হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
উত্তর ভারতের এক রাজ্যের রাজা ছিলেন নরেন্দ্র দেব। খুবই দয়ালু রাজা। প্রজাদের আনন্দেই তাঁর খুশি। সেই রাজ্যের এক ছোট্ট গ্রামের জমিদার ছিলেন পুরনোপন্থী মানুষ। পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে প্রাণে। জমিদার মশাই তাঁর স্ত্রীকে বললেন পুত্র নাহলে যেন গ্রামে আর মুখ না দেখায়। এদিকে এমনই কপাল, হল কন্যা। জমিদারনি তখন ফন্দি আঁটলেন কন্যাকেই পুত্ররূপে বড় করবেন তিনি। কাকপক্ষীতেও টের পাবে না সে আসলে মেয়ে। এইভাবেই দিন কাটে। ক্রমশ ছেলেদের মতো ঘোড়া চালানো, তলোয়ার লড়াই, কুস্তি ইত্যাদি শিখতে শিখতে বড় হয়ে উঠল জমিদার কন্যা। পুত্র পরিচয়ে তার নাম হল বীরওয়ারা। বীরাঙ্গনা কন্যা যেমন ঘোড়া ছোটায়, তেমনই শিকারে পটু। আবার তলোয়ারের লড়াইতেও সে এক নম্বর। তাবড় বীর যোদ্ধাকেও সে হেলায় হারিয়ে দেয়। এহেন বীরওয়ারার মোলাকাত হল রাজার সঙ্গে। সন্ধ্যে নাগাদ এক গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছিল বীরওয়ারা। হঠাৎ একজন মানুষের আর্ত চিৎকার শুনে সেদিকে ঘোড়া ঘুরিয়ে দেখে স্বয়ং রাজামশাই সিংহের কবলে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তীর মেরে সিংহের মুখ আটকে দেয় বীরওয়ারা। আহত সিংহ শিকার ছেড়ে আর্তনাদ করতে করতে বনের ভেতর ঢুকে যায়। আর রাজামশাইকে নিজের ঘোড়ায় তুলে রাজমহলে পৌঁছে দেয় সাহসী বীরাঙ্গনা কন্যা। রাজা তো বেজায় খুশি। রাজপ্রাসাদে তার থাকার ব্যবস্থা করলেন। এদিকে রাজার ছোট বোনের এই বীর পুত্রকে ভারী মনে ধরল। সে তাকে বিয়ে করতে অস্থির। এবার তো বীরওয়ারা পড়ল মহা মুশকিলে। কীভাবে তার পরিচয় খুলে বলবে সে? রাজামশাই কি শাস্তি দেবেন সব জানাজানি হলে? তার বাবাই বা কী করবেন সব শুনে? জানার জন্য হাঁকপাঁক করছে মন? তাহলে আর দেরি কেন? ইউটিউবে স্টারমার্কের ‘কাহানি নানি’ ভিডিওটা চালিয়ে দাও। সব প্রশ্নের উত্তর নিমেষেই পেয়ে যাবে।
সেই কবে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার মশাই ঠাকুমাদের হাতে গল্পের ঝুলি ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তারপর থেকে যুগ যুগ ধরে ঠাকুমা শব্দটাই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। আর সেই ধারণা থেকেই বোধহয় কাহানি নানি-র অাবির্ভাব। তোমাদের মতো ছোট বাচ্চাদের জন্য মজাদার গল্প নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন এক ঠাকুমা বা ‘নানি’। অনুষ্ঠান প্রতি একটা করে গল্প তিনি শোনাচ্ছেন তাঁর প্রিয় নাতি নাতনিদের। গল্পের শেষে থাকছে ছোট্ট একটুকরো উপদেশ। আর গল্পের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলছে ছোটখাট হোমওয়ার্ক। হয়তো কোনও শব্দের মানে খুঁজে দেখতে বললেন নানি। অথবা গল্পের প্রসঙ্গ টেনেই অল্প একটু হোমওয়ার্ক দিলেন, এই আর কি।
গল্পগুলো শোনার মজা তো থাকছেই, পাশাপাশি গল্প বলার কায়দাও দেখার মতো। তবে তার চেয়েও বেশি গল্পকারের আকর্ষণ। ঠাকুমা বা দিদিমা বলতে চোখের ওপর যে বয়স্ক মুখ বা চেহারাটা ভাসে কাহানি নানি একেবারেই তেমন নন। বরং খুবই ফ্যাশন সচেতন সাজগোজ করা এক মহিলা। তাঁর কথা বলার ধরন, গল্প বলার কায়দা সব কিছুর মধ্যেই এক অমোঘ আকর্ষণ লুকিয়ে রয়েছে। গল্প যেমন এগিয়েছে তেমনই বদল হয়েছে কাহানি নানির বাচনভঙ্গি। কোথাও কান্না মিশিয়েছেন গলার স্বরে, কোথাও বা তেজ আর দৃপ্ত আওয়াজ ফুটিয়ে তুলেছেন। ঘোড়া ছুটিয়ে বীরওয়ারার জঙ্গল যাত্রার সময় এক অসম্ভব ভয় মিশ্রিত ব্যাকুলতা ফুটে উঠেছে কাহানি নানির গলায়। এইভাবেই গল্প এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। এবং সেই গল্পের টানে মন মজেছে কচিকাঁচাদের।
গোটা গল্পটাই সাবটাইটেল দেওয়া। বাচ্চাদের বোঝার সুবিধের জন্যই এই সাবটাইটেল। তবে সাবটাইটেলগুলোর প্রতি আর একটু যত্নবান হওয়া উচিত ছিল স্টারমার্ক সংস্থার। টুকরো টাকরা ভুল চোখে পড়ল সেখানে। বাচ্চাদের জন্য অনুষ্ঠান তো তাই আর একটু যত্ন নিলে বুঝি আরও ভালো হতো। তবে মোটের ওপর এই অনুষ্ঠান বাচ্চাদের অবশ্যই আকৃষ্ট করবে। বিশেষত লকডাউনের সময় বন্ধুবান্ধব, খেলাধুলো ছেড়ে বাচ্চারা যখন গৃহবন্দি দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে তখন কাহানি নানি-র গল্পের ঝুলি অবশ্যই তাদের জীবনে একরাশ খোলা হাওয়া বয়ে আনবে।