নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অতিবৃষ্টির কারণে কালীগঞ্জে ভাগীরথীর জল হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। আর সামান্য বাড়লেই বিপদসীমার উপরে চলে যাবে। ইতিমধ্যেই ব্লকের নদী তীরবর্তী বেশ কিছু জনপদে জল ঢুকতে শুরু করেছে। বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে স্থানীয়দের। যদিও শুধুমাত্র অতিবৃষ্টি নয়, বিভিন্ন ব্যারাজের থেকে লক্ষাধিক কিউসেক জল ছাড়াও ভাগীরথীর জলস্তর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মাটিয়ারি, ফরিদপুর, গোবরা পঞ্চায়েতের ফুলবাগান, ছেঁড়াখালি, শিউলিচর, নয়াচর এলাকা ভাঙন কবলিত। সম্প্রতি জলস্তর বাড়ার কারণে ভাঙনের বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নদীয়া সংলগ্ন এই এলাকায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের বাস। জলস্তর আরও বাড়লে তাঁদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হতে পারে জানা যাচ্ছে।
কালীগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘যেসব জায়গায় জল ঢুকছে আমরা সেখানে বালির বস্তা ফেলেছি। পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় মানুষের সুবিধার্থে নৌকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ত্রিপল সহ বিভিন্ন জিনিস দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এরপর যদি জল বাড়ে তাহলে আমরা সমস্যায় পড়ব। আমরা সেচদপ্তরের সঙ্গেও কথা বলেছি।›
কালীগঞ্জ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত ভাগীরথীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। যার মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি মৌজা নদীর একদম লাগোয়া। যার সিংহভাগই মাটিয়ারি, গোবরা, রাজারাম, কালীগঞ্জ পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। প্রতি মৌজাতে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষের বাস। অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা ঘুম কেড়েছে প্রশাসনেরও। স্থানীয় মানুষরাও দু’ চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। জানা গিয়েছে, গোবরা পঞ্চায়েতের পাশাপাশি রাজারাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। মূলত খালগুলো জলে টইটুম্বুর হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই বায়োডাইভার্সিটি হেরিটেজ সাইট নয়াচরের সিংহভাগই জলের তলায় চলে গিয়েছে। মাটিয়ারি ও তেজনগর ঘাটে জল অনেকটাই উপরে উঠে এসেছে। এমনকী চরকুঠুরিয়াতে রাস্তার উপর জল উঠে এসেছে। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের।
মাটিয়ারির স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন দাস বলেন, ‘আমরা এইভাবে জলস্তর বৃদ্ধি আগে কবে দেখেছি মনে পড়ে না। ভাগীরথী যেন ফুঁসছে। আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে আমাদের।’
প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই মাটিয়ারি, গোবরা এলাকাতেই পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা অজয় নদ ভাগীরথীতে মিশেছে। ডিভিসি, তিলপাড়া সহ বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার জন্য অজয় নদ অতিরিক্ত জল নিয়ে ভাগিরথীতে এসে পড়ছে। যার জন্যই জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতিকালে যে বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে যে পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে তাতে কালীগঞ্জের এই সমস্ত এলাকা দ্রুত বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে।
মাটিয়ারির পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সাহবিল শেখ বলেন, ‘জলস্তর খুব তাড়াতাড়ি বাড়ছে। বিপদসীমার কাছাকাছি পোঁছে গিয়েছে। ধানের জমিতে জল ঢুকছে। মানুষজন আতঙ্কে আছে। আমরা মানুষের পাশে আছি।›