গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
ভেরিকোজ ভেন কী? এই অসুখের লক্ষণগুলি কী কী?
সহজভাবে বললে, ভেরিকোজ ভেইন হল এমন একটি শিরাজনিত অসুখ যে রোগে পায়ের শিরাগুলি ফুলে যায়। আসলে শিরার কাজ হল পায়ের নীচের দিক থেকে রক্ত হার্টে ফেরত পাঠানো। যদি কোনও কারণে হার্টে রক্ত ফেরত না যায়, তাহলে ভেইনগুলো ফুলে ফুলে ওঠে। এই বিষয়টাকে বলা হয় ভেরিকোজ ভেইন।
লক্ষণ কী?
একেবারে প্রাথমিক স্তরে কিছু লক্ষণ থাকে। সেগুলি হল— কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে পায়ে ব্যথা হয়। সারাদিন কাজকর্ম শেষে সন্ধ্যার দিকে পা একটু ফুলে ফুলে যায়। ছোট্ট ছোট্ট দু’একটা কালচে বা লালচে শিরা পায়ের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। এই হল একদম প্রাথমিক স্তরের লক্ষণ। তার পরের স্তরের দেখা যায় শিরাগুলো ফুলে গিয়েছে ও কাফ মাসলে ব্যথা হচ্ছে। সমস্যা হল পরিস্থিতি এতখানি খারাপ হওয়ার পরে কিছু কিছু মানুষের হুঁশ ফেরে। রোগী সচেতন হন ও তারপরে চিকিত্সকের কাছে যান। অথচ একেবারে প্রাথমিক স্তরেই রোগী চিকিত্সকের পরামর্শ নিলে বরং বেশি ভালো থাকেন।
একেবারে প্রাথমিক স্তরে চিকিত্সকের পরামর্শ নিলে কী কী সুবিধা?
যে কোনও অসুখের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্তরে চিকিত্সকের পরামর্শ নিলে সুবিধা। ভেরিকোজ ভেইনের ক্ষেত্রেও তাই। তাছাড়া অসুখটি চেনাও খুব সোজা। চিকিত্সক সহজেই রোগটি চিহ্নিত করতে পারেন। তবে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য দরকার ডপলার স্টাডি। বিষয়টি জটিল কিছু নয়। পেটে যেমন আলট্রাসোনোগ্রাফি হয়, তেমনভাবেই বিষয়টি হল পায়ের শিরার আলট্রাসোনোগ্রাফি। সমস্যাটি যদি একদম প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ে তাহলে চিকিত্সা হল দু’একটা ওষুধ এবং কম্প্রেশন গারমেন্ট পরা। কম্প্রেশন গারমেন্ট বলতে বিশেষ ধরনের মোজার কথা বলা হচ্ছে। এই মোজা পরলেই সমস্যার অনেকখানি সমাধান সম্ভব। অন্তত পরবর্তী পর্যায়ে রোগের অগ্রগতি প্রতিরোধ করা যাবে। তবে সমস্যা পরের স্টেজে পৌঁছে গেলে তখন অপারেশন করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। অবশ্য পরবর্তী পর্যায়েও কম্প্রেশন গারমেন্ট উপসর্গের উপশমে অনেকখানি সাহায্য করে।
আমি শুনেছি অনেকের নাকি একসময় শিরা ফেটে যায়। শিরা থেকে রক্ত বেরতে থাকে। কটু গন্ধ বেরয়?
শিরা ফেটে রক্ত বেরল, ফেটে গেল এবং ঘা হল— এমন অবস্থার অর্থ হল রোগী তাঁর শারীরিক পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অবহেলা করেছেন। এমন অবস্থায় শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অর্থাত্ ঘা সারল না, তারপর সেই ত্বকের ঘা ও সংক্রমণ শেষ পর্যন্ত পেশি এবং তারপর হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। যদি হাড় পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় তাহলে পা বাঁচানোটায় মুশকিল হয়ে যেতে পারে। তাই আমার পরামর্শ হল, যখনই কারও এমন সমস্যা হবে তখনই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। খুব প্রাথমিক দিকে রোগ ধরা পড়লে শুধু মোজা পরে কিছু নিয়ম মেনে সমস্যাটির সমাধান করা সম্ভব।
চিকিত্সা না করালে, প্রাথমিক অবস্থা থেকে রোগ খুব জটিল অবস্থায় পৌঁছাতে কতদিন সময় লেগে যেতে পারে?
প্রাথমিক অবস্থা থেকে পায়ের শিরা খুব বেশি মাত্রায় ফুলে যেতে সময় লাগতে পারে ৬ মাস থেকে ১ বছর। এরপর কত দ্রুত সমস্যাটি ফোলা থেকে ফেটে যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছাবে তা অনেকখানি নির্ভর করে রোগীর শারীরিক গঠন ও অন্যান্য কাজকর্মের উপর। তাও সাধারণভাবে বলা যায়, কমবেশি ১ বছর সময় লেগেই যায়। মনে রাখবেন সঠিক সময়ে চিকিত্সা না হলে ভেনাস গ্যাংগ্রিন হতে পারে এবং খুব খারাপ পরিস্থিতিতে পা কেটে বাদও দিতে হতে পারে।
কাদের এই ধরনের সমস্যা বেশি হয় বা কোন জনগোষ্ঠীর লোকের এই ধরনের অসুখ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
এই অসুখটি সাধারণত সেইসমস্ত লোকেদের বেশি হয় যাঁদের পেশাগত কারণে বা অন্য কোনও কারণে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। উদাহরণ হিসেবে স্কুল কলেজের শিক্ষক, পুলিশ, আর্মি, হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন ও ফ্রন্ট ডেস্কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এমন ব্যক্তি, এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত যেমন এয়ারহোস্টেস, গ্রাউন্ড স্টাফদের কথা বলা যায়। অসুখ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও লিঙ্গভেদ নেই। পুরুষ বা মহিলা যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
অন্য কোনও অসুখ থাকলে কি এই রোগ বেশি হতে পারে?
অন্য কোনও অসুখের সঙ্গে এই সমস্যার সরাসরি কোনও সংযোগ এখনও মেলেনি। তবে দেখা গিয়েছে যাঁদের ভেরিকোজ ভেইন আছে তাঁদের অনেকেই স্থূলত্ব কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া ভেরিকোজ ভেইনে আক্রান্ত বহু রোগীই যে ধূমপায়ী তাও নজরে এসেছে।
পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন অপারেশন করার কথা বলছিলেন। কোন ধরনের অপারেশন করা হয়?
এন্ডোভাসকুলার অপারেশন করে সমস্যার সমাধান সম্ভব। অত্যন্ত উন্নত এই ধরনের অপারেশন সম্পূর্ণ লোক্যাল অ্যানাস্থেশিয়ায় করা হয়। রোগী যেদিন অপারেশন করেন সেদিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। এই অপারেশনে পায়ে স্যালাইনের দেওয়ার মতো একটা চ্যানেল করা হয়। এরপর বাকি প্রক্রিয়া ওই চ্যানেলের মধ্যে দিয়েই করা হয়। রোগী ৭-১০ দিন পর আর অপারেশনের জায়গাটি খুঁজে পান না। সুতরাং অসুখটির চিকিৎসা আছে। তবে অবহেলা করলে রোগটি প্রাণঘাতী হতে পারে। অতএব সচেতন হন। চিকিৎসা করান ভালো থাকুন।