হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
আজ তোমাদের এমন কয়েকজন সাইবর্গের কথা বলব, যারা কোনও কল্পলোকে নয় বরং আমাদের সঙ্গেই বর্তমান এই পৃথিবীতে।
নিল হারবিশন পৃথিবীর প্রথম আইন স্বীকৃত সাইবর্গ। হারবিশন জন্ম থেকে ছিলেন বর্ণান্ধ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর মাথায় স্থাপন করা হয় একটি অ্যান্টেনা বা আইবর্গ। প্রযুক্তির কল্যাণে এই বিশেষ ইলেকট্রিক চোখ বা আইবর্গের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন রং বুঝতে পারেন শব্দতরঙ্গ আকারে। সাইবর্গের ব্যাপারে আশাবাদী হারবিশন গঠন করেছেন ‘সাইবর্গ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থাটি মানব শরীরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের কাজ করে।
ক্লডিয়া মিশেল একটি মোটর বাইক দুর্ঘটনায় তাঁর হাত চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলেন। উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় পরবর্তীকালে তাঁর শরীরে স্থাপন করা হয় এমন এক বায়োনিক হাত যা তাঁর দেহের নার্ভাস সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা সাইবর্গ, যিনি এই যান্ত্রিক হাতের সাহায্যে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে জলের বালতি বহন করা পর্যন্ত গৃহস্থালির অনেক কাজই করতে পারেন।
প্রথম বায়োনিক হাতযুক্ত সাইবর্গ জেসি সুলিভান। ক্লডিয়ার মতো তিনিও একটি দুর্ঘটনায় তাঁর দুটি হাতই হারিয়েছিলেন। তাঁর রোবটিক হাত দু’টিকে তিনি মস্তিষ্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাঁর যান্ত্রিক হাত দুটির বিশেষত্ব হল, কোনও জিনিস মুঠো করে ধরলে কত জোরে চাপ দিয়ে তিনি ধরেছেন, সেটাও বুঝতে পারেন।
স্টেলার্ক একজন পারফরম্যান্স আর্টিস্ট। তোমরা শুনলে অবাক হয়ে যাবে, স্টেলার্কের তিনটি কান আছে। ভাবছ এও আবার হয় নাকি! বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির দৌলতে আজ অনেক অসম্ভবই যে সম্ভব হয়েছে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ স্টেলিউস আর্কাডিও। যাকে আমরা স্টেলার্ক নামে জানি। তিনি তাঁর বাহুতে একটি কান প্রতিস্থাপন করেছেন। এই কানটি একটি রিমোট লিসেনিং ডিভাইস। এই ডিভাইসটির সাহায্যে বিভিন্ন জায়গার মানুষ স্টেলার্ককে শুনতে পান। প্রতিস্থাপিত কানের মধ্যে ছোট একটি মাইক্রোফোন বসানো আছে। এই মাইক্রোফোনটি হটস্পটের মাধ্যমে ওয়াইফাইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। ফলে শ্রোতারা সবসময়ই তাঁদের ইচ্ছেমতো এই শিল্পীর কণ্ঠ শুনতে পান।
ম্যানেল মুউজ বার্সেলোনাতে অবস্থানকারী কাতালান সাইবর্গ শিল্পী। তিনি নিজের দেহে ব্যারোমেট্রিক সেন্সর ইনস্টল করার জন্য পরিচিত। এই সেন্সরগুলি তাঁকে তাঁর খুলিতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তন অনুভব করতে সাহায্য করে বিভিন্ন গতিতে বিটের মাধ্যমে। ফলে তিনি যে পরিবর্তনগুলো অনুভব করছেন, তার ওপর নির্ভর করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন। তার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও অনুভব করতে পারেন, তিনি কোন উচ্চতায় অবস্থান করছেন।
কেভিন ওয়ারউইগ, ক্যাপ্টেন সাইবর্গ নামে পরিচিত। ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের এই প্রফেসর বিশ্বের সবচেয়ে সম্পূর্ণ সাইবর্গ হওয়ার প্রচেষ্টায় নিজেই নিজের পরীক্ষাগারের গিনিপিগ হয়েছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে মানব শরীরের সঙ্গে বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয় সংক্রান্ত পরীক্ষা তিনি নিজের শরীরেই করে চলেছেন। তিনি তাঁর বাহুতে এমন এক মাইক্রোচিপ লাগিয়েছেন, যার সাহায্যে তিনি নিজের ঘরের লাইট, ফ্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এমনকী নিজের শরীরকেও যুক্ত করতে পারেন ইন্টারনেটের সঙ্গে।
মাইকেল চোরোস্টের শ্রবণশক্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল রুবেলার কারণে। প্রাবন্ধিক, আমেরিকান বইয়ের লেখক ও পাবলিক স্পিকার মাইকেল ২০০১ সালে একটি ককলিয়ার ইমপ্লান্ট দিয়ে তাঁর শ্রবণক্ষমতা আংশিক পুনরুদ্ধার করেন। ২০০৭ সালে তাঁর অন্য একটি কানও স্থাপন করা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অভাবনীয় আবিষ্কারের কথা শুনে তোমরা নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হচ্ছ। কিন্তু একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, মানুষ আর প্রযুক্তি কিন্তু ভিন্ন। প্রযুক্তিকে সভ্যতার উন্নতিতে ব্যবহার করাটাই ভালো, না হলে এর ফল কিন্তু হিতে বিপরীতও হতে পারে।
সোমা চক্রবর্তী
তথ্য ও ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে