ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, ভারতের জয়ের রাস্তায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূতই। অভিষেককারী রাচীন রবীন্দ্র ৯১ ডেলিভারি খেলে থাকলেন অপরাজিত। রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন তেন্ডুলকরের নাম মিলিয়ে পুত্রের নামকরণ করেছিলেন রাচীনের বাবা-মা। বেঙ্গালুরু থেকে কিউয়ি মুলুকে পাড়ি দেওয়া ওই দম্পতির স্বপ্ন স্বার্থক। কোচ দ্রাবিড়ের প্রথম টেস্টে জয়ের আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন তাঁদের সন্তান। রাচীনের অন্তিম সঙ্গী আজাজ প্যাটেলের জন্ম মুম্বইয়ে। চরমতম চাপের মুখে তিনিও ঠেকিয়ে দিলেন ২৩ বল। শেষ উইকেটে মারাত্মক টেনশন সামলে ন’ওভার মাটি কামড়ে পড়ে রইল এই জুটি। অশ্বিন, জাদেজা, অক্ষরদের যাবতীয় কারিকুরি থামিয়ে স্কিলের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ তাঁরা। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের হার না মানা মানসিকতার তারিফ করতেই হবে।
অশনি সঙ্কেত অবশ্য আগেই দেখা দিয়েছিল। দুপুরে আচমকা মেঘলা আকাশ। তখন সবে ছয় উইকেট পড়েছে নিউজিল্যান্ডের। উদ্বিগ্ন সুনীল গাভাসকরের গলায় ঝরে পড়ল টেনশন, ‘আরও ঘণ্টাখানেক খেলা হবে তো!’ মনে পড়ছিল, মহাভারতে বর্ণিত জয়দ্রথ বধের কাহিনি। চক্রব্যুহে অভিমন্যুর নৃশংস হত্যার খবরে ক্রুদ্ধ অর্জুন সূর্যাস্তের পূর্বেই ‘দ্বাররক্ষী’ জয়দ্রথকে বধের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সময়ের সঙ্গে লড়াইয়ে অর্জুনকে সেদিন সহায়তা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু সোমবার গ্রিন পার্কের আকাশে সূর্যকে আরও কিছুক্ষণ জাগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিধাতার সহায়তা পেলেন না অশ্বিন-জাদেজারা। অগত্যা রৌদ্র-ছায়ার নাটকীয় খেলায় মধুর সমাপয়েৎ আর হল না।
মন্দ আলোর জন্য যখন দাঁড়ি পড়ল ম্যাচে। তখনও খাতায়-কলমে বাকি ছিল ১১ মিনিট। তীরে এসেও জয়ের বন্দরে ভিড়ল না ভারতীয় তরী। প্রশ্ন উঠছে, দ্বিতীয় ইনিংসের পরিসমাপ্তি আরও একটু আগে ঘোষণা করা যেত না? তাহলে তো বোলাররা বাড়তি কয়েক ওভার পেতেন। এদিন সকালের সেশনে উইকেট না পড়াও চাপে ফেলেছে রাহানেদের। নৈশপ্রহরী সমারভিলকে নিয়ে টম লাথাম স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় শিবিরে। যদিও লাঞ্চের পরের দু’ঘণ্টায় তিন উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড। শেষ সেশনেও পড়ল পাঁচ উইকেট। শুধু অবিচ্ছিন্ন রয়ে গেল এক অখ্যাত জুটি।
অথচ, বিপক্ষের শিরায় শিরায় আতঙ্কের স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন অশ্বিন-জাদেজা। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে কুম্বলে, কপিলের পর তৃতীয় সফলতম বোলার হয়ে ওঠার পথে হরভজনকে (৪১৭ উইকেট) টপকে গেলেন অশ্বিন। যোগ্য সঙ্গত জাদেজারও। রস টেলর ও উইলিয়ামসনকে এলবিডব্লু করে জয়ের আশা উসকে দিয়েছিলেন তিনি। পিছনের পায়ে খেলতে গিয়েই ডুবলেন কিউয়িদের দুই মহারথী।
সাড়ে তিনটেয় যখন প্রথম টেস্টে শেষবারের মতো ড্রিঙ্কস নেওয়া হল, তখনও দরকার তিন উইকেট। দ্বিতীয় নতুন বল হাতে আক্রমণ শুরুর পরের ওভারেই গর্জন। জাদেজার ডেলিভারিতে এলবিডব্লু জেমিসন। চাই আরও দু’উইকেট। গোটা মাঠ তখন রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো উন্মত্ত। পরের উইকেটও জাদেজার। এলবিডব্লু সাউদি। চাই আর এক উইকেট। হাতে ৪০ মিনিট, অর্থাৎ ১০-১১ ওভার। বার বার লাইটমিটারে চেক হচ্ছে দৃশ্যমানতা। হৃদস্পন্দন বাড়ছে গ্যালারির। এই বুঝি মন্দ আলোয় হারিয়ে যাবে আশার প্রদীপ। ঠিক সেটাই হল!অবাক কাণ্ড, আলোর অভাবে যখন দাঁড়ি পড়ল টেস্টে, তখন পশ্চিম আকাশে ফের মেঘ কাটিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। কিন্তু, ‘জয়দ্রথ’ রাচীন যে পরম বিক্রমের পরিচয় দিয়ে ততক্ষণে ফিরে গিয়েছেন কিউয়িদের নিরাপদ ছাউনিতে। অশ্বিন-জাদেজারাও নামিয়ে রেখেছেন গাণ্ডীব। বন্ধ হয়ে গিয়েছে জয়ের দরজা।
স্কোরবোর্ড: ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩৪৫।
নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ২৯৬।
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৩৪/৭ (ডিক্লেয়ার)।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস (৪-১ থেকে)- লাথাম বো অশ্বিন ৫২, ইয়ং এলবিডব্লু বো অশ্বিন ২, সোমেরভিলে ক শুভমান বো উমেশ ৩৬, উইলিয়ামসন এলবিডব্লু বো জাদেজা ২৪, টেলর এলবিডব্লু বো ২, হেনরি এলবিডব্লু বো অক্ষর ১, ব্লুন্ডেল বো অশ্বিন ২, রাচীন অপরাজিত ১৮, জেমিসন এলবিডব্লু বো জাদেজা ৫, সাউদি এলবিডব্লু বো জাদেজা ৪, আজাজ অপরাজিত ২, অতিরিক্ত ১৭। মোট ৯৮ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৫ রান। উইকেট পতন: ৩-১, ৭৯-২, ১১৮-৩, ১২৫-৪, ১২৬-৫, ১২৮-৬, ১৩৮-৭, ১৪৭-৮, ১৫৫-৯। বোলিং: অশ্বিন ৩০-১২-৩৫-৩, অক্ষর ২১-১২-২৩-১, উমেশ ১২-২-৩৪-১, ইশান্ত ৭-১-২০-০, জাদেজা ২৮-১০-৪০-৪।
ম্যাচ ড্র , ম্যাচের সেরা- শ্রেয়স আয়ার।