দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাট থানার আনুলিয়ার লোকনাথনগর এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রা পাল নামে এক প্রসূতিকে রবিবার সন্তান সম্ভবা অবস্থায় রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতে সেখানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ওই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। চন্দ্রাদেবীর স্বামী তারক পাল বলেন, রাত দেড়টা নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছেলেকে দেখায়। কিন্তু, সময় গড়িয়ে গেলেও আমার স্ত্রীকে বের করা হয়নি। আমি কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করি, তাকে কেন বের করা হচ্ছে না। তখন তাঁরা আমাকে জানায়, আমার স্ত্রীর সমস্যা রয়েছে। এরপর সোমবার ভোরে হাসপাতালের তরফে চন্দ্রাদেবীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
চন্দ্রাদেবীর স্বামীর অভিযোগ, আমরা আগে যে চিকিৎসককে দেখিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন, আমার স্ত্রীর কোনও সমস্যা নেই। আমার ধারণা, ভুল চিকিৎসার জন্যই আমার স্ত্রী মারা গিয়েছে। চিকিৎসকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
এদিকে, চিকিৎসকের গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এদিন সকালে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় মৃতের পরিবারের লোকজন। পরে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বসে পড়েন মৃতের পরিবার ও এলাকার লোকজন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে যায় জাতীয় সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কে কিছু সময়ের জন্য আটকে পড়ে শিলিগুড়ি কলকাতাগামী সমস্ত গাড়ি। তড়িঘড়ি রানাঘাট থানার পুলিস এসে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সেখান থেকে তুলে দেয়। হাসপাতালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পরিবারের তরফ থেকে পুলিসের কাছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানানো হয়। পুলিস সেই দাবি মেনে চন্দ্রাদেবীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরিস্থিতি থমথমে থাকায় পুলিস মোতায়েন করা হয়। দুপুরের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে অনির্বাণ ঘোষ বলেন, চিকিৎসার গাফিলতিতে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা ঠিক নয়। সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। ননমেডিকেল ব্যক্তির পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। রোগীর পরিবার অনেক কিছু বলতে পারেন। তাঁদের কথাটা শেষ কথা নয়। এটা বিচার করার জন্য যেখানে যাওয়ার দরকার সেখানে যাওয়া উচিত। সন্তান প্রসব হওয়ার পর মায়ের তাৎক্ষণিক কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যার ফলে এই ঘটনা ঘটে যায়। হাসপাতালে ভাঙচুর চালানোর জন্য অভিযোগ দায়ের করা হবে।
এদিকে, চন্দ্রাদেবীর বাবা প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, আমার একটি মাত্র মেয়ে চন্দ্রা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই ওর মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও এই হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। তারক পালের এক প্রতিবেশী রমেশ দাস বলেন, দিনের পর দিন গরিব মানুষের টাকা চুষে খাচ্ছে এই হাসপাতাল। আর সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করে ছাড়ছে। এদিনের ঘটনার আমরা সঠিক বিচার চাই। আর যে চিকিৎসকের জন্য আমার বন্ধুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে তার উপযুক্ত শাস্তি চাই।
অপর এক প্রতিবেশী রুপেশ কুণ্ডু বলেন, চিকিৎসকের গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রা পালের। সঠিক তদন্তের জন্য আমরা তার দেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া নেব না। নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নৌশাদ আলি বলেন, এই হাসপাতাল নিয়ে বহুবার অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও রোগী মৃত্যু নিয়ে এই হাসপাতালে গণ্ডগোল হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি, এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষ থেকেই রানাঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।