দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
এদিন রূপপুর পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল কর্মী অনুব্রতবাবুর কাছে অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় দলের কিছু কর্মী বাম আমলে দেওয়া জমি, যেগুলির পাট্টা হয়নি তা বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন অভিযোগ শোনার পরেই জেলা সভাপতি কড়া ভাষায় তা দমনের জন্য থানায় অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, গরিব মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। কেউ অন্যায় করলে তাকে ছাড়া হবে না বলে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনুব্রতবাবু।
এছাড়া রূপপুর পঞ্চায়েতের বুথওয়াড়ি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দলের নেতৃত্বরাই বলেন, কর্মীদের একাংশের ঔদ্ধত্য ও অতিরিক্ত কনফিডেন্সের জন্যই লোকসভা ভোটে দলের হাল খারাপ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর থেকে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বিধানসভা ভিত্তিক বুথ সম্মেলন শুরু করেন। এদিন তা শেষ হয়েছে। বীরভূম জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে অনুব্রতবাবু সমস্ত বুথের হাল-হকিকত সম্পর্কে জানতে এই সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন। তাতে গত লোকসভা ভোটের ফলের পর্যালোচনা করা হয়েছে। মঞ্চ থেকে একাধিক নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। অন্যদিকে, একাধিক ব্যক্তিকে পদ থেকে সরিয়েও দিয়েছেন। বোলপুরের বুথ সম্মেলনও কার্যত একই চেহারায় দেখা গিয়েছে।
এদিন ইলামবাজার, বোলপুর সহ বোলপুর পুরসভার বুথের ফলাফল নিয়ে অনুব্রতবাবু অলোচনা করেন। তাতে ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব-কেন্দুলি পঞ্চায়েতের এক নেতা বলেন, এলাকায় নতুন করে একটি টিম তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। ক্ষমতা দিলে সেই টিমের গলা টিপে শেষ করে দেব। এই কথা বলার পরই সম্মেলনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ড্যামেজ কন্ট্রোল করে অনুব্রতবাবু বলেন, সংগঠনের মাধ্যমেও গলা টেপা যায়। সংগঠন করতে করতে গলা থেকে আওয়াজ কমে যায়। মিছিল, মিটিং করলে গলা বসে যায়। তাই সংগঠনের মাধ্যমে যা করার তা কর।
অন্যদিকে, এদিন বুথ কর্মী সম্মেলনে বিলাতি অঞ্চলের সংগঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানকার সংগঠন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনুব্রতবাবু গোষ্ঠীবাজির খোঁজ নেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, যারা গোষ্ঠী করবে তাদের দলে রাখা হবে না। অপরদিকে, ইলামবাজার পঞ্চায়েতে সংগঠনের বেহাল দশা দেখে বুথ সম্মেলনেই অনুব্রতবাবু মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ও সেখানকার ব্লক সভাপতি ফজলুল রহমান(তরু)-কে দায়িত্ব দেন।
এদিনও অনুব্রতবাবু স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অঞ্চল সভাপতিদের বুথভিত্তিক নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। তাতে প্রথম দিকে বাতিকার অঞ্চল নিয়ে কথা শুরু হলে ভোটে হারের ফল নিয়ে বলতে গিয়ে সেখানকার নেতৃত্ব সাম্প্রদায়িক বিষয় তুলতে অনুব্রতবাবু কার্যত মেজাজ হারান। পরে তিনি তাঁদের কড়া ভাষায় বলেন, এই ইস্যু নিয়ে যেন বারবার কথা বলা না হয়। তারপর তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে উন্নয়ন করেছেন।
তবে জেলা সভাপতি ধরমপুর অঞ্চল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেখানকার নেতৃত্বকে ভোটে হারের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। সেভাবে কিছু বলতে না পারায় নেতৃত্বকে কার্যত অনুব্রতবাবু বলেন, আবাস যোজনা থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেই সেখানে ভোটে হার হয়েছে। অন্যদিকে, বোলপুর পুরসভা নিয়ে আলোচনা করার সময় চেয়ারম্যান সুশান্ত ভকত বলেন, লোকসভা ভোটের সময় শহরের মানুষের মাথায় মোদির ভূত চেপেছিল। কিন্তু, এখন সেই ভূত নেমে গিয়েছে। তাই পুরসভা ও বিধানসভা ভোট নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। পুরসভার চেয়ারম্যানের এই কথা অবশ্য সম্মেলনে প্রত্যেকেই হেসে ফেলেন। জেলা সভাপতিকেও হাসতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, বোলপুরের শহর সভাপতি শ্যামসুন্দর কোনার বলেন, পুরসভা দলের সংগঠন ঠিক আছে। তবে, অনুব্রত মণ্ডল ও চন্দ্রনাথ সিনহা একবার যদি ঘোরেন তাহলে আমরা ১৫-১৬হাজার ভোটে লিড দেব। এদিনের সম্মেলনেও অনুব্রতবাবু প্রত্যেক নেতার কাছ থেকে আগামী বিধানসভা ভোটে লিড দেওয়ার অঙ্গীকার করিয়ে নেন। এদিনের সভায় জেলা সভাপতি ছাড়াও মৎস্যমন্ত্রী, দলের সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, বোলপুরের সংসদ সদস্য অসিত মাল প্রমুখ ছিলেন।