উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার অনুপ্রেরণা পান কার কাছে?
বাড়ির সাঙ্গীতিক পরিবেশের জন্য ছোট থেকেই গানবাজনা করতাম। বোধশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই আকৃষ্ট হতে থাকি রবীন্দ্রনাথের বাণী ও সুরে। নিজের অগোচরেই প্রবেশ করে ফেললাম রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে।
কত বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন?
ঊনিশ বছর বয়স থেকে আমি প্রথাগতভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতে শুরু করি।
শিক্ষাগুরু হিসাবে কাদের সান্নিধ্য পেয়েছেন?
রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহারবিন্দু সেন এবং শৈলজারঞ্জন মজুমদার।
কাকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়?
অবশ্যই শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে। কারণ তিনি ছিলেন সর্বগুণের অধিকারী।
সঙ্গীত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা কী?
আজ থেকে বহু বছর আগে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রমা চৌধুরীর আমন্ত্রণে শৈলজাদা ‘বর্ষার ষোলোটি গান’ নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে কবিগুরুর কাছ থেকে কীভাবে গানগুলি সংগ্রহ করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন আর আমাকে দিয়ে পরিবেশন করিয়েছিলেন সেই ষোলোটি গান। অনুষ্ঠানটি উচ্চ-প্রশংসিত হয়েছিল। শিক্ষার শুরুতেই তাঁর সান্নিধ্যে আসা ও প্রশংসা আজও অভিজ্ঞতার ভিড়ে স্মরণীয় হয়ে আছে।
‘আকাশবাণী’ ও ‘দূরদর্শনে’ কবে কাজ শুরু করেন?
১৯৭১ সালে আকাশবাণীতে ও ১৯৭৬ সালে দূরদর্শনে প্রথম অনুষ্ঠান করি।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা পদ্ধতি সম্বন্ধে আপনার মতামত সংক্ষেপে বলুন?
স্বরবোধ, সাহিত্যবোধ, পরিমিতি বোধ এবং উপযুক্ত শিক্ষকের কাছে শিক্ষাগ্রহণ— এগুলিই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষাপদ্ধতির মূল বিষয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।
স্বরলিপি অনুসরণ করে গান গাইলে কী ভাবের অভাব ঘটে?
স্বরবিতানে বিধৃত স্বরলিপির অন্তর্গত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম স্বরগুলি ও সাংকেতিক চিহ্নগুলি গায়কীর সহায়ক। এগুলি কণ্ঠে ধারণ করে সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাব যথেষ্টই পরিস্ফূট হয়। কিন্তু এই ধরনের গাইয়ে দুর্লভ। তাই উপযুক্ত শিক্ষকের কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করাই ভালো।
বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী, শিক্ষক ও শ্রোতা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
বর্তমান প্রজন্মে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু এই প্রজন্মের শিল্পীদের অধিকাংশই প্রচারসর্বস্ব, তাই উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে কিছুদিন পরে প্রচারে বিঘ্ন ঘটে। উপযুক্ত শিক্ষাপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ফলে যার অভাবে সম্ভাবনাময় শিল্পীরা ততটা উন্নতি করতে পারে না।
রবীন্দ্রসঙ্গীতে যে সমস্ত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় তা কী সঠিক?
রবীন্দ্রসঙ্গীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যতটা সীমিত রাখা যায় ততই ভালো। তানপুরা, এস্রাজ, বেহালা প্রভৃতি তারযন্ত্রের ব্যবহারই যথাযথ। উচ্চকিত যন্ত্রপাতির আওয়াজে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রকৃতভাবটি পরিস্ফূট হয় না।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার জন্য কী কী বিষয়ে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন?
‘কণ্ঠসাধনা, স্বরবোধ, বাণীর অন্তর্নিহিত ভাব উপলব্ধি করার অর্থাৎ সাহিত্যবোধ’— উপরোক্ত বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া।
সর্বভারতীয় স্তরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঠিক প্রচার কী উপায়ে করা যায়?
রবীন্দ্রসঙ্গীত একমাত্র বাংলা ভাষাভাষীর সঙ্গীত। যেহেতু রবীন্দ্রসঙ্গীত ভাষাপ্রধান, ভারতে প্রায় সমস্ত জায়গায় বাঙালির বসবাস। প্রবাসী বাঙালিরা উদ্যোগী হয়ে অবাঙালিদের বাংলাভাষায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলা ভাষা শিখিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহী করার প্রচেষ্টা করতে পারেন। আর যিনি প্রবাসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাবেন অবশ্যই তাঁকে সুশিক্ষক হতে হবে। এভাবেই সর্বভারতীয় স্তরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঠিক প্রচার সম্ভব।
‘চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত’— সম্বন্ধে আপনার বক্তব্য কী?
পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যদি চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রয়োগ করা যায় তবে আপত্তির কারণ নেই। তবে এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুর যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।