গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
মাছ যে পুকুর বা নদীর জলে থাকে, সেই জলে কিন্তু নানা রাসায়নিক মিশে রয়েছে। প্লাস্টিক রয়েছে, রয়েছে ভারী ধাতুর কম্পাউন্ড। এইসব রাসায়নিক কিন্তু মাছের শরীরেও মিশে যাচ্ছে। তারপর? তারপর আপনি যখন সেই মাছ খাচ্ছেন, তখন সেই ভারী ধাতু মিশে যাচ্ছে আপনার রক্তে। এর মধ্যে রয়েছে পারদের মত ভয়ঙ্কর বিষাক্ত এলিমেন্টও। রোজ একটু একটু করে এভাবে শরীরে যদি বিষাক্ত ধাতু ঢুকতে থাকে, তাহলে কিন্তু একসময়ে তার ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেবেই।
প্রশ্ন হল, কোন মাছ খারাপ? আমেরিকায় যেমন দু’টি বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে, ১) বিশেষ কিছু এলাকা, যেখানে জলে দূষণ বেশি; আর দুই নম্বর হল বিশেষ কিছু মানুষ, যাঁদের এরকম বিষক্রিয়া হলে ক্ষতি বেশি, উদাহরণ গর্ভবতী মহিলা। কিন্তু আমাদের এখানে এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশান এজেন্সি থেকে এরকম কোন সতর্কতামূলক নির্দেশিকার অস্তিত্ব নেই। এখানে দায়িত্ব উপভোক্তার নিজের।
প্রথমেই একটা কথা বলে নেওয়া দরকার। সেটা হল, মাছের খাদ্যগুণ কিন্তু আমি অস্বীকার করছি না। মাছে রয়েছে অত্যন্ত উচ্চ বায়োজিক্যাল ভ্যালুর প্রোটিন। এটা শিশু থেকে বয়স্ক, সবার জন্য উপকারী। এছাড়া রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, রয়েছে আয়রন। এগুলো পুষ্টির জন্য দরকারি। কিন্তু এর সাথেই তো আবার রয়েছে মার্কারি। ফলে একটু ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। আমেরিকার সরকারি দপ্তর থেকে যেমন কিছু মাছের কথা বলা হয়েছে, যেগুলির মধ্যে পারদের যৌগ বেশি কেন্দ্রীভূত হয়। এইসব মাছ বেশি না খাওয়াই ভালো। যেমন, কিং ম্যাকারেল, টুনা, মার্লিন মাছ ইত্যাদি। এগুলোর সবার বাংলা নাম নেই, কারণ সব মাছ আমাদের এখানে পাওয়া যায় না। ম্যাকারেল যেমন বাংলায় বলে আয়লা মাছ বা কাজল গৌরি মাছ। এই মাছের দেহে পারদ বেশি করে জমে থাকতে পারে। ফলে এই মাছ বেশি খাওয়া ভালো নয়। প্রশ্ন হল, বেশি মানে কী? বৈজ্ঞানিক তথ্য বলছে যে একদম শিশুদের, মানে যাদের বয়স তিন বছরের নীচে, তাদের এরকম মাছ দিনে ২৮—৩০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। আর খুব ভালো হয় যদি শিশুদের এরকম মাছ একদম না দেওয়া হয়।
তাহলে নিরাপদ মাছ কোনটা? আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, বাটারফিশ, কড, হ্যাডক, হেরিং, সার্ডিন (খয়রা) ইত্যাদি মাছ নিরাপদ। তাও ওদের বৈজ্ঞানিকরা বলছেন যে সপ্তাহে ২—৩ বারের বেশি নয়, বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। ইংল্যান্ডের খাদ্য দপ্তর আবার এর থেকেও বেশি সাবধানী। এদের মতে, যে সব মাছে তেল বেশি, সেইসব মাছ, বিশেষত মহিলাদের, সপ্তাহে দুবারের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাছের তেলে অনেক বিষাক্ত যৌগ দ্রবীভূত হয়ে থাকতে পারে। যে সব মহিলা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছেন, তারা এইসব মাছ বেশি খেলে কিন্তু গর্ভাবস্থায় সমস্যা হতে পারে। ফলে যারা সন্তানধারনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের তেলযুক্ত মাছ বর্জন করলেই ভালো। আবার এরা এটাও বলছেন যে ১৬ বছরের নীচে যাদের বয়স, তাদের সামুদ্রিক মাছ বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এইসব সামুদ্রিক মাছে পারদ থাকতে পারে এবং তার থেকে বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেইনের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
শেষ কথা হল, ভারতের বাজারে যে সব মাছ পাওয়া যায়, তাদের থেকে বিপদ কতটা? এই নিয়ে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে একবার মুম্বইতে একটি সার্ভে করে দেখা গিয়েছিল যে সেখানকার পমফ্রটে মাছে অনেকটাই পারদের যৌগ রয়েছে। এর কোন নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। ধরুন, যে নদীর মোহানা থেকে মাছ ধরা হল, সেই নদীর পাশে অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। তাহলে সেই নদীর জলের মাছের বিষক্রিয়া বেশি হবে। সুতরাং আমাদের দেশে মাছ এবং জলজ প্রাণীর দেহের রাসায়নিকের পরিমাণ নিয়ে গবেষণা অবিলম্বে দরকার।