উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
১৫ জুন রামকেলি মেলার উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাধিপতি, জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আমলাদের সঙ্গেই হাজির ছিলেন ওই দুই নেতা। ঐতিহ্যমণ্ডিত এই রামকেলি উৎসবে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নিয়েছেন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের লাখো মানুষ। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব ৫০৫ মতান্তরে ৫০৮ বছর আগে পদার্পণ করেছিলেন রামকেলিতে। তাঁর নাম সংকীর্তনে মাতোয়ারা হয়েছিলেন গৌড়ভূমের আপামর নাগরিকরা। তাঁর কাছে মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে আধাত্ম্য পথে অগ্রসর হয়েছিলেন গৌড়ের তৎকালীন নবাব হুসেন শাহের দুই প্রধান অমাত্য রূপ ও সনাতন গোস্বামী। তখন থেকেই রামকেলি পরিচিত হয়ে উঠে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ হিসাবে। এখানেই মেয়েদের পিণ্ডদানের অধিকারও রয়েছে বৈষ্ণব মতে। প্রতি বছর জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে বসে এই মেলা।
এই মেলার জাঁকজমক পূর্ণ উদ্বোধনের দিনেও কিন্তু অনেকেরই নজর এড়ায়নি নীহার-কৃষ্ণেন্দুর ঠাণ্ডা সংঘাত। ২০১৪ সালে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য থাকাকালীন রামকেলিতে মহাপ্রভুর চরণচিহ্ন সম্বলিত মন্দিরের প্রায় দোরগোড়ায় শ্রীচৈতন্যদেবের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে মূর্তিটি বসানো হয়েছিল। সাধারণ বৈষ্ণব ভক্ত সমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী যে তমাল গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব তার সন্নিকটেই বসেছিল ওই মূর্তি। এবার আবার আগের মূর্তির খানিকটা দূরেই শ্রীচৈতন্যদেবের আরেকটি মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মূর্তির ব্যয়ভার বহন করেছেন নীহারবাবু তাঁর বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে। তবে দ্বিতীয় এই মূর্তিতে শ্রীচৈতন্যদেব একা নন, তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন রূপ ও সনাতন গোস্বামীর মূর্তিও। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে এই তিনটি মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
দুই নেতার এই চৈতন্য মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে শাসকদলের অভ্যন্তরে এবং জেলার রাজনৈতিক মহলে। ফের উস্কে গিয়েছে নীহার-কৃষ্ণেন্দুর সংঘাত। কৃষ্ণেন্দু বলেন, এক সময় রামকেলির মতো পবিত্র বৈষ্ণব তীর্থভূমিতে শ্রীচৈতন্যদেবের কোনও মূর্তিই ছিল না। তাই তাঁর স্মরণে রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে মূর্তি বসিয়েছিলাম। এখন শুনছি চৈতন্যদেবের আবার আরেকটি মূর্তি বসানো হয়েছে। মূর্তির প্রতিযোগিতা না করে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা করা উচিৎ। তাহলে ইংলিশবাজারে সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকার প্রায়শ্চিত্ত করতে পারা যাবে। পাল্টা জবাব দিয়েছেন নীহারও। তিনি বলেন, রূপ ও সনাতন চৈতন্যদেবের অন্যতম প্রধান পার্ষদ ছিলেন। অথচ তাঁরা অবহেলিত ছিলেন। তাই মহাপ্রভুর সঙ্গে রূপ ও সনাতন গোস্বামীর মূর্তি একসঙ্গে বসিয়ে সাযুজ্য রক্ষা করা হয়েছে। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ এতে রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদই জানিয়েছেন। আমি কারও সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতায় নেই। শুধু চাই সকলের মধ্যেই মহাপ্রভু ‘চৈতন্য’ জাগ্রত করুন।
এই বিতর্কে অবশ্য অস্বস্তিতে তৃণমূলের নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌর মণ্ডল অবশ্য বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, নীহারবাবু ও কৃষ্ণেন্দুবাবু দুজনেই আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁরা দুজনেই চান যত বেশি সংখ্যক মানুষ যেন মহাপ্রভুকে আরও কাছ থেকে দর্শন করতে পারেন। তাই রামকেলির পৃথক পৃথক জায়গায় চৈতন্য মূর্তি স্থাপন করেছেন। এনিয়ে বিতর্ক অবান্তর।