মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বিজেপি কী করতে পারে, তাও মহারাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। বিরোধী দল ও তাদের দলীয় নেতাদের দুর্নীতির তদন্তের ‘জুজু’র ভয় দেখিয়ে কুক্ষিগত করার চেষ্টাও ভালো চোখে দেখেনি মানুষ। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভরাডুবির পর জনতা দল যেভাবে ঢেউয়ের মতো জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তারপরে ‘প্রিয়দর্শিনী’কে দেশের সামনে কালিমালিপ্ত করার যে প্রয়াস তারা নিয়েছিল, তা মানুষ মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। আর সেটাই ইন্দিরাজির প্রত্যাবর্তনের পাথেয় হয়েছিল। ঠিক তেমনই এই রাজ্যে ক্ষমতার সিংহাসনে বসে থাকা সিপিএমেরও উত্তুঙ্গ অহংকার ও দর্পই চূর্ণ করে দিয়েছিল জনতা। একই ঘটনা ঘটেছিল তারও আগে সোভিয়েত রাশিয়ায়। ফলে, গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করলে ফল কী হবে তার পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা না করে শাসনের ছড়ি ঘোরালে এরকমটাই অনিবার্য। উপনির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী যা বলেছেন তা যর্থাথই। শুধুমাত্র বিরোধিতা করার জন্য যে তাঁর এই প্রতিক্রিয়া তা নয়, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সমস্ত নাগরিকের মনের ভাষা ফুটে উঠেছে মমতার মুখে।
মমতার বক্তব্যের সারমর্ম হল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) নামে দেশের মানুষকে বিদেশি তকমা দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধেই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জনতা রায় দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উপনির্বাচনে এনআরসির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন বাংলার মানুষ। অহংকারের ফল পেয়েছে বিজেপি। বাংলায় ঔদ্ধত্য চলে না। মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মানুষের এই রায়কে মাথা পেতে নিয়েছি আমরা। আরও দায়িত্ব বাড়ল, আরও কাজ করতে হবে মানুষের জন্য। নম্র হয়ে মানুষের পাশে থাকতে হবে। এরই সঙ্গে মমতার স্পষ্ট বার্তা—যত বড় নেতাই বলুক না কেন, বাংলায় এনআরসি হচ্ছে না, হবে না। প্রতিপক্ষ গেরুয়া শিবিরের নেতাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ—সংবিধান আর দেশকে নষ্ট করবেন না। তিনি এ পর্যন্ত বলেছেন, গঠনমূলক কাজে সবসময় আমাদের সাহায্য পাবেন।
মমতার মতে, মানুষ প্রমাণ করেছেন, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা আর সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে উঠে জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদ কীভাবে করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতা এদিন লিখেছেন, এই বিপুল জনসমর্থনের কারণ সুশাসন এবং আমাদের জনসংযোগ। মানবিক মুখ নিয়ে জনস্বার্থে কাজ করে যাওয়াটাই আমাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য। উল্টোদিকে যারা মানুষের বিরুদ্ধে, যারা দাম্ভিক, যারা বিভাজন ঘটাতে চায় এবং যারা উন্নয়নের বিরুদ্ধে, মানুষ তাদের সমূলে উৎপাটন করেছে।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বিরোধীদের ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছিল, তারপর থেকে তাদের মধ্যে অদম্য এক উদ্ধত মনোভাবের জন্ম হয়। বিশেষত এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ১৮টি আসন দখল করার পর ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে দেন রাজ্য বিজেপি অনেক নেতা। এনআরসি নিয়ে পথেঘাটে সাধারণ মানুষকে চমকানো থেকে আচার-ব্যবহারে ক্ষমতাসীন দলের অহংকার ফুটে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে। জোর করে পার্টি অফিস দখল, কিংবা বিরোধী দল ভাঙিয়ে আনার নেশায় পেয়ে বসেছিল তাদের। যার ফলও হল উল্টো। যে উচ্ছিষ্টভোগী তৃণমূল নেতাদের তারা দলে নিল, তাদের প্রতি জনমানসে যে বিরূপ মনোভাব রয়েছে, তা প্রকাশ পেল। কেউ ভালোভাবে নিল না এই আগুন নিয়ে খেলাকে। যার ফলস্বরূপ আজ সেই আগুনেই হাত-মুখ দুই-ই পোড়াতে হল বিজেপিকে।