সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
প্রথমে চলুন মাণ্ডি শহরটা একঝলকে ঘুরে ফেলি। মাণ্ডিকে বলা হয় হিমাচলের কাশী। এখানে রয়েছে ৮১টি পুরনো মন্দির। যার অধিকাংশই শিবের। হাইওয়ে ছাড়িয়ে নদীর ব্রিজ পেরিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করলে চারপাশে পুরনো আমেজটা আজও ধরা দেয়। শহরের মাঝে সাজানো গোছানো ইন্দিরা মার্কেট। এর ঠিক পিছনেই রাজমহল ভবানী প্রাসাদ। প্রাসাদের একাংশে হেরিটেজ হোটেল আর অন্য অংশে সরকারি কার্যালয়। অদূরে পুরনো বাজার এলাকার মধ্যে রয়েছে মাণ্ডির বিখ্যাত ভূতনাথ মন্দির। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে এখানে শিবরাত্রিতে বড় উৎসব হয়। লাগোয়া গলিপথে রয়েছে পুরনো আমলের বাড়ি-ঘর।
মাণ্ডির অধিকাংশ মন্দিরগুলোই পায়ে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায়। একে একে দেখে নিন নীলকণ্ঠ শিবমন্দির, মৃত্যুঞ্জয় মহাদেব মন্দির। মন্দির দুটো শিল্পমণ্ডিত। নদীর ধারে দেখবেন একাদশ রুদ্রমন্দির। বিপাশা নদীর উপর ভিক্টোরিয়া ব্রিজ পেরিয়ে দেখে নিন কারুকার্যময় সপ্তদশ শতকের রাজা সিধ সেনের পঞ্চবকতর শিবমন্দির। খানিক দূরে সুকেতি ঝোরা এসে মিশেছে বিপাশা নদীতে। পঞ্চবকতর মন্দিরে শিবমূর্তির পাঁচটি মুখ। এছাড়াও মাণ্ডিতে দেখবেন ত্রিলোকীনাথ মন্দির, তারণা মন্দির, ভীমাকালী মন্দির প্রভৃতি।
মাণ্ডি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রেওয়ালসর হ্রদ। যেতে স্থানীয় বাস ও গাড়ি পাবেন। সেখানে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পৌঁছে দেখুন সবুজে ঘেরা পবিত্র রেওয়ালসর হ্রদ। এখানে রয়েছে বৌদ্ধ গুম্ফা, শিখ গুরুদ্বার আর হিন্দু মন্দির। লোকবিশ্বাস, এই হ্রদের জলে স্নান করলে পূর্ণলাভ করা যায়।
মাণ্ডি শহর আর রেওয়ালসর বেড়িয়ে এবার চলুন পরাশর হ্রদের কাছে। মাণ্ডি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এই অচেনা গন্তব্যে যেতে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। প্রায় সারাদিনের ট্যুর। শহর ছাড়িয়ে গাড়ি ধরবে কাংড়াগামী পথ। পথে পড়বে কামান্দ গ্রাম। দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট সুন্দর গ্রাম। গিরিখাত দিয়ে বইছে উলনদী। এরপর পাহাড়ি প্রকৃতির কোল দিয়ে পথযাত্রার পরে গাড়ি থামবে কামান্দ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ছবির মতো সুন্দর আরও এক পাহাড়ি গ্রাম কাটোলাতে। এই পথে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। পাহাড়ের গায়ে ধাপচাষ করছে গ্রামের মানুষ। গ্রামগুলোও বেশ নির্জন। কাটোলা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বাগি গ্রাম। এই গ্রাম থেকে ট্রেকিং করেও পরাশর হ্রদ যাওয়া যায়। এই গ্রাম পেরলেই পথে আরও জনবসতির চিহ্ন নেই। শুধুই চির, পাইন, দেওদার অরণ্যে ছাওয়া দুর্গম পাহাড়ি পথ। সেই পথ দিয়েই পাকদণ্ডী কেটে গাড়ি যাবে ধীর গতিতে। বাগি থেকে পরাশর হ্রদ ১৪ কিলোমিটার দূরে। চারপাশের মনোরম প্রকৃতি পথ চলার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
এই পথে মেষপালকরা আসে দূরের অচিন গ্রাম থেকে। পাহাড়ি অরণ্যে রয়েছে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার আর অজস্র পাখি। যাত্রাশেষে গাড়ি থামবে যেখানে, সেখান থেকে ঘাসে ঢাকা বুগিয়ালের ওপর দিয়ে কিছুটা হাঁটলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অপরূপ পরাশর হ্রদের ছবি। সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া পাহাড়ের কোলে ২ হাজার ৭৩০ মিটার উচ্চতায় এই হ্রদের ধারেই রয়েছে ত্রয়োদশ শতকে রাজা বান সেনের তৈরি প্যাগোডাকৃতির পরাশর মুনির মন্দির। তিনতলা মন্দিরটি কাঠ আর পাথর দিয়ে তৈরি। জুন মাসের মাঝখানে এখানে স্বর্ণহালুই মেলা বসে। লোকবিশ্বাস, এই পবিত্র হ্রদ দেবতা কামরুনাগের ইচ্ছায় পদাঘাতে সৃষ্টি করেছিলেন ভীম। হ্রদের জলে রয়েছে ছোট্ট এক খণ্ড ভাসমান দ্বীপ। হ্রদের জলে স্নান করা নিষেধ। চারপাশে মায়াবি প্রাকৃতিক শোভা। দূরে দেখা যায় নীল আকাশের ক্যানভাসে দিগন্ত বিস্তৃত হিমশৃঙ্গ। হ্রদের কাছে অপার নির্জনতার মাঝে রাত কাটানোর জন্যে রয়েছে বনবাংলো ও পিডব্লুডি রেস্ট হাউস। সিমলা, চণ্ডীগড়, কাংড়া থেকে মানালিগামী পথে পড়বে মাণ্ডি। যেতে বাস ও গাড়ি পাবেন।