মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
কিন্তু, এই হাসির আয়ুষ্কাল যে বাহাত্তর ঘণ্টারও কম হবে তা বোধহয় আঁচ করতে পারেননি ফড়নবিশ এবং তাঁর পরামর্শদাতারা। কিন্তু, এটা তাঁদের সকলেরই আঁচ করা উচিত ছিল। রাজধর্মে ভ্রাতৃধর্ম বন্ধু নাই—এই আপ্তবাক্য শিরোধার্য করেও বলতে হয়, রাজধর্ম বাস্তবজ্ঞানরহিত হতেও শেখায় না। মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার সরকার গড়ার পক্ষেই রাজ্যবাসী স্পষ্ট রায় দিয়েছিল। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে দুই শরিকের খেয়োখেয়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে ভোটের ফল প্রকাশের পর কয়েক সপ্তাহেও তারা সরকার গড়তে ব্যর্থ হল। মানুষের ইচ্ছের মূল্য দিতে পারল না জোটসঙ্গীরা। বিকল্প সরকার তৈরির জন্য শিবসেনা এবং বিজেপি দু’দলই নতুন জোটসঙ্গী জোগাড় করতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খেল। অগত্যা রাষ্ট্রপতির শাসনই জারি হল। এই পরিস্থিতিতে আশার কথা শোনা গেল ২২ নভেম্বর। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসের দিকে ঢলেছে শিবসেনা। পাশে পাচ্ছে শারদ পাওয়ারের এনসিপি-কে। দুনিয়া জেনে গেল, উদ্ধবই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। সবাই যখন নিশ্চিন্তে ঘুমুতে গেল, তখনও জানা যায়নি সেই শুক্রবার রাতে কয়েকজন রাজনীতির কারবারি মোটেও ঘুমোননি; তাঁরা ব্যস্ত পর্দার আড়ালে নতুন খেলায়। পর্দা ফাঁস হল শনিবার সাত সকালে। কী ব্যাপার? বিজেপি সার্জিকাল স্ট্রাইক ঘটিয়েছে, তবে পাকিস্তানের মাটিতে নয়, এবার মহারাষ্ট্রে! আচমকা তুলে নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির শাসন। ফড়নবিশ এবং অজিত পাওয়ারকে সাত সকালে রাজভবনে ডেকে শপথ পাঠ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল কোশিয়ারি! চোখ কচলাতে কচলাতে দেশবাসী নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। কারণ, যে-ব্যক্তির ভরসায় ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে তিনি শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত। শারদ তাঁকে এগিয়ে দিয়েছেন এমন খবর নেই। খবর নেই শারদ দুর্বল হয়ে গিয়েছেন বলেও। তবে? অজিতকে ভরসা কী কারণে? শাস্ত্রে একেই বোধহয় বিপরীত-বুদ্ধি বলেছে! বিপদকালে ধুরন্ধর ব্যক্তিদেরও এমন বিপরীত-বুদ্ধি পেয়ে বসে। নিয়তি কারও সর্বনাশের রাস্তা পরিষ্কার করার আগে নাকি তাকে ভরপুর বিপরীত-বুদ্ধি দান করে। বিজেপি নেতৃত্বের কি সেটাই হল না? এই খেলা ফড়নবিশের একার ভাবার কোনও কারণ নেই। এর পিছনে অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদিরও যে ইন্ধন সমর্থন ছিল, তা কোনও কষ্টকল্পনা নয়। তা না-হলে এমন কদর্যভাবে গদিলাভের পর ফড়নবিশকে শুভেচ্ছা জানাতেন না স্বয়ং মোদিজি। আহ্লাদে আটখানা হওয়ার আগে ভেবে দেখতে হতো—রাজনৈতিক সংস্কৃতি গোল্লায় গেলেও দেশের সংবিধান এবং বিচারব্যবস্থা এখনও ঋজুশির। ধোঁকা যাদের দেওয়া হল, তারা রাত পোহালেই সংবিধানের কাছে, আদালতের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করবেই। অসার আস্ফালন সেখানে কোনোভাবেই মান্যতা পাবে না।
হলও তাই। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার বলে দিল, বুধবার বিধানসভায় ফড়নবিশকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। অমনি সুড়সুড় করে পদত্যাগ করলেন অজিত, যাঁকে কাণ্ডারী ভেবে তরি ভাসিয়েছিলেন ফড়নবিশ। কাণ্ডারী পালিয়ে গেলে অন্য সওয়ারের যা করার থাকে ফড়নবিশ সেটা করতে অবশ্য কাল হরণ করলেন না। তিনিও অজিতের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন। বিজেপি এমনটাই বেইজ্জত হয়েছিল কর্ণাটকে। মাত্র দেড় বছরেই বিস্মৃত হল সেটা! এই বেইজ্জতি শুধু ফড়নবিশের নয়, অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদিরও, গোটা বিজেপি পার্টির। একাধিক নোংরা খেলায় প্রমাণ হয়ে গেল বিজেপি কোনও ভিনগ্রহের দল নয়, নিছকই পঙ্ক্তিভোজনে বসার উপযুক্ত। ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে বিজেপির জন্য এ এক অত্যন্ত খারাপ বিজ্ঞাপন হল। বেড়ে খেলার আগে পরিণাম সম্পর্কে সচেতন না-হলে আরও মুখ পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বিজেপিকে। ২০২১-এ বাংলার মাটিতে তাদের লড়াইটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে—এটা তাদের মনে আছে কি?