দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
নলহাটি থানার দেবগ্রামে ব্রাহ্মণী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকার রামেশ্বরপুর, বুজুং, সরধা, রামপুর সহ প্রায় ২০টি গ্রামকে ঘিরে রেখেছে ব্রাহ্মণী নদী। ওই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের নলহাটি, রামপুরহাট বা মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ব্রাহ্মণী নদীগর্ভ। অন্যদিকে নদীর ওপারের দেবগ্রাম, ভদ্রপুর, রায়পুর, কৃষ্ণপুর সহ প্রায় ৩০টির অধিক গ্রামের চটজলদি মহকুমা শহর রামপুরহাট বা তীর্থক্ষেত্র তারাপীঠের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমও সেই নদীগর্ভ। নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নদীগর্ভে পাথর ও মাটি ফেলে যাতায়াত করে গ্রামের বাসিন্দা থেকে ট্রাক্টর, বাইক ও অন্যান্য যানবাহন। বাকি পাঁচমাস বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জলবন্দি হয়ে থাকতে হয় নিরুপায় গ্রামবাসীদের। সেই সময় ভরসা বলতে নৌকা। স্কুল, কলেজের পডুয়া থেকে গ্রামবাসীদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠা নদীতে নৌকায় চেপে পারাপার করতে হয়। সন্ধ্যা নামলে আর কোনও উপায় থাকে না। সব থেকে অসুবিধায় পড়তে হয় যখন গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রসূতি মায়েদেরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
লোকসভা, বিধানসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিতেন। কিন্তু, ভোট পেরলেই সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে যেতেন তাঁরা। সকলে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় গ্রামবাসীরা নিজেরাই গ্রীষ্মের সময় নদীগর্ভে পাথর ও মাটি ফেলে যাতায়াত করেন। আর বর্ষায় ভরসা জোগায় নৌকা। যোগাযোগ অব্যবস্থার কারণে এলাকার উন্নয়নও থমকে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। অনেকেই নলহাটি অথবা রামপুরহাট শহরে বাড়ি বানিয়ে চলে গিয়েছেন। যাঁরা নিরুপায় তাঁরাই এখন গ্রামগুলিতে পড়ে রয়েছেন।
গত ১৭ আগস্ট দিদিকে বলো কর্মসূচিতে নলহাটি-২ ব্লকের বারা গ্রামে আসেন তৃণমূলের রামপুরহাট-২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়। এলাকার মানুষ তাঁর কাছে প্রধান চাহিদা হিসেবে দেবগ্রাম ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। এলাকার চাষিরা জানান, যোগাযোগের অভাবে উৎপাদিত ফসল তাঁরা বাজারজাত করতে পারছেন না। অন্যদিকে, নলহাটির বিধায়ক মইনুদ্দিন শামসকেও এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াতের অব্যবস্থা কাটিয়ে দেবগ্রামে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
অবশেষে স্থায়ী সমাধান না হলেও দেবগ্রামে নদীর উপর কজওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নলহাটি-১ ব্লক প্রশাসন। বিডিও বলেন, পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে ওখানে নদীর উপর কজওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে ওই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দারা ন’মাস যাতায়াত করতে পারেন। ওই কজওয়ে দিয়ে বড় গাড়িও চলাচল করতে পারবে। এখন নদীতে জল রয়েছে। জল কমলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আপাতত, মাটি ও হিউম পাইপ দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা করা হবে। পরে পাথর সেটিং করে কজওয়ে নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, কজওয়ে নির্মাণের ফলে ওই এলাকার মানুষের যেমন সুবিধা হবে, তেমনি নদী লাগোয়া পার্কে দুই পাড়ের শিশুরা বেড়াতে এসে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
গ্রামবাসীরা বলেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগে ন’মাস স্বস্তি পেলেও বাকি তিনমাস আমাদের জলবন্দি হয়েই থাকতে হবে। তবে, এই কজওয়ে নির্মাণই বা কম কিসের। তাঁরা বলেন, ব্রিজ নির্মাণ করে দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলে ভালো হতো।