শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
ড্রাইভারহীন গাড়ি
কী কাণ্ড! মা আর বাবা দুজনেই গাড়ি নিয়ে অফিসে কাজ করতে বেরিয়ে গেছে! এবার কী হবে। স্কুলে কে দিয়ে আসবে তোমাকে? কোনও চিন্তা নেই। বাবা অফিসে পৌঁছেই গাড়িকে আদেশ দিলেন, যাও বাড়ি ফিরে গিয়ে ঘোঁতনকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে এসো। অমনি ব্যাটারিচালিত গাড়িও চলে এল বাড়ির সামনে। তুমিও ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে উঠে পড়লে। আর গাড়িও চলে গেল স্কুলে! আরও মজার ব্যাপার হল গাড়িতে কোনও ড্রাইভারই ছিল না!
ভাবছ এ আবার কী কথা? চালক ছাড়া গাড়ি চলে নাকি? এ কি জুরাসিক ওয়ার্ল্ড সিনেমা নাকি? গোল আচারের বয়ামের মতো গাড়িতে বসতেই হুশ করে গাড়ি ছুটে যাবে ড্রাইভার ছাড়াই! আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এমনটাই হতে চলেছে একশো বছরের মধ্যে। অন্তত বিজ্ঞানীরা তাই বলছেন। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চালালে কোনও দুর্ঘটনাও ঘটবে না। কেন? কারণ, গাড়ির সামনে আর পিছনে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। ফলে তোমার গাড়ির খুব কাছে অন্য গাড়ি চলে এসেছে কি না তা আগেই জানা যাবে। তাই ধাক্কা লাগার আগেই তোমার গাড়ি ব্রেক কষে দেবে। দরকার পড়লে পাশ কাটিয়ে এগিয়েও যেতে পারে। শুধু তাই নয়, ধরো স্কুল থেকে বেরলে। তারপর তোমার মনে হল, একটু মামার বাড়ি ঘুরে আসি। দিদার হাতে অনেকদিন পায়েস খাওয়া হয়নি। কিন্তু তোমার স্কুল হল শ্যামবাজারে। আর মামার বাড়ি সেই বারুইপুরে। দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার! ঠিকানা জানো, কিন্তু রাস্তা চেনা নেই! কোনও চিন্তা নেই। শুধু গাড়িতে উঠে জোরে জোরে মামার বাড়ির ঠিকানা বলে দাও গাড়িকে। আর গাড়িও জো হুজুর বলে তোমাকে পৌঁছে দেবে মামার বাড়ির দরজায়। কী করে? গাড়িতে আছে গুগল ম্যাপ। ইন্টারনেটের সাহায্যে তোমার মামার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে নেবে গাড়ি। আর কী! মামার বাড়ির সামনে পৌঁছে ঠক্ঠক্ করে দরজার কড়া নাড়লেই হল! কিন্তু কী আশ্চর্য, কড়া তুমি নাড়বে কেমন করে! মামার বাড়ির দরজা তো ৩০০ তলায়! বুঝতে পারলে না তো? আরে ২১০০ সালে কি এখনকার মতো বাড়িঘর থাকবে! গাড়ি বদলে যাচ্ছে আর বাড়ি বদলাবে না?
মেঘের ওপর বাড়ি
চারিদিকে কেমন লোকসংখ্যা বেড়েছে খেয়াল করেছো কি? এত মানুষ, তাদের থাকার জন্যও তো জায়গার দরকার। তাই জন্য ঠিক একশো বছর পরে আর ছোটখাট বাড়ি তৈরি হবে না। সমস্ত বাড়ি হবে আকাশছোঁয়া। পাঁচশো তলা
বাড়ি তৈরি হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই! অতএব তখন তোমার মামার বাড়ি ৩০০ তলায় হতেই পারে। শুধু কী তাই! সেই বাড়ির ঝুল বারান্দায় আবার মাঝেমধ্যে মেঘও আটকে যাবে! তখন? আর কী। বাড়ির কাজ করা রোবটকে আদেশ দেবে— ‘রোবু, যাও তো আঁকশি দিয়ে মেঘটা একটু সরিয়ে দাও। মেঘ এসে আমার দাদুর পাঞ্জাবিটা এক্কেরে ভিজিয়ে দিল গো!’ ওমনি রোবট এসে মেঘ সরিয়ে দেবে! অবাক হলে নাকি!
রোবট বড় কাজের লোক
আজ্ঞে হ্যাঁ। শত বছর পরে নিজের থেকে কোনও কাজই করতে হবে না। সব রোবট এসে করে দেবে। এই যে তুমি রাতের বেলা মশারি টাঙাতে পারো না! তাতে কী! রোবট এসে তোমার মশারি টাঙিয়ে দেবে। কী যে আনন্দ! তারপর ঘর মুছে দেওয়া, নুডলস তৈরি করা সবকিছুই রোবটই করবে! শুধু কী তাই? দরকার পড়লে তোমার সঙ্গে ব্যাডমিন্টনও খেলতে পারবে রোবট! আর তুমি তো এখন মামার বাড়িতে। সেখানে তো সব ছাড়। কেউ বকবে না। যতক্ষণ খুশি খেলবে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল! ওমা! খেলতে-খেলতে ক্লান্ত? একটু টিভি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে? কোনও চিন্তা নেই। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে শুধু বলো— ‘আমাকে একটু কার্টুন চ্যানেলটা দেখাও দেখি!’
দেওয়াল জোড়া টেলিভিশন
সারা দেওয়াল জুড়ে টেলিভিশন! ঠিক এমনটাই হতে চলেছে একশো বছর পর। শুধু দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে, দেওয়ালই হয়ে যাবে টিভির পর্দা! কী যে মজা। শুধু কী তাই! রিমোটের দরকারও পড়বে না। শুধু মুখে মুখে নাম বললেই চ্যানেল বদলে যাবে। সে না হয় হল! অনেকক্ষণ মামার বাড়িতে এসেছো! বাড়িতে যে বলা হয়নি সেটা খেয়াল আছে কি! এবার তো বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে? বাড়ির কথা মনে পড়তেই তুমি কী করলে? ডান হাতের কব্জির উপর দু’বার আঙুল দিয়ে টোকা দিলে। ওমনি ডান হাতের তালুতে আলো জ্বলে উঠল। ঠিক যেন একটা মোবাইলের স্ক্রিন। মুখের কাছে হাতটা নিয়ে এসে বললে— ‘কল মা’। অমনি মায়ের কাছে ফোন চলে গেল! মা বলল
— ‘হ্যালো’।
— মা, এখন আমি মামার বাড়িতে আছি।
—আচ্ছা। জলদি বাড়ি ফিরে এসো। আমরা আগামীকাল আন্টার্কটিকা যাব! বেড়াতে। আজ রাতেই গোছগাছ করে নিতে হবে। সকালেই সাগরের নীচের ট্রেন ধরব। দু’ঘণ্টায় পৌঁছে যাব সেখানে। তুমি এখন মনে মনে ভাবছ আন্টার্কটিকায় মানুষ থাকতে পারে না! কীভাবে যাব? তাও আবার দু’ঘণ্টায়! তাও আবার ট্রেনে! সেই ট্রেন নাকি সমুদ্রের নীচে দিয়ে যাবে! এমনও হয়?
সমুদ্রের তলায় ট্রেন
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন একশো বছরের মধ্যেই শব্দের চাইতেও দ্রুতগামী ট্রেন চলে আসবে। সেই ট্রেন চলবে সমুদ্রের তলা দিয়ে। সাগরের নীচে বড় বড় টানেল করা হবে। যেমনটি করা হচ্ছে হাওড়া থেকে কলকাতা আসার জন্য মেট্রো ট্রেনের ক্ষেত্রে। গঙ্গার নীচ দিয়ে খোঁড়া হয়েছে টানেল। সেইরকম টানেল তৈরি করা হবে সমুদ্রের জলের মধ্যে। তবে এই টানেলগুলি হবে স্বচ্ছ। ফলে ট্রেনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে তুমি দেখবে জলের মধ্যে তিমি, হাঙর আর কত নাম না জানা রঙিন মাছ! সে না হয় হল! কিন্তু এখন তো বাড়ি ফিরতে হবে? মজার ব্যাপার হল তোমার বাড়ি তো আবার সমুদ্রের তলায়! আবার অবাক হলে? আরে, পাঁচশো তলা বাড়ি হতে পারে আর তোমার বাড়ি সমুদ্রের তলায় হতে পারে না! তাছাড়া তোমরা নিশ্চয়ই জানো, সারা বিশ্বেই গরম বড্ড বেড়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা অরণ্য ধ্বংস করে ফেলেছি। গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে। এছাড়া অসংখ্য পেট্রোলচালিত গাড়ি চলছে রাস্তায়। তার উপর কলকারখানার ধোঁয়াধুলো তো আছেই। এই সব কারণে সারা পৃথিবীতেই উষ্ণতা বাড়তে শুরু করেছে। উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর বরফ গলছে হুহু করে। বরফ গলা জল এসে জমছে সমুদ্রে। আর সমুদ্রের জলতলও বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আগামী একশো বছরের মধ্যে বহু দ্বীপ সমুদ্রের তলায় ডুবে যাবে। ডাঙার পরিমাণ কমতে থাকবে! তাই একশো বছর পরে, জলের নীচেই বাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করতে হবে মানুষকে! আর ঠান্ডা খুঁজতে বেড়াতে যেতে হবে আন্টার্কটিকায়!