমস্যা হল এনআরসি। এই এনআরসি লাগু করতে পারলে বা আটকে দিতে পারলেই হবে সব সমস্যার সমাধান। তাই পেঁয়াজ ১৪০ টাকা হলেও কিছু করার নেই, আবার আলুর দাম ২৪ টাকা কেজি হলেও নয়।
এই যেমন পেঁয়াজের কথাই ধরা যাক। অতিবৃষ্টির কারণে বর্ষার পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই নাকি হু হু করে বাড়ছে দাম। কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টনমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান জানিয়ে দিয়েছেন, উৎপাদন ২৬ শতাংশ কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আর সেই কারণে তাঁর নাকি কিছুই করার নেই।
প্রশ্নটা হল, বর্ষার পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার পরেও রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হল কেন? সরকারের কাছে কি পেঁয়াজের উৎপাদন মার খাওয়ার কোনও খবরই ছিল না, নাকি জেনেও চুপ করেছিল? কখন রপ্তানি বন্ধ হল? যখন বাজারে গিয়ে পেঁয়াজের ‘দাদাগিরি’তে মানুষ চটতে শুরু করল। এখন আবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। তুরস্ক, হল্যান্ড থেকে ‘সাবেহ পেঁয়াজ’ এলে নাকি দাম কমবে। ততদিন মুখ বুজে চাষির ঘরের ৮ টাকা কেজির পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় কেনো আর খাও। তবে, এত আকাল সত্ত্বেও ১৪০ টাকা ফেললে টন টন পেঁয়াজও বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। এসব দেখে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারে, আকালটা কি তাহলে কৃত্রিম? এখানেও পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোনও বিশেষ লবি কাজ করছে না তো?
পেঁয়াজের কেজি ১৪০ হোক বা ১৫০ টাকাই হোক, তার সুফল চাষিরা পাচ্ছেন না। খেটে মরছে চাষি। অতি ফলনে লোকসানের বোঝা তাদেরই বইতে হয়। আর ক্ষীর খায় ব্যবসায়ী ও ফড়ের দল। এটাই সর্বত্র যুগে যুগে হয়ে আসছে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার লঙ্কার বেশ সুনাম আছে। প্রায় গোটা রাজ্যেই যায়। সেই লঙ্কা চাষিরা প্রতি কেজি বিক্রি করে পাচ্ছেন ১০ থেকে ২০ টাকা। আর কলকাতা ও শহরতলিতে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কোথাও কোথাও তারও বেশি। একই ঘটনা ঘটে অন্য সব্জির ক্ষেত্রেও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফড়েরাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। মূল উদ্দেশ্য, মধ্যসত্ত্বভোগীদের মুনাফায় রাশ টানা। কিন্তু সেই কমিটি ‘ডুমুরের ফুল’ হয়ে যায়। বাজারে কমিটিকে দেখা যায় তখনই যখন মুখ্যমন্ত্রী ধমকটমক দেন। টাস্ক ফোর্সের কার্যকারিতার জন্য দরকার ধারাবাহিক নজরদারি। তা না হলে বদ্ধ জলাশয় শ্যাওলার জন্ম দেয় প্রবাদটি মানুষ আরও বেশি করে উপলব্ধি করবে।