জয় চৌধুরি: ময়দানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় ৪৫ বছরের। কোচ হিসাবে দেশের প্রায় সব ট্রফি জিতেছেন। দুই প্রধান ছাড়াও টালিগঞ্জ অগ্রগামী, পিয়ারলেসকে দিয়েছেন ট্রফি। চলতি মরশুমেও কোচিং করিয়েছেন মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। ময়দানে কোচ হিসাবে কিবু ভিকুনার অভিষেকের লগ্নে এহেন সুব্রত ভট্টাচার্যই ছিলেন প্রতিপক্ষের সাইড বেঞ্চে। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল এবার দুই প্রধানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? প্রশ্ন শুনে সবুজ মেরুন জনতার আদরের বাবলু বললেন, ‘আইএসএল কিংবা আই লিগের অন্য ক্লাবে খেলা আর দুই প্রধানের জার্সিতে খেলা কিংবা কোচিং করানোর মধ্যে অনেক তফাত। হৃদয়ে সূক্ষ্ম অনুভূতি আর আবেগ না থাকলে দুই প্রধানে খেলোয়াড় বা কোচ হিসাবে সফল হওয়া যায় না। বিএফসি, ডেম্পোর সঙ্গে এখানেই মূল ফারাক দুই প্রধানের। জাতীয় লিগ আর আই লিগ মিলিয়ে গত ২৩ বছরে দুই প্রধান মোট সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ছয়বারই ছিল বাঙালি কোচ। ১৯৯৭-৯৮ সালে জাতীয় লিগে মোহন বাগানের কোচ ছিলেন চাটুনি। কিন্তু সকলেই জানেন মোহন বাগান মাঠে প্রি-সিজনে টানা ৪৫ দিন সকাল- বিকেল প্র্যাকটিস করিয়ে দলটিকে তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন অমল দত্তই। এই সাতটি দলের টিম লিস্ট খুলে দেখুন, ১৫-১৬ জনের কোর গ্রুপে চার-পাঁচজন বাঙালি ছেলে ছিল। সেই সঙ্গে চিমা, স্টিফেন, ব্যারেটো, ইগর, সুলে মুসা, জ্যাকসন, মাইক ওকেরোর মতো বিদেশি। পাশাপাশি এবার মোহন বাগানের প্রথম একাদশে একজন, বড় জোর দুই বঙ্গসন্তানকে খুঁজে পাবেন। চলতি মরশুমে ইস্ট বেঙ্গলের অধিকাংশ ম্যাচেই প্রথম একাদশে ছিল না বঙ্গসন্তান। আই লিগে একই চিত্র দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। লক্ষ করে দেখুন সঞ্জয় সেনের আমলে মোহন বাগানের যে দলটি ২০১৪-১৫ মরশুমে আই লিগ এবং ২০১৫-১৬ মরশুমে ফেড কাপ জিতেছিল সেই দলে প্রীতম কোটাল, শৌভিক চক্রবর্তী, প্রণয় হালদার, দেবজিৎ মজুমদার, শিলটন পালদের মতো এক ঝাঁক বাঙালি ছিল।’
সুব্রত আরও মন্তব্য করেন, ‘এই দুই দলের ব্যর্থতায় হাজার হাজার মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়। তখন রাস্তা- ঘাটে সমর্থকদের আক্ষেপের কথা ফুটবলারদের কানে পৌঁছায়। এই সবই জেদ বাড়ায় খেলোয়াড়দের। কলকাতা লিগ আর চট্টগ্রামের টুর্নামেন্টে মোহন বাগানের ম্যাচ দেখেছি। কোনও খেলোয়াড়ের মধ্যেই সেই অনুভূতি বা বাড়তি তাগিদ দেখিনি। বাঙালি কোচ এবং প্লেয়ার থাকলে দলের মধ্যে আবেগ অনেক বেড়ে যায়। এই অভাব এখন বড়ই চোখে পড়ছে। দুই দলে দশ জন স্প্যানিশ। ইস্ট বেঙ্গল টিমের কয়েকজন জুনিয়র ফুটবলার খারাপ নয়। কিন্তু তাদের গাইড করার মতো খেলোয়াড় নেই। আর দুই কোচ ফুটবলের কিছুই বোঝেন না। টুর্নামেন্ট খেলায় প্রচণ্ড অনীহা। দল শুধু স্কোয়ার পাস আর ব্যাক পাস খেলে। আলেজান্দ্রো-কিবুর থেকে জহর দাস বড় কোচ। তাই গোকুলাম, চেন্নাই, রিয়াল কাশ্মীর যা টিম করেছে তাতে এই দুই দলের সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’