মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
রাজ্যের সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান কালে কালে উদ্যোগপতিদের টেনেছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। শ্রমিক, পরিবহণ, কাঁচামাল সব দিক দিয়েই বিনিয়োগের জন্য বাংলা উপযুক্ত জায়গা। বিদেশি প্রতিনিধিদের এহেন মানসিকতা এবং বিনিয়োগের আগ্রহ দেখে রাজ্য সরকার অত্যন্ত খুশি। সিঙ্গুর পর্বের জেরে লগ্নি প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে দেশ-বিদেশে যে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ, তা ভিত্তিহীন বলেই প্রমাণ হয়েছে অমিত-বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে। শুধু তাই নয়, আগামী ১১-১২ ডিসেম্বর দীঘায় যে ‘বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ’ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, সেখানে হাজির থাকার জন্য বিদেশি প্রতিনিধিরা নিজেরাই আবেদন করেছেন। এমনকী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কলকাতায় বিজনেস কাউন্সিল খুলতে চায় বলেও বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। দেওচা পাচামির মতো রাজ্যের কয়লা ব্লক প্রকল্পের কাজে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিকের মতো দেশ। পশ্চিমবঙ্গের হস্তশিল্প বিক্রি তথা বিপণনের ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স। বাংলায় বিনিয়োগের জন্য বণিকসভা ফিকির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওয়াই কে মোদি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের।
মূলত বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের প্রাক্কালে প্রস্তুতি বৈঠকেরই আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং ফিকি। সেখানে বেঙ্গল মানে বিজনেস, এই স্লোগানে জোর দিয়েছেন অমিত মিত্র। সংবাদে প্রকাশ, ওই বৈঠকেই বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়াতে ওয়াই কে মোদি বলেন, ই-সার্ভিস থেকে লগ্নির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে যে সিঙ্গল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। বিনিয়োগের প্রশ্নে তাঁদের মতামত জানতে চাইলে বিদেশি প্রতিনিধিদের বেশিরভাগই ‘গ্রেট ইনিশিয়েটিভ’ বলে মন্তব্য করেন। ইতালির ইকোনমিক অ্যান্ড ইনোভেশন ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট সেক্রেটারি ফ্রান্সেসকা ডাটোলা, ফ্রান্সের রিজিওনাল ফিনান্সিয়াল কাউন্সিলর প্যাট্রিক পিলনের মতো প্রতিনিধিরা বলেছেন, আমরা খুবই আগ্রহী। সেই কারণেই আলোচনায় যোগ দিয়েছি। রাজ্যের অবস্থান, আন্তরিকতা আমাদের নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী করে তুলেছে।
শুধু ভিনদেশি দূতরাই নন, গঙ্গা তীরবর্তী এই কলকাতা ও নদনদী বেষ্টিত পশ্চিমবঙ্গ যে বাণিজ্যের উৎকৃষ্ট পরিবেশ, সেটা ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ বণিকরাও বুঝেছিল। সে কারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকেই কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল ডালপালা বিস্তার করে। কলকাতা থেকে রাজধানী সরে যাওয়ার পর থেকেও একেবারে বিধানচন্দ্র রায়ের আমল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ, ভারী, মাঝারি ও ছোট শিল্পের জমি উর্বর ছিল এই রাজ্যের মাটিতে। সেই মজবুত ভিতকেই একেবারে মরুভূমি করে ছেড়েছে সিপিএম ও তার লেজুড় শরিক দলগুলি। তাদের সরকারের একেবারে শেষ দশায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কোরামিনের মতো শিল্পের বীজ পোঁতার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে বহু দেরি হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে শিল্পস্থাপনের স্বপ্নটি অধরা থেকে যায়। এখন আবার নবতর স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণে প্রয়াসী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আমরাও আশাবাদী যে, এই বাংলা আবার একবার হয়ে উঠবে সফল বাণিজ্যকেন্দ্র। হবে চাকরি, কর্মসংস্থান। সেই রঙিন ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে এখন গোটা রাজ্য।