মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
স্বভাবতই ভারতীয় রেল সবসময়ের জন্য স্পেশাল অ্যাটেনশন দাবি করে। এ কোনও বিলাসিতার কথা নয়। রেলব্যবস্থাকে সচল রাখা এবং ক্রমশ উন্নত করা প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থে। রেলব্যবস্থা ভালো থাকলে আমরা, মানে সারা দেশের মানুষ ভালো থাকি। আমরা ভালো থাকি সবদিক থেকে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারি। ছুটির পর যে যার বাড়িতে বা গন্তব্যস্থলে ফিরতে পারি। ছুটিতে বেড়াতে যেতে পারি। রেল ব্যবস্থা আছে বলেই আমাদের চাল গম ডাল তেল নুন চিনি সব্জি মাছ মাংস ডিম দুগ্ধজাত দ্রব্য ওষুধ গৃহনির্মাণের সামগ্রী প্রভৃতি অনেক কম খরচে আমাদের নাগালে পৌঁছে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য নিয়ে আমরা ব্যতিব্যস্ত। সস্তার রেল পরিবহণ না-থাকলে জিনিসের দাম আরও কোন মটকায় যে চড়ে বসত কল্পনা করতেও মাথা ব্যথা করে! রেল না-থাকলে পর্যটন শিল্পটাই ধসে যেত, রাজ্যে রাজ্যে আমাদের মধ্যে যে ঐক্যের ভাব, হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও যে অকৃত্রিম আত্মীয়তার বন্ধন আমরা নিয়ত অনুভব করি, সেসব উবে যেত। সোজা কথায়, ভারত রাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময় সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি বহুলাংশে মাথা তুলে রয়েছে রেলব্যবস্থাকে ধরেই।
এহেন রেলব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে, তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একদিকে প্রয়োজন রেলব্যবস্থাকে সবরকমে দুর্নীতিমুক্ত রাখা। অন্যদিকে, দরকার প্রতিটি যাত্রীর জন্য নিরাপদে রেলভ্রমণের নিশ্চয়তা। পানীয় জল থেকে খাদ্য, শৌচালয়, বিশ্রামাগার প্রভৃতি সবকিছুই স্বাস্থ্যসম্মত রাখা কর্তব্য। আর এসব নিশ্চিত তখনই করা সম্ভব যখন নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে—যে-ট্র্যাকের উপর দিয়ে ট্রেনগুলি দুরন্তগতিতে ছুটছে সেগুলি একেবারে মজবুত ভিতের উপর বসানো, কোথাও মাটি দুর্বল নেই, ব্রিজগুলিও সুরক্ষিত। লেভেল ক্রসিং, স্টেশন ও ওভারব্রিজগুলিও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দাবি করে। আটকাতে হয় নাশকতা, এমনকী কর্তৃপক্ষের তরফে আপাত নিরীহ অবহেলা অথবা ভয়ঙ্কর বোকামির দিকগুলিও। প্রতি বছর সংঘটিত একাধিক রেল দুর্ঘটনা, এবং তাতে বহু মানুষের অকাল মৃত্যুর পরেও রেলকর্তাদের টনক নড়ে বলে মনে হয় না। ভারতে রেলপরিবহণের ইতিহাস দেড়শো বছরের প্রাচীন। স্বভাবতই শতাধিক বছরের পুরনো ব্রিজের সংখ্যা অনেক। দুর্ভাগ্যের কথা এই যে, সেদিকেও যথাযথ নজর দেওয়া হয় না। এই বিষয়ক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশও সরকার কার্যকর করেনি। রেলওয়ে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি মঙ্গলবার যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতেই এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। রেলের উচিত, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এবং দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো দ্রুত পদক্ষেপ করা। দেশের মানুষ আর দুর্ঘটনা চায় না। দুর্ঘটনা এখানে যেন ক্লান্তিহীন। রেলভ্রমণ যাতে আতঙ্কের অপর নাম না-হয়ে ওঠে, সেই দায়িত্ব ভারতীয় রেলকেই নিতে হবে, এবং অবিলম্বে। দেশবাসী সেদিকেই তাকিয়ে আছে সর্বক্ষণ।