কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
বাংলার মানুষের কাছেও এই বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাবন্দির যন্ত্রণা কম কিছু নয়। কিন্তু করোনার থাবা আর বাড়তে না দেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ জিততে সরকারি এই ফতোয়া সকলকে যথাসম্ভব মেনে চলতেই হচ্ছে। এই অবস্থায় দুই বাঙালির স্বেচ্ছাবন্দির ঘটনা এখন বেশি করে সকলের সামনে উঠে আসছে। তাঁদের মধ্যে একজন নিজেকে ৩০ বছর ঘরবন্দি রেখে কার্যত রেকর্ড গড়েছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সর্বকালের সেরা গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের তৈরি সেই রেকর্ড তাঁর প্রয়াণের আগে বা পরে আর কেউ গড়েননি। সুচিত্রাদেবীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন মিম হচ্ছে, তাঁর সেই ৩০ বছরের স্বেচ্ছাবন্দির উদাহরণ থেকে মানসিক জোর খোঁজার তাগিদে। আর দ্বিতীয়জন হলেন বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় বহু চর্চিত নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সুচিত্রাদেবীর রেকর্ডের ধারেকাছে না হলেও করোনার কারণে কাহিল ঘরবন্দি বাঙালির কাছে তিনিও এখন অনুপ্রেরণা।
রাজ্যের প্রাক্তন এই মুখ্যমন্ত্রী বিগত তিন বছর ধরে নিজেকে পাম অ্যাভিনিউয়ের সরকারি আবাসনের ছোট ফ্ল্যাটে স্বেচ্ছাবন্দি করে রেখেছেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে এসেছেন তারও আগে। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর মন ভেঙে গেলেও রাজনীতি ছাড়েননি তখন বুদ্ধদেববাবু। কিন্তু ক্রমশ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাঁর শরীর ভেঙে পড়তে থাকে। আলিমুদ্দিনের পার্টি অফিসে যাতায়াত কমে যায়। ২০১৫ সালে দলের সর্বভারতীয় সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি শীর্ষ নেতৃত্বের পদ থেকে সরেও দাঁড়ান। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পার্ক সার্কাস ময়দানে একটি জনসভাও করেন। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে আরও গুটিয়ে নেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে আর বাড়ির বাইরে বেরনোর ইচ্ছায় দাঁড়ি টানেন। ২০১৮ সালে দলের রাজ্য সম্মেলনের সময় একদিন আধঘণ্টার জন্য গাড়িতে চেপে এসেছিলেন। আর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডের সভামঞ্চ পর্যন্ত এসেও শেষ পর্যন্ত ধুলোর দাপটের জেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। তারপর একবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে দিন কয়েকের জন্য দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া বাড়ির চৌকাঠ পেরননি মাঝ সত্তরের এই মার্কসবাদী নেতা।
নিজেকে দিনের পর দিন এভাবে ঘরবন্দি রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার পিছনে রহস্যটা ঠিক কী পলিতকেশ এই বামপন্থী নেতার, তা জানতে এখন নতুন করে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সিপিএম সহ বাম রাজনীতির অলিন্দে। খুব একটা নিয়মিত এখন কোনও নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে আসেন— তেমন কোনও ঘটনা না ঘটা সত্ত্বেও বুদ্ধদেববাবুর এই সেলফ কোয়ারান্টাইনের গোপন চাবিকাঠি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বাম শিবিরের বহু নেতা-কর্মী। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সহ আলিমুদ্দিনের ম্যানেজারদের সকলেই একবাক্যে বলছেন, একেই বলে মনের জোর। মনের জোরে নিজেকে চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রেখেও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চোখের সমস্যা থাকলেও নিয়মিত পড়াশোনাই এই মনের জোরের অন্যতম শক্তি জোগায় ওঁকে। আর সেই শক্তির জোরে এই অবস্থাতেও গোটা তিনেক বই লিখে ফেলেছেন। ঘরবন্দি থাকার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নিদান মেনে চলার এমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ কেবল দল নয়, সকলের কাছেই উদাহরণ হোক এই করোনা আতঙ্কের সময়।