হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক আনন্দ করব
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে মুশকিল হল, এই করোনাকালে সব পার্বণকে আর মনের মতো করে উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, যেকোনও মুহূর্তে সংক্রমিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকছে। তাই মনটা একটু খারাপ বইকি। রাখিবন্ধন উৎসব মানে ভাই-বোনের অটুট ভালোবাসার বন্ধন। এদিন বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে তাদের দীর্ঘায়ু, সাফল্য ও সমৃদ্ধির কামনা করে। ভাইয়েরাও আদরের বোনের হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। আমরা সবাই জানি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে জাতিগত সম্প্রীতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাঁরই ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছি।
করোনা পরিস্থিতির জন্য এখনও স্কুল, কলেজ বন্ধ। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চলতে হচ্ছে। তাই গত বছরের মতো এবারও নিজের ইচ্ছে মতো বাড়ির বাইরে গিয়ে মনের মতো করে রাখিবন্ধন অনুষ্ঠান পালন করা সম্ভব নয়। আমরা তিন ভাই-বোন। সবাই মিলে ঠিক করেছি, গতবারের মতো এবারও কোভিড বিধি মেনে বাইরে না বেরিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখব। আজ আমরা প্রথমে দাদুভাই-আম্মার সামনে রাখি রেখে প্রণাম করব। তারপর পরস্পরের হাতে রাখি পরিয়ে দেব। সেই সঙ্গে প্রিয়জনদের হাতে তুলে দেব উপহার। যেহেতু করোনা পরিস্থিতি, তাই বাড়ির বাইরে কোথাও মধ্যাহ্ন ভোজনে যাব না। মা খুব ভালো রান্না করতে পারেন। তাই মায়ের হাতে তৈরি সুস্বাদু পঞ্চব্যঞ্জনে রসনা পরিতৃপ্ত করব সবাই মিলে। বিকেলের দিকে পড়াশুনোয় ইতি টেনে নাচ, গান ও আবৃত্তি পাঠের আসর বসবে। এতে পরিবারের সবাই অংশ নেবেন। এভাবে আজকের দিনটিকে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা করেছি।
সেন্ট স্টিফেনস স্কুল
আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। যেহেতু আমার নিজের কোনও বোন নেই, তাই প্রতিবছর আমি দিদুনের (মায়ের মা) কাছে গিয়ে রাখি পরি। দাদন-দিদুন-এর বাড়ি আমার বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের দূরে। তাই করোনা স্বাস্থ্য বিধি মেনে দিদুনের কাছে রাখি পরতে যেতে কোনও অসুবিধে নেই। রাখির দিন দিদুনের কাছে আমি অনেক উপহার পাই। গল্পের বই, খেলনা, আঁকার সরঞ্জাম আরও কত কী। এবারও তাই হবে। করোনা সংক্রমণের আগে পর্যন্ত প্রতিবছর আমরা সন্ধেবেলায় আইসক্রিম খেতাম। আর রাতে কোনও একটি রেস্তরাঁয় গিয়ে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করতাম। তবে এই নিয়ে পরপর দু’বছর হল আর কোথাও গিয়ে খাওয়াদাওয়া হচ্ছে না। এখন বাড়িতেই নানারকম রান্না করে খাওয়া-দাওয়া হয়। তবে ঘুরে বেড়ানোর মজাটা আর হয় না। যাই হোক, তবু এই করোনা পরিস্থিতিতে দিদুনের কাছে গিয়ে এবারও রাখিটা অন্তত পরতে পারছি—এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
তবে প্রতিবার স্কুলে যে মজাটা হতো, এবারও তার অভাব বোধ করি। আমরা স্কুলে নিজেরা রাখি তৈরির প্রতিযোগিতা করতাম। নিজের হাতে রাখি তৈরি যে কী মজার অভিজ্ঞতা তা বলে বোঝানোর নয়। আমি এমনিতেই ড্রয়িং ক্রাফট এগুলো করতে খুব ভালোবাসি। খুব উপভোগ করতাম। বন্ধুরা একে অপরকে রাখি পরাতাম। সবশেষে গুনে গুনে দেখতাম কে সবচেয়ে বেশি রাখে পেয়েছে। খুব মজা হতো।
দিল্লি ওয়ার্ল্ড পাবলিক স্কুল, কল্যাণী
আজকের রাখি বন্ধন মানে সম্প্রীতি আর মিলনের অঙ্গীকার হৃদয়ে নিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা। ঘরে থেকেই এবার উৎসবের উদযাপন। আমার ভাই নেই বোন আছে। বোনের আর মায়ের হাতে রাখি বেঁধে প্রতিবারের মতো এবারও এই উৎসব উদযাপন করব। নিজের হাতে এঁকে বেশ কয়েকটা রাখি বানিয়েছি। শিফনের সুতো বিনুনি করে তার রেশমি বাঁধন তৈরি করেছি। লাল, সবুজ, নীল, গোলাপি নানা রঙের রাখিগুলো যখন মা আর বোন হাতে পরবে তখন আমার মনটা খুশিতে ভরে যাবে। ও আরেকটা রাখিও বানিয়েছি গোলাপফুল দিয়ে আমার খুব প্রিয় মুমু দিদির জন্য। মাঝে একটা গোলাপ আর চারপাশে ছোট্ট ছোট্ট বেলকুঁড়ি দিয়ে দুটো মালার লাইন। আর নীল রেশম সুতো আলতো করে জড়িয়ে রাখবে কব্জিটা। খুব মানাবে দিদিকে। সেদিন পূর্ণিমাপুজোয় ঠাকুরের পুজো হবে বাড়িতে। পু্ষ্পান্ন আর পায়েস ভোগ। আমার মায়ের হাতের নারকোল বাটা মেখে সুগন্ধি চালের পোলাও দারুণ প্রসাদ। তবে দু’বছর ধরে করোনা সংক্রমণের জন্য আমরা সবাই কমবেশি কাতর। তাই এই উৎসবের আনন্দের মধ্যেও কোথাও যেন একটা সচেতনতার ঘণ্টা বাজতেই থাকে মনের মধ্যে। হে ঠাকুর এই পীড়ার পীড়ন যেন শেষ হয় আবার আমরা যেন সবাই সবার হাতে রাখি পরিয়ে গেয়ে উঠতে পারি ...‘বাঁধিনু যে রাখি পরানে তোমার, সে রাখি খুলোনা, ভুলো না’।
শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
‘রাখিবন্ধন মানে নয় সুতোর সমাহার,
রাখিবন্ধন মানে ভাই বোনের ভলোবাসার অঙ্গীকার।’
উপরিউক্ত কথাটি যথার্থ। রাখিবন্ধন হল মিলনের উৎসব। শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি পরিয়ে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করে। এই দিন ভাই এবং বোন উভয়ই পরস্পরকে রক্ষা করার দায়িত্বে আবদ্ধ হয়। সেই সঙ্গে ভাই-বোনরা একে অপরকে উপহার দিয়ে থাকে। ভাই বোনের সুন্দর সম্পর্কের প্রতীক এই রাখিবন্ধন উৎসব। এই বছর কোভিড সংক্রমণের কারণে আমরা গৃহবন্দি থাকায় অন্যান্য বছরের মতো এই উৎসব পালন করতে পারব না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাখিবন্ধন মানে কয়েকটি সুতোর বন্ধন নয়। তাই যে কেবল রাখি পরিয়ে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করা সম্ভব তা কিন্তু নয়। আমরা চাইলেই নিজেদের জিনিস ভাগ করে নিতে পারি ভাই-বোন সম আমাদের মালিকাকা কিংবা যিনি আমাদের টোটো করে স্কুলে নিয়ে যান তাঁদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। বেশি কিছু নয়, নিজের প্রিয় পেনটা অথবা নিজের চকোলেট না খেয়ে তাদের দিতেই তো পারি। এছাড়া, সামাজিক গণমাধ্যমের সুবিধায় আমরা সব ‘তুতো’ ভাই-বোনরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতেই পারি। এই ভাবেই পালন করা যেতে পারে এই বছর রাখিবন্ধন উৎসব। আশা করি, হয়তো আগামী বছর আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বেরতে সক্ষম হব। শুভ রাখিবন্ধন।
জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয়
রাখিবন্ধন মানে সার্বিক সম্প্রীতি-দিবস
শুধু বাঙালি জাতিই নয়, ভারতের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের ভাই ও বোনের মধ্যে সম্প্রীতি বন্ধন রক্ষার এক জাতীয় উৎসব হল রাখিবন্ধন। রাখি পূর্ণিমার দিন এই উৎসব পালিত হয়। এ হল ভাই ও বোনের চিরন্তন ভালোবাসার ও স্নেহের প্রতীক। ধর্মীয় ও সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে এই অনুষ্ঠান এখন সামাজিক ভাবে ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখিবন্ধনের মাধ্যমে সকল মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার কথা বলেছিলেন। সেদিন দুই বাংলার মানুষ এক হয়েছিলেন। সেই থেকে এই উৎসব সার্বিক সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজ বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। করোনার আবহে আমাদের জীবন বিপর্যস্ত। সব সময় সংক্রমিত হয়ে যাওয়ার ভয়। আজ যেন রাখির বদলে মাস্কের প্রয়োজন বেড়ে উঠেছে। সতর্কতা মেনে, এবারে তাই হাতে বানানো রাখি পরিয়ে এই দিনটি পালন করব। ইচ্ছে আছে, রাখি পরিয়ে দিয়ে উপহার হিসেবে একটি করে চারাগাছ যদি সবার হাতে তুলে দিতে পারি, খুব ভালো হবে। রাখি পূর্ণিমার মতো একটি সুন্দর দিন এভাবেই স্মরণীয় হয়ে উঠতে পারে।
শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
রাখি তৈরি করেছি চুমকি আর সুতো দিয়ে
দু’বছর আগে মনে পড়ে, রাখি পূর্ণিমার দিন বাড়িতে খুব মজা হয়েছিল। হইচই। অনেক লোক। দাদা-দিদি আত্মীয়রা সব এসেছেন। মা, বাবা পুজোর কাজে ব্যস্ত। মা পায়েসের বাটিটা ঠাকুরের সামনে রেখেছেন, আর আমার ছোট্ট বোন দিথি সেখান থেকে পায়েস খেতে শুরু করেছে। আমি সারাদিন দিদিদের সঙ্গে খেলা করেছি, গল্প করেছি। হঠাৎ যেন মনে হল, সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সব হইচই থেমে গেল। চারপাশে আনন্দ মুছে গিয়ে অন্ধকার নেমে এল। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে সব বদলে গেল। মনে হল যেন স্বপ্ন দেখছিলাম। তখন মায়ের কাছে বায়না করে রাখি কিনতাম। স্কুলে যেতাম। সারদা মায়ের ছবির সামনে রাখি রাখতাম। বন্ধুদের আর দিদিদের হাতে রাখি পরিয়ে দিতাম। বাড়িতে পুজো হতো খুব ঘটা করে। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়রা আসতেন। খুব মজা হতো। এইবার বাড়ির পুজো হবে, তবে ছোট করে। চুমকি আর সুতো দিয়ে বাড়িতেই রাখি বানিয়ে নেব এবার। বাড়ির ঠাকুরকে দেব সেই রাখি। আমার বোনকেও রাখি পরিয়ে দেব। না হলে ও বায়না করবে জানি। বন্ধুদের দু’ একজনের হাতেও রাখি পরিয়ে দেব। রাখি পূর্ণিমার মতো সুন্দর একটি দিনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি সবার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক। সবার মুখে হাসি ফুটুক।
রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুল