ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
স্কুলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাসভিলের। প্রি-কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। ড্যানের নির্দেশ মাত্র সেই স্কুলের লাইব্রেরি থেকে সরানো হয়ে গিয়েছে হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলি। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, বইগুলিতে বাস্তবিকই অভিশাপ এবং কালো জাদুর কথা লেখা আছে। ফলে, সেগুলি যারা পড়ছে তাদের উপর অশুভ আত্মা বা ভূতের নজর পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। একথা শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষের নয়। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী যাজক, আমাদের ওঝা-গুণিনদের মতো যারা অশুভ শক্তিকে তাড়ানোর দাবি করেন, তাঁরাও এই দাবিকে মান্যতা দিয়েছেন। ড্যানের মতে, সাধারণ পাঠক জাদুর জগতে ডুব দিলে তাঁদের অজান্তেই অশুভ শক্তিরা এসে হাজির হতে পারে। তাই স্কুলে এসব চলবে না। হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলোতে ভাল-মন্দ উভয় ধরনের ম্যাজিকের কথা রয়েছে; যেগুলো পুরোটাই কল্পনানির্ভর। তবে এসব বইয়ে যেসব অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সত্যি। যে কারণে বইগুলো ছাত্রছাত্রীরা পড়লে তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বই নিষিদ্ধ করার আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ দেশ-বিদেশের অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরাই হ্যারি পটার সিরিজের সব বই লাইব্রেরি থেকে সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ন্যাসভিলের একটি স্থানীয় সংবাদপত্র জানিয়েছে, স্কুলের সব পড়ুয়ার বাবা-মাকে ই-মেল মারফৎ জানানো হয়েছে, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অশুভ শক্তির মোকাবিলাকারী এক্সরসিস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন রেভারেন্ড। তাঁরাই স্কুলের লাইব্রেরি থেকে হ্যারি পটারের সাতটি বই সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ই-মেলে তিনি আরও লিখেছেন: ‘বইগুলিতে ভালো এবং মন্দ- উভয় ধরনের জাদুমন্ত্রের কথা বলা আছে, বইয়ের ভাষায় সেগুলি মোটেই সত্যি নয়। কিন্তু এটা এক ধরনের ধোঁকাবাজি। বইগুলিতে যেসব অভিশাপবাক্য এবং মন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি সবই আসল। সেগুলি কোনও পাঠক সঠিকভাবে উচ্চারণ করলে অশুভ আত্মা বাস্তব জগতে চলে আসতে পারে।’
এপ্রসঙ্গে বলা দরকার, ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোজফার্স স্টোন’। যার পর থেকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাহিত্যিক জে কে রাউলিংকে। জাদুর গল্পের জাদুতে মুগ্ধ ‘মাগল’ বিশ্ব কী করেনি এই সিরিজের জন্য! মাঝরাতে পর্যন্ত বই প্রকাশ হয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সর্বাধিক বিক্রিত এই সিরিজে রয়েছে খুন করার অভিশাপমন্ত্র ‘আভাডা কাডাভরা’, ভয়াবহ নির্যাতনের মন্ত্র ‘ক্রুশিও’ এবং অন্যকে নিয়ন্ত্রণের মন্ত্র ‘ইম্পেরিও’। এছাড়া আরও বহু মন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে বইগুলিতে। ক্যাথলিক মতে, সেগুলি অশুভ শক্তির উপাসনায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, এই সর্বজন স্বীকৃত শিশুসাহিত্য নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। আমেরিকায় প্রকাশের পর থেকেই শয়তানের উপাসনা নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে হ্যারি পটার সিরিজকে। শুধু, ক্যাথলিক বা রক্ষণশীল খ্রিস্টানরাই নন, মুসলিমদের একাংশও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। বিশেষ করে সিরিজের শেষ বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ’-এ খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে।
এদিকে, অন্যদিকে, শুক্রবার রেভারেন্ড ড্যানের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছে সংবাদপত্রটি। বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ন্যাসভিল ডায়োসেসের কাছে চিঠি দিয়েছিল ক্যাথলিক স্কুলের ১৪ জন পড়ুয়ার অভিভাবক। চিঠিতে ৫০ দফা কারণও দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, ড্যান পোপ ফ্রান্সিসকে ঘৃণা করা একজন বিষাক্ত নার্সিসিস্ট এবং তিনি নিজেকে ‘ঈশ্বরের সৈন্য’ হিসেবে দেখেন। রেভারেন্ড অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে এখনও মুখ খোলেননি।
হ্যারি পটার সিরিজটি নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যাসভিল অঞ্চলের ক্যাথলিক স্কুল কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেনডেন্ট রেবেকা হ্যামেল জানিয়েছেন, একজন অভিভাবক প্রথমে হ্যারি পটার সিরিজে উল্লিখিত জাদুমন্ত্রগুলি সম্পর্কে রেভারেন্ড ড্যান রিহিলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। পরে কয়েকজন এক্সরসিস্টের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।তাঁদের পরামর্শ মতো বইগুলি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ই-মেলে সব অভিভাবককে জানান রেভারেন্ড। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া রিহিলের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে বলেই জানিয়েছেন হ্যামেল।
রক্ষণশীলতা যে শিশু-কিশোরের ভালোলাগা-ভালোবাসাকেও ছাড়ে না!