উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
হ্যাঁ ঠিকই। পরীক্ষাটি এত দিন বাদে বাদে হওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। মূলত অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরশিপ এবং রিসার্চের জন্য এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাই অনেকেই আছেন, যাঁরা এই পরীক্ষাটি দিয়ে আরও উচ্চশিক্ষা কিংবা উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন চাকরি বেছে নিতে চান। তাই পরীক্ষাটি যদি অন্তত বছরে দু’বার হয় তাহলে ভালো। ঠিক যেভাবে আমরা দেখেছি নেট পরীক্ষা হয় বছরে দু’বার তেমন সেটও হতে পারে। আসলে যারা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে তাদের জন্য সেট খুব জরুরি। কারণ সেট-এর প্রশ্ন বাংলায় হয়, যেখানে নেট হয় ইংরেজিতে। তাই রাজ্যের অনেক পরীক্ষার্থী সেট দিতে চায়।
আচ্ছা নেট আর সেট-এর ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের সফলতা কী প্রায় একই মাপের হয়?
না, রাজ্যস্তরের পরীক্ষা সেট-এর ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের সফল হওয়ার সংখ্যা কম থাকে। আসলে নেট-সেট বারবার পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। আমরা যখন গবেষণাপত্র জমা করি সেই ’৯২ সালে, তখন কিন্তু নেট-এর পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল অন্যরকম। তখন ছোট এবং বড় উভয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। কিন্তু এখন সেটা পুরোটাই ‘এমসিকিউ’ (মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন) আকার নিয়েছে। যদিও এই নতুন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ‘সাকসেস রেট’ বেশি বলেই অনেকের অভিমত। পাস মার্ক পাওয়া সহজ হচ্ছে। আবার অনেকেই এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর নির্ভর করে উত্তর দিয়েও সফল হয়ে যায়। যেটা আগেকার দিনের বড় প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতিতে সম্ভব ছিল না।
এখন তো আগের মতো আর লম্বা সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হয় না। পরীক্ষাও হয় কম্পিউটারে। কিন্তু এই নতুন প্যাটার্ন নিয়ে অনেকেই অন্ধকারে। নতুন আসা পরীক্ষা পদ্ধতি সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন?
এখন হল ডিজিটালাইজেশনের যুগ। সেন্ট্রালের নানা পরীক্ষার মতো এগুলিকেও কম্পিউটারে করার কথা ভাবা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের মতো সব জায়গায় সিট পড়বে না। কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বেছে নেওয়া হয়েছে সেখানেই এই পরীক্ষাগুলি হবে। সময়ও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ছাত্রদের আরও স্পেসিফিক এবং ফাস্ট হতে হবে। তাদের সঠিক উত্তর বেছে নিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। কেন্দ্রীয়স্তরের যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে তাই হয়। এখনও পর্যন্ত দু’বার এরকম পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছে। এখন নেট পরীক্ষাটি নিচ্ছে এনটিএ মানে ন্যাশানাল টেস্টিং এজেন্সি। এরাই এই পরিবর্তন করেছে। তবে এক্ষেত্রে যেটা বলব, পড়তে হবে অনেক বেশি। খুঁটিয়ে না পড়লে উত্তর করা মুশকিল।
নেট/সেট এর প্রথম পত্রটি অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট থাকে। প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া যায়?
প্রথম পত্রটি সবার জন্যই সমান থাকে। এখানে একাধারে যেমন থাকে অঙ্ক, তেমনই আবার সাধারণ জ্ঞানের ওপর কিছু প্রশ্ন থাকে। এই অংশটি অনেক পরীক্ষার্থীর কাছেই বেশ কঠিন, কারণ সাবজেক্ট-এর চর্চার মাঝে এই বিষয় সেভাবে চর্চা করা আর হয়ে ওঠে না। এই পেপারের জন্য কেউ অসফল হতে পারে। তাই সাবজেক্ট পেপারের মতো এই পেপারটিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আর তাছাড়া আমার মনে হয় গ্রুপ স্টাডি এসব ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে খবরের কাগজ দেখা চাই এবং নিজেকে আপডেটেড রাখা চাই। তাছাড়া একান্তই কারও সাহায্য লাগলে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে গিয়ে এই বিষয় তৈরি হওয়া সম্ভব।
যারা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের নয়, আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করছে তাদের মধ্যে অনেকের অঙ্কভীতি রয়েছে। তাদের জন্য এই ফার্স্ট পেপার কতটা কঠিন? বাধা পেরনো সম্ভব কীভাবে?
হ্যাঁ, তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলব। যখন ছাত্রটি জানেই তাকে প্রথম পত্রে পাশ করতে হবে, তখন সেটা মেনে নিয়েই তার উচিত অঙ্ক কিংবা ওই ধরনের বিষয় আরও বেশি করে প্র্যাকটিস করা। বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করা। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত্রে তাদের অসুবিধার দিক ইংরেজি এবং শিক্ষাবিজ্ঞান। তাদেরও সেটি ভালোভাবে পড়তে হবে এবং তা মনে রাখতে হবে। পারলে প্রতি মাসে মক টেস্ট দিতে হবে। একবারে না পারলেও দু’বার বা তিনবারে নিশ্চয় সাফল্য আসবে। হার মানলে চলবে না।
ধরুন কেউ পাশ করল, কিন্তু সেট পাশ করাটাই তো সব নয়। পাশ করে বসে থাকতে হয় চাকরির জন্য, সেখানেও আবার ভাগ্য কাজ করে। তাহলে যেসব ছাত্ররা সেটকে সাফল্যের দরজা ভাবছে তা কি সত্যি তাদের সামনে সেই সাফল্য এনে দিতে পারছে?
দেখুন, এক্ষেত্রে দুটো জিনিস হতে পারে একটা এলএস যেটা পেলে লেকচারারশিপ পাওয়া যায়। আর যদি জেআরএফ পাওয়া যায় তাহলে তাতে স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব। যেটা বেশ ভালো অঙ্কের। সেট দিলে শুধু রাজ্যের মধ্যে এই বিষয় পড়ানোর জন্য আবেদন করা যাবে। তবে আবারও বলব, সেট দেওয়া মানেই কেরিয়ার তৈরি, এমনটা নয় কখনই। এটা একটা ভুল ধারণা। সেট দেওয়া মানে আপনার উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে গেল। এরপর আপনি আরও গভীর জ্ঞানের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন কিংবা কলেজে আবেদন করতে পারবেন। তবে কলেজে ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার জ্ঞান এবং ডিগ্রি দেখবে। মানে এমফিল বা সমতুল ডিগ্রি থাকলে তার জন্য অতিরিক্ত নম্বর যোগ হবে।
প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী যারা কলেজে প্রবেশ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে তারা সেট দেয়। এই সেট/নেট জাতীয় পরীক্ষার জন্য কবে থেকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
অনেকে থার্ড সেমেস্টার পরীক্ষা দিয়েই পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু সেই সময় সিলেবাসের পড়া থাকে তাই পড়ার চাপ বেশি থাকে। এক্ষেত্রে সপ্তাহের কোনও একদিন পড়ার জন্য বেছে নিতে হবে। তারপর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে সেট/নেট-এর প্রস্তুতির জন্য সময় বাড়াতে হবে।
আচ্ছা অনেকেই এক বছর বাড়িতে বসে অন্য কোনও কিছু না করে নেট/সেট-এর প্রস্তুতি নেয়। আবার অনেকে ভাবে কেরিয়ারে একটা বছর নষ্ট করা মানে অনেক পিছিয়ে যাওয়া। কোনটা করা সঙ্গত?
আমার তো মনে হয় বারবার পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হওয়ার থেকে একবছর বসে ভালোভাবে পড়ে সিরিয়াসলি পরীক্ষা দেওয়াটা বেশি দরকার। এতে এক বছর কেরিয়ার থেকে হয়তো যাবে কিন্তু পড়ার টাইম বেশি পাওয়ার জন্য পড়াটাও ভালোভাবে হবে। বরং একবছর যদি মন দিয়ে পুরো সিলেবাস পড়ে নেওয়া যায় তাহলে তার পরের বছর কিছুদিনের জন্য ছোটখাটো কোনও চাকরিতে ঢুকলেও পরীক্ষার ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা হবে না। যেহেতু আগেই ভালোভাবে পড়া আছে তাই শুধু ভালো করে রিভাইস করে যেতে হবে।
সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই এমসিকিউ টেস্ট কি আদৌ ট্যালেন্টের নির্ধারণ হতে পারে?
ভাষা একটা ‘ওয়ে অব এক্সপ্রেশন থ্রু রাইটিং’। সেটা এমসিকিউ দিয়ে পরীক্ষা করা খুব কঠিন। আমারও মনে হয় সেটা ট্যালেন্টের যোগ্য মাপকাঠি হতে পারে না। তুলনায় ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ছোট প্রশ্ন কার্যকরী। তাতে সে কতটা বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়েছে সেটা বুঝতে পারা যায়।
এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এখানে প্রশ্ন শুধু ভালোভাবে খুঁটিয়ে পড়াটাই কী সব? নাকি আরও কিছু এক্স ফ্যাক্টর দরকার হয়?
যে বিষয় আপনি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাতে আপনার বেসিক জ্ঞান কতটা, সেটা খুব দরকার। আপনি প্রচুর পড়াশোনা করে গেলেন কিন্তু তাও একটা প্রশ্ন আনকমন হতেই পারে। সেটা আপনি আপনার আইকিউ দিয়ে কতটা সঠিক দিতে পারছেন তা খুব দরকারি। তাই সাবজেক্টে প্রাথমিক দখল থাকাটা খুব জরুরি। যেটা কলেজেই তৈরি হয়। নিজেকে প্রশ্ন করুন দরকার হলে, আপনি আপনার বিষয়টার প্রতি আদৌ প্যাশনেট কিনা?
আপনাকে যদি পাঁচটা কি-ওয়ার্ড জানাতে হয় ছাত্রদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আপনি কী কী বলবেন?
বিষয়ের প্রতি গভীর জ্ঞান, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, পরিশ্রম এবং ভালো করে প্রস্তুতি।
এই রকম পরীক্ষাগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় দু’বার বা তার থেকে বেশি অকৃতকার্য হলে ছাত্রদের মধ্যে একটা ডিপ্রেশন কাজ করে। কেউ কেউ অন্য কোনও লাইন বেছে নেয়, কেউ বা কেরিয়ারে ওখানেই ইতি ঘটায়। মনের সঙ্গে লড়াই করার উপায় কী?
হ্যাঁ, এটা আমার সামনেই অনেক ঘটতে দেখেছি। একবার না পেলে বা একটুখানির জন্য কাট অফ মিস করলে সে আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয় না। কিন্তু তার জন্য তাদের মন আরও শক্ত করতে হবে। দরকারে সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে বা কেরিয়ার কাউন্সেলিং করাতে হবে। উপায় যখন আছে চারপাশে সেই উপায়গুলিকে কাজে লাগাতে হবে। মাথায় রাখতে হবে চাকরির ক্ষেত্রেও এরকম ডিপ্রেশনের ঘটনা ঘটতে পারে।
নেট/সেটের সিলেবাস সমুদ্রের মতো। সেই সিলেবাস সবাই শেষ করে উঠতে পারে না। অনেকে বলে পুরো সিলেবাস কভার করা জরুরি আবার অনেকে বলে যেটুকু পড়ছ সেটা ভালোভাবে পড় যাতে সেখান থেকে যা প্রশ্ন আসে সেটার উত্তর করতে পারো। কোনটা ঠিক বা বেশি জরুরি?
যদি আপনি পুরোটা পড়ে মনে রাখতে পারেন সেটা করতে পারেন। কিন্তু পরীক্ষার কিছু কাল আগে প্রস্তুতির সময় যদি দেখেন এরকম কিছু অধ্যায় আছে যা আপনি একেবারেই পড়েননি, সেটাকে আর নতুন করে তৈরি না করে আমার মনে হয় যেটুকু পড়া আছে সেটুকুকেই কীভাবে আরও ভালো করে ঝালিয়ে নেওয়া যায় সেদিকে জোর দিতে হবে।
নেট/সেট একটি লম্বা সময়ের ব্যাপার। রিসার্চ করে সেটল হতে হতে ছাত্র ছাত্রীদের বয়স চলে যায়। আপনার কি মনে হয় কোথাও গিয়ে শিক্ষকতা শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সচ্ছল এমন কিছু মানুষের মধ্যে কুক্ষিগত?
সেটা বর্তমানের নিরিখে অনেকাংশে সত্যি। আবার পরিশ্রম করে পড়াশোনা করলে সেখানে অনেক রকমের স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সেটাও দরিদ্র ছাত্রদের কাজে দেয়।
সামনেই জানুয়ারিতে সেট আর ডিসেম্বরে নেট। আপনি কিছু পজিটিভ দিক বলুন যাতে এই দুই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পায়।
একটাই কথা বলব অনেক কিছু ড্র-ব্যাক থাকলেও একবার নেট/সেট পাস করলে সেটা একটা বড় সাফল্য। সামনে অনেকগুলো দরজা খুলে যাবে। তাই সামনের দিকে লক্ষ্য রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্যে স্থির থাকাটা জরুরি। ভালো ভাবে পড়লে সাফল্য আসবেই।
কৌশানী মিত্র
ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে