হ য ব র ল

কীভাবে আবিষ্কার হল স্টেথোস্কোপ
স্বরূপ কুলভী

সাদা অ্যাপ্রন। গলায় বা হাতে স্টেথোস্কোপ। তা দেখেই বোঝা যায় মানুষটি ডাক্তার। স্টেথোস্কোপের একপ্রান্ত গোলাকার। আর অন্য প্রান্ত দু’ভাগে বিভক্ত। ওই বিভক্ত প্রান্তটির দু’টি মাথা কানে দিয়ে রোগীর হৃদস্পন্দন শোনেন চিকিৎসকরা। এই যন্ত্রটি ছাড়া ডাক্তারির কথা এখনও ভাবাই যায় না। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের শব্দ পরিষ্কারভাবে শুনতে সাহায্য করে এই স্টেথোস্কোপ। কিন্তু উনিশ শতকের আগে পর্যন্ত এই যন্ত্রের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। মূলত হাতের নাড়ি অনুভব করে বা কান পেতে হৃদস্পন্দন শুনে ডাক্তারকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো। ছোট্ট বন্ধুরা বুঝতেই পারছ, কাজটা একেবারেই সহজ ছিল না। কিন্তু তা বলে তো হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি চিকিৎসকরা। এই কাজকে সহজ করার পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা বহুকাল ধরেই চলছিল। যেকোনও কাজকে আরও সহজ করার আগ্রহই যুগে যুগে নতুন নতুন আবিষ্কারের জন্ম দিয়েছে। শেষপর্যন্ত কীভাবে স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার হল সেই কাহিনিই আজ সংক্ষেপে জেনে নেব। 
মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যায়। শরীরের শব্দ অনুসারে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিতে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অসকাল্টেশন। এটা অবশ্য বহু প্রাচীন। যিশু খ্রিস্টের জন্মের অন্তত সাড়ে চারশো বছর আগে গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রিটাসের সময়ও তা প্রচলিত ছিল। কিন্তু আগেই বলেছি, এতে অনেক সমস্যা ছিল। সময়টা ১৮১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস। এক রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে বিষম বিপদে পড়লেন ফরাসি চিকিৎসক রেনে ল্যানেক। রোগীর চেহারা বিশাল। মেদবহুল। হাতের নাড়ি পরীক্ষা করেও কিছু ধরতে পারা গেল না। হৃদস্পন্দনও অনুভব করতে পারলেন না। খুবই আতান্তরে পড়লেন ল্যানেক। ভাবতে ভাবতে প্যারিসের নেকার হাসপাতালের বাগানে গিয়ে বসলেন। কী করা যায়, তা নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই দেখলেন, দুটো বাচ্চা ছেলে খেলছে। লম্বা একটা কাঠের দু’প্রান্তে কান লাগিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করছে তারা। তাদের একজন পিন দিয়ে কাঠের গায়ে আঁচড় কাটছে। অন্যজন অন্যপ্রান্তে কান লাগিয়ে সেই শব্দ শোনার চেষ্টা করছে। যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল ডাক্তারের মাথায়। বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ বিভিন্ন।  বাতাসে শব্দের বেগ কম, তরল মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি। আর এই দু’টির তুলনায় কঠিন পদার্থে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি। ওই ছেলেগুলো যেভাবে শব্দ শুনছে, সেভাবে তো রোগীর হৃদস্পন্দনও শোনা যেতে পারে। আর দেরি করেননি ডাক্তার ল্যানেক। প্রায় দৌড়ে ওয়ার্ডে ছুটে এলেন বছর পঁয়ত্রিশের ডাক্তার। একগোছা কাগজকে শক্ত করে চোঙার মতো পাকিয়ে নিলেন তিনি। এরপর রোগীর বুকে ওই কাগজের চোঙার একপ্রান্ত ঠেকিয়ে অন্যপ্রান্তে কান রাখলেন তিনি। আর তাতে যা হল, তাতে নিজেই বিস্মিত ও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। আরও স্পষ্ট ও জোরালোভাবে হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে। তাঁর হাতে জন্ম হল স্টেথোস্কোপের। নিজের এই ‘ইউরেকা’ মুহূর্তের কথা লিখে গিয়েছেন ডাক্তার ল্যানেক। তাঁর তৈরি প্রথম যন্ত্রটি ছিল ছোটখাট একটা ফাঁপা কাঠের সিলিন্ডার। তা ছিল ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। ব্যাস ছিল ৩.৫ সেন্টিমিটার। আর এই যন্ত্রই চিকিৎসায় অত্যন্ত সহায়ক হয়ে ওঠে। তারপর স্টেথোস্কোপ আরও কার্যকরী করে তোলার উপর জোর দিলেন তিনি। এই স্টেথোস্কোপের সাহায্যে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন। তা নিয়ে ১৮১৯ সালে একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেন তিনি। সেই সময় ইউরোপে ছিল যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব। এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে তিনি নিজেও আক্রান্ত হলেন।  ১৮২৬ সালে মৃত্যু হয় আধুনিক স্টেথোস্কোপের পথিকৃতের। ডাক্তার ল্যানেকের মৃত্যুর পর আরও বদল হয়েছে স্টেথোস্কোপের। এর আরও উন্নতিসাধন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শরিকি সম্পত্তি মামলায় ফল অনুকূল হতে পারে। উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান গবেষণায় উন্নতির যোগ। অর্থাগম হবে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৭.৮৭ টাকা১১১.৬৫ টাকা
ইউরো৮৯.৬৮ টাকা৯৩.০৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা