কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
প্রধান চরিত্রটি ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে পারেন, অজানাগুলির জন্য। দায়ী দু’রকম অজানা—যেটা আমরা জানি যে আমাদের জানা নেই (ইংরেজিতে যাকে বলে known unknowns) এবং যেটা আগাম অনুমান করা সম্ভব নয় এমন সমস্ত অজানাগুলি (ইংরেজিতে যাকে বলে unknown unknowns)। অনেক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রধান চরিত্ররা অজানা বিষয়গুলি (unknowns) সামলানোর ব্যাপারেও ওস্তাদ হয়ে উঠতে পারেন।
প্রধান চরিত্রটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন এবং রাজ্যবাসীর মন জয় করার মতো সুশাসনও দিতে পারেন। তিনি যতদিন সবরকমে জ্ঞাত জিনিসটি, মানে টাকাকড়ির দিকটি সামলে দিতে পারবেন, ততদিন বাকি সমস্ত জানা এবং অজানা দিকগুলিও ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাবে। সমস্যা শুধুমাত্র তখনই হয় যখন প্রধান চরিত্রকে জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত ক্ষেত্রের বাইরে বেরিয়ে কিছু সামলাতে হয়। এই সমস্যাটিকেই মার্কেট বা বাজার বলে। বাজারটি যখন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য অসংখ্য ব্যক্তি-মানুষের, যেখানে ভয়-ভীতি ও অনিশ্চয়তার পরিবেশে এমন ব্যক্তিদের নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং তারা নানা উদ্দেশ্যে চালিত হয়, তখন বাজার আর, একটি সামান্য সমস্যা থাকে না, বাজার হয়ে ওঠে এক মস্ত ঝঞ্ঝাট (big trouble)।
বাজার এমন একটি বিষয়, যত সতর্ক পদক্ষেপই করা হোক না কেন সেখানে কিছু গড়বড় ঘটে যেতেই পারে। ব্যাপারটি বাজারের আকার আয়তনের উপরেও নির্ভর করে। একটি ব্যালান্সড বা স্বাভাবিক বাজেট নিয়ে পরীক্ষার ফলের সঙ্গে একটি সরকারের বাজেটের কোনও তুলনা হবে না, কারণ সরকারকে বাজেট তৈরি করার সময় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা মাথায় রাখতে হয়। আবার একটি রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি দেশ পরিচালনার মতো বিপুল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার প্রয়োজন হয় না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ছিলেন ১২ বছর। তাঁর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ। তাঁরা ভাবলেন, একত্রে তাঁরা পারবেন না কেন? —তাঁরা ভারতের অর্থনীতি সালটে দেওয়ার উপযুক্ত অর্থনীতিবিদ।
হায়, তাঁরা এমন একটি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন যে ভারতের পড়ন্ত এবং বিধ্বস্তপ্রায় অর্থনীতির নেতৃত্বে তাঁরাই। বিগত ছয়টি কোয়ার্টার বা ত্রৈমাসিকের সরকারি তথ্য হাতে নিয়ে বলতে পারি যে, ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হারটি (শতাংশ)) যথাক্রমে ছিল এইরকম: ৮.০, ৭.০, ৬.৬, ৫.৮, ৫.০ ও ৪.৫। সমস্ত সূত্রে জানতে পারছি যে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী দু’জনেই উদ্বিগ্ন, কিন্তু তাঁরা মচকাবেন না—অন্তত এখনও পর্যন্ত সেটাই তো দেখছি। প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কাজের মধ্যে আপাত একটি বিভাজন রয়েছে: সিদ্ধান্তগুলি নেয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) এবং অর্থমন্ত্রকের মাধ্যমে সেগুলি রূপায়িত হয়। কিন্তু তাদের ভিতর একটি পারস্পরিক অবিশ্বাস কাজ করে এবং এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অফিসের বিশেষ কিছু কর্মীর মধ্যে দোষারোপের পালা (ব্লেম গেম) চলে।
এখন এই কাহিনীর প্রধান দুই চরিত্র নিরীহ পেঁয়াজের দাম বাগে আনতে নাকানি-চোবানি খাচ্ছেন। বলা বাহুল্য, পেঁয়াজ এমন একটি জিনিস যেটি গরিব এবং মধ্যবিত্তের রোজকার পাতে অপরিহার্য। পেঁয়াজের বিকল্পও কিছু হয় না।
পাশাপাশি, ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশনের (এনএসএসও) মতে, পরিবারগুলি যত কেনাকাটা বা উপভোগ করত সেটি কমে গিয়েছে। গ্রামীণ ভারতে শ্রমিকরা যে-হারে মজুরি পেতেন কমে গিয়েছে সেটিও। বিভিন্ন ক্ষেত্রের উৎপাদকরা তাঁদের পণ্যের যে-দাম পেতেন, বিশেষত কৃষকরা, সেটিও হ্রাস পেয়েছে। দিনমজুররা মাসে ১৫ দিনের বেশি কাজ পাচ্ছেন না। ফলে, একশো দিনের (এমজিএনআরইজিএ) কাজের চাহিদা বাড়ছে। দীর্ঘকাল ব্যবহার্য এবং স্বল্পকাল ব্যবহার্য—দু’ধরনেরই ভোগ্যপণ্য এখন কম দামে বিকোচ্ছে। পাইকারি দামের স্ফীতি (হোলসেল প্রাইস ইনফ্লেশন) ঘটেছে ১.৯২ শতাংশ পর্যন্ত এবং উপভোক্তার দামের স্ফীতি (কনজ্যুমার প্রাইস ইনফ্লেশন) ৪.৬২ শতাংশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর প্রায় ৪৯ শতাংশ। এর অর্থ হল, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকও কাজে লাগানো হচ্ছে না। শাট ডাউন করে রাখা হয়েছে। আর তার কারণ, বিদ্যুতের চাহিদার অভাব।
সরকার ভাবে যে আসন্ন বিপর্যয়টি সে ইচ্ছে করবে আর গায়েব হয়ে যাবে। এই সরকারের সমস্যাটি হল, অতীতে গৃহীত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তগুলিকে [যেমন ডিমনিটাইজেশন, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি, ট্যাক্স টেররিজম, ব্যাঙ্কিংক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের নামে বাড়াবাড়ি (রেগুলেটরি ওভারকিল), দেশীয় শিল্পক্ষেত্রের জন্য সংরক্ষণ নীতি (প্রটেকশনিজম), পিএমওটিকে সমস্ত সিদ্ধান্তগ্রহণের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলা প্রভৃতি] আড়াল করতে একগুঁয়ে এবং খচ্চর গোছের ‘ডিফেন্স’ খাড়া করে।
২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর তারিখের বিমুদ্রাকরণকে ধন্যবাদ দেব, এই কারণে যে, এটি মানুষের তৈরি করা একটি বিপর্যয়কে প্রকট করেছিল। হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সরকার পরিণাম গণনা করে নিতে
একটু থামেওনি। ‘দি ইকনোমিস্ট’ সরকারকে অর্থনীতির অযোগ্য মাতব্বর (ইনকমপিটেন্ট ম্যানেজার) বলেছে।
আর কিছু করার নেই, মন্ত্রীরা ফের ধাপ্পাবাজির লাইনেই (ব্লাফ অ্যান্ড ব্লাস্টার) ফিরেছেন।
অর্থনীতি মন্থর গতিতে চলছে (স্লো ডাউন) বলে সরকার কবুল করেছে, কিন্তু কাঠামোগত (স্ট্রাকচারাল) কোনও সমস্যার কথা, যার সমাধানে মনোযোগ দরকার, এমনটা তারা মানতে চায়নি। সমস্যাগুলিকে সরকার আবর্তনকালীন বা ‘সাইক্লিকাল’ বলে বর্ণনা করেছে। ভাগ্যিস, কারণগুলিকে তারা ঋতুকালীন (সিজনাল) বলে শনাক্ত করে দেয়নি!
ভারতের অর্থনীতি চলছে যোগ্য অর্থনীতিবিদদের সাহায্য এবং পরামর্শ ছাড়াই। শেষ একজনই ছিলেন ড. অরবিন্দ সুব্রামনিয়ন। কল্পনা করুন সেইরকম একটি পরিস্থিতির কথা, যখন কোনও প্রফেসর ছাড়াই ডক্টরাল প্রোগামে শিক্ষাদান চালু রয়েছে কিংবা কোনও জায়গায় একটি জটিল সার্জারি করা হচ্ছে ডাক্তারকে বাদ দিয়ে! প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদদের তোয়াক্কা না-করে—এবং অযোগ্য ম্যানেজারদের দিয়ে একটি অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া—এই দুটির ভিতর কোনও প্রভেদ নেই।