সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
শহরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তাঁর বয়স ৭৮ বছর। মিলনপল্লি রোডের পাশে ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। তাঁর মেয়ে হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর স্ত্রী সাথীদেবী গৃহ শিক্ষিকা। তাঁর বয়স ৬৪ বছর। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সেই বাড়িতে ঢুকেই লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা।
সাথীদেবী বলেন, অন্যান্য দিনের মতো এদিন সকাল ৬টা নাগাদ মেয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমি সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়াই। এরপর রান্না করতে যাই। তখন ঘরের দরজা খোলা ছিল। সরাসরি দু’জন যুবক ঘরে ঢুকে গয়না ও রান্নার গ্যাসের ওভেন পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা বলে। রাজি না হলেও তারা জোর করে হাতের আংটিতে এক ধরনের তরল পদার্থ লাগিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। এরপর হলুদ জল ওয়ালা একটি বাটিতে আমার হাতের চুড়ি, গলার হার, আংটি ও স্বামীর গলার চেন, আংটি, ব্রেসলেট চুবিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে বলে। তাদের পরামর্শ মতো তা করি। এরপর পকেট থেকে রুমাল বের করে আমাদের মুখের সামনে ঝাড়ে এবং কিছুটা একটা স্প্রে করে। এতে কিছুক্ষণের জন্য আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি হলুদ জলে চুবানো কোনও গয়নাই নেই।
নৃপেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ওই যুবকদের পরনে ছিল সেলসম্যানের মতো পোশাক। তারা বেশ লম্বা। দেখতেও স্মার্ট। একজনের কপালে ছিল লাল টিপ। হিন্দিতে কথা বলছিল। তারা এভাবে লুটপাট চালাবে তা ভাবতেও পারিনি। এই ব্যাপারে পুলিসের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।
শহরের অভিজাত এলাকাগুলির মধ্যে সুভাষপল্লি অন্যতম। এখানকার বাসিন্দাদের একাংশ সরকারি চাকরিজীবী। এর বাইরে ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজের শিক্ষক, বেসরকারি সংস্থার কর্মরতরা এখানে বসবাস করেন। এলাকাটি ব্যস্ততম বলেও পরিচিত। পুজোর মুখে এই চুরির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের একাংশ পুলিসের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেন, সকালে শহরের এই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটবে, তা যায় না। আগে কোনও দিন এখানে এমন ঘটনা ঘটেনি। তাঁদের অভিযোগ, শহরে নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা বাড়লেও পুলিস নির্বিকার। যার ফলে দুষ্কৃতীরা এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে।
এলাকাটি শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। ওই লুটের ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বয়স্ক দম্পতির বাড়িতে যান স্থানীয় কাউন্সিলার সিপিএমের মৌসুমী হাজরা। শিলিগুড়ি থানার পুলিসও ঘটনার তদন্ত করতে এলাকায় আসে। স্থানীয় কাউন্সিলার বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পুলিসের কাছে জানানো হয়েছে। শহরে নজরদারি বাড়ানোর দাবিও পুলিসের কাছে জানিয়েছি। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপরিচিত লোক, হকার, সেলসম্যানকে বাড়িতে চট করে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য বাসিন্দাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে হকারদের পরিচয়পত্র দেখে তা ছবি তুলে রাখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া হকার, সেলসম্যানদের গতিবিধি সন্দেহজনক বলে মনে হলে পুলিসকে খবর দিতে বলা হয়েছে।
কিছু দিন পর দুর্গাপুজো। এই শহরের শহরের চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বাড়বে বলেই বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা। ওই চুরির ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের সন্দেহ, ওই ঘটনার সঙ্গে বিহারের দুষ্কৃতীরা জড়িত। পুলিস জানিয়েছে, দুষ্কৃতী গ্যাংয়ের খোঁজ চলছে। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা রুখতে শহরে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।