শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
কম্পিউটার কোর্স
আজকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। তাই প্রথমেই বলি কম্পিউটার শেখার কোর্সের কথা। যারা মাধ্যমিক দিয়েছে তাদের কথা ভেবে বিভিন্ন সংস্থা তিনমাসের একটি কোর্স করিয়ে থাকে। এই কোর্সটি হল কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড ইন্টারনেট। তবে কম্পিউটার না জানা থাকলে ভর্তি হতে হবে বেসিক কোর্সে। বিভিন্ন সংস্থা এই স্বল্পমেয়াদি কোর্স করিয়ে থাকে। এই কোর্সের নাম সার্টিফিকেট ইন কম্পিউটার বেসিক। সাধারণত এই কোর্সের মেয়াদ ২ মাস হয়ে থাকে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এক থেকে দেড় ঘণ্টার ক্লাস করানো হয়ে থাকে। আবার সার্টিফিকেট ইন কম্পিউটার কনসেপ্ট নামে ৪ মাসেরও একটি কোর্স রয়েছে মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। যারা স্কুলে ইতিমধ্যেই কম্পিউটারের বেসিক কোর্স করে ফেলেছ তাদের জন্যও বেশকিছু স্বল্পমেয়াদি কোর্স রয়েছে। যদি সৃষ্টিশীল কোনও কাজে আগ্রহী হও কিংবা অঙ্কনে পারদর্শী হও তবে তারা করতে পারো গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের সার্টিফিকেট কোর্স। এই কোর্সের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস হয়ে থাকে। তবে ৩ মাসেরও কোর্স রয়েছে। ওয়েব ডিজাইনিংয়ের সার্টিফিকেট কোর্সও করা যায়। মাইক্রোসফট অফিস বা এমএস অফিসেরও একটি স্বল্পমেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। এতে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, অ্যাক্সেস, পাওয়ার পয়েন্ট এসব শেখানো হয়ে থাকে। যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে জানা আছে তারা ভর্তি হতে পারে সার্টিফিকেট ইন জি ডব্লু বেসিক, সার্টিফিকেট ইন সি ল্যাঙ্গুয়েজ, সার্টিফিকেট ইন ফক্সপ্রো প্রোগ্রামিং, সার্টিফিকেট ইন ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড ইন্ট্রোডাকশন টু ওয়েবপেজ ডিজাইনিং কোর্সে। এছাড়া ভর্তি হওয়া যায় সার্টিফিকেট ইন ডেস্কটপ পাবলিশিং, সার্টিফিকেট ইন ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং কিংবা সার্টিফিকেট ইন হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং কোর্সে। এই কোর্সগুলির মেয়াদ ৬ মাস। আর যদি কম্পিউটার সারানোর কোনও কোর্স করতে হয় তবে ভর্তি হওয়া যায় সার্টিফিকেট ইন হার্ডওয়্যার রিপেয়ারিং অ্যান্ড মেন্টেন্যান্স কোর্সে। এক্ষেত্রে অবশ্য ইলেকট্রনিক্স স্পার্টস সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকলে ভালো হয়।
এই কোর্সের মেয়াদও ৬ মাস। রয়েছে মাল্টিমিডিয়ার বিভিন্ন কোর্স। স্মার্ট এক্সিকিউটিভ, পাওয়ার মিডিয়া, সার্টিফিকেট ইন ডিজিট্যাল আর্ট, ডিপ্লোমা ইন মাল্টিমিডিয়া প্রভৃতি কোর্স।
ভাষা শিক্ষা
কম্পিউটার শিখতে গেলে বা কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স করতে গেলে দরকার পড়ে ইংরেজি জানার। কারণ কোর্সগুলি সবই পড়ানো হয়ে থাকে ইংরেজিতে। আর কম্পিউটারে যাবতীয় কম্যান্ড বা নির্দেশ দিতেও ইংরেজি জানা জরুরি। সুতরাং ইংরেজি শেখারও প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া ইংরেজি জানলে দোভাষী সহ অন্যান্য অনেকরকম কাজ পাওয়ার আলাদা সুবিধা পাওয়া যায়। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই রয়েছে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। আবার ইংরেজি ছাড়াও যে ভাষাটিরও বিশ্বে কদর রয়েছে তা হল ফরাসি। এই ভাষাটিও শিখে রাখতে পারলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।
টাইপিং ও স্টেনোগ্রাফি
মাধ্যমিক দেওয়ার পর টাইপিং ও স্টেনোগ্রাফ শিখতে পারলেও তা ভবিষ্যতে কাজে দেয়। বিশেষ করে কম্পিউটারে কোনও কিছু লেখার ক্ষেত্রে টাইপিং জানলে তা দ্রুত করা যায়। টাইপিং ও স্টেনো শেখানোর জন্যও বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ৬ মাস থেকে এক বছর মেয়াদে তা শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
মোবাইল ফোন রিপেয়ারিং
বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর কোনও যন্ত্র তৈরি হলে তা বিগড়ে গেলে দরকার পড়ে সারানোর। সুতরাং মোবাইল ফোন রিপেয়ারিংয়ের কাজ জানলে বসে থাকতে হয় না। তিন থেকে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে মোবাইল সারানোর কাজ শুরু করা যায়। তাই শিখে রাখলে ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে দেয়।
প্যারামেডিক্যাল কোর্স
এখন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে কাজের জন্য প্যারামেডিকেল কোর্স করা লোকের প্রয়োজন হয়। প্যারামেডিক্যাল যে সব কোর্স করা যায় সেগুলি হল—১. প্যাথলজি, ২. এক্স রে-টেকনিশিয়ান, ৩. ইসিজি টেকনিশিয়ান, ৪. ফিজিওথেরাপি, ৫. হোম নার্সিং, ৬. ইলেকট্রো হোমিওপ্যাথি, ৭. আকুপাংচার, ৮. নেচারোপ্যাথি, ৯. রেইকি, ১০. ম্যাগনেটথেরাপি প্রভৃতি। এই কোর্সগুলি রেগুলার ও পোস্টাল দু’ভাবে করা যায়।
ফোটোগ্রাফি
জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে পারেন ফটোগ্রাফার। ফটোগ্রাফিকে নেশার পাশাপাশি পেশা করে তুলতে পারলে ক্ষতি কী? ফটোগ্রাফি শেখার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফোটোগ্রাফি সাধারণত দু’রকমের হয়ে থাকে।
১. স্টিল ফটোগ্রাফি বা স্থির চিত্র, ২. ভিডিও ফটোগ্রাফি। স্টিল ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও ফটোগ্রাফি দুটিতেই বিষয় অনুযায়ীই শেখার সুযোগ রয়েছে। যেমন ফ্যাশন ফটোগ্রাফি। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন মডেলের ফ্যাশনের ছবি তোলা শেখানো হয়ে থাকে। ফটোগ্রাফি শিখে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ ছাড়াও নিজস্ব স্টুডিও খুলে ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। ফটোগ্রাফির ৬ মাস থেকে ১ বছরের বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি কোর্স রয়েছে।
বিউটিশিয়ান কোর্স
কাউকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে দরকার পড়ে একজন দক্ষ বিউটিশিয়ানের। এখন ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনতে বা তা বজায় রাখতে কিংবা চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতেও বিউটিশিয়ানের শরণাপন্ন হতে হয়। তাই একজন দক্ষ বিউটিশিয়ান হতে পারলে তা রোজগারের সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া এই কোর্স করে নিজস্ব ব্যাবসা মানে বিউটি পার্লারও খুলে ফেলা যায়। কলকাতা তো বটেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও বিউটিশিয়ান হওয়ার নানারকম কোর্স রয়েছে। আবার স্কিন থেরাপি ও স্পা থেরাপি, হেয়ার স্টাইলিং, মেক আপ এগুলো নিয়ে স্পেশাল কোর্স করা যায়। এর মধ্যে যেমন ডিপ্লোমা কোর্স আছে তেমনি রয়েছে সার্টিফিকেট কোর্সও। সার্টিফিকেট কোর্সগুলিতে ভর্তি হতে গেলে সাধারণত অষ্টম শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক পাশ থাকলেই চলে।
সেলাই শেখা
সেলাই শিখতে যে সব কোর্স করা যায় তা সাধারণত অষ্টম শ্রেণী পাশ হলেই শুরু করা যায়। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফলপ্রকাশের মাঝে অবসর সময়েও তা শিখে রাখা যায়। আর যদি ভালো করে তা রপ্ত করা যায় কাজের সুযোগ মিলতে পারে। আবার নিজেও টেলারিংয়ের ব্যাবসা শুরু করতে পারেন। ছেলে বা মেয়েদের পোশাক তৈরি শেখা ছাড়াও উল বোনার প্রশিক্ষণও নেওয়া যায়। ঘরে বসে উল বোনার মেশিন কিনে তার সাহায্যে বিভিন্ন ডিজাইনের সোয়েটার বানিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়। যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়, সেই সংস্থাও অনেক সময় ব্যাবসার জন্য সহায়তা করে থাকে। অর্ডারও তাদের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
তত্ত্ব সাজানো
বিয়ের নানা রীতির মধ্যে তত্ত্ব পাঠানোও অন্যতম বলে ধরা হয়ে থাকে। এই তত্ত্ব সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়ে তাকে পেশা হিসাবে নিতে পারে। অনেকে এখন পেশাদারদের দিয়ে তত্ত্ব সাজিয়ে থাকেন। এই তত্ত্ব কীভাবে সাজাতে হবে ও কীরকম হলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে তার জন্যও রয়েছে কোর্স। সেই কোর্স করে তত্ত্ব সাজানোর ক্ষেত্রে নিজেকে পেশাদার হিসাবে গড়ে তোলা যায়।
পাটজাত পণ্য তৈরি
এখন পরিবেশ দূষণ এড়াতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বর্জন করা শুরু হয়েছে। তাই পাট বা ওই ধরনের সামগ্রী দিয়ে তৈরি ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকার পাটের সামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। সেজন্য পাটের ব্যাগ ও পাট থেকে তৈরি অন্যান্য সামগ্রীর কদর বাড়ছে। তাই পাট থেকে সুন্দর ব্যাগ কীভাবে তৈরি করা যায় তা শিখে নিতে পারলেও রোজগারের পথ খুলতে পারে। বাজারে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদা থাকায় বিক্রিও ভালো। বিশেষ করে বিভিন্ন মেলায় পাটজাত সামগ্রী বিক্রি আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশনার রিপেয়ারিং
আজকাল ঘরে ঘরে রেফ্রিজারেটর তো বটেই, এয়ারকন্ডিশন বা এসি মেশিন ব্যবহার করা হয়। যেকোনও আধুনিক অফিসে তো বটেই, এমনকী সাধারণ বাড়িতেও ঘর ঠান্ডা রাখতে এসি মেশিন ব্যবহার করার চল হয়েছে। আর কোনও মেশিন থাকলে তা খারাপ যেমন হতে পারে আবার তা ঠিকমতো যাতে চলে সেজন্য সার্ভিসিংয়েরও প্রয়োজন পড়ে। তাই রেফ্রিজারেটর ও এসি’র মেরামত ও সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখে নিতে পারলে পেশা হিসাবে তা নেওয়া যায়। আয়ও মন্দ হয় না। বিভিন্ন সংস্থায় অষ্টম শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক যোগ্যতায় এই কোর্স করা যেতে পারে।
বাটিক পেন্টিং
বাটিক পেন্টিং শিখতে গেলে আঁকার প্রাথমিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যারা আঁকতে পারে তারা এই পেন্টিংয়ের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। অনেকগুলি উপাদান দিয়ে কাপড়ের উপর ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা শেখানো হয় এই পেন্টিংয়ে। বেড কভার, কুশন কভার, টেবিল ক্লথ প্রভৃতিতে বাটিক পেন্টিং করে ভালো রোজগার করা যায়। এগুলির খুবই কদর রয়েছে।
সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টিং
বিশেষ পদ্ধতিতে এই প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে পলিথিনের কৌটো, কাচের গ্লাস থেকে শুরু করে ভিজিটিং কার্ড সবেতে ডিজাইন ও লেখা ফুটিয়ে তোলা হয় স্থায়ীভাবে। এই প্রিন্টিংও মাধ্যমিক যোগ্যতায় শেখা যায়। উল্লিখিত এই কোর্সগুলি ছাড়াও রয়েছে মৌমাছি প্রতিপালন, মাছ চাষ, ফুল ও ফলের চাষ, ফল ও সব্জি সংরক্ষণ, বুক বাইন্ডিং অ্যান্ড ফটো ফ্রেমিং, ল্যামিনেশন, আর্মেচার অ্যান্ড ট্রান্সফরমার ওয়ান্ডিং, মোটর মেকানিজম প্রভৃতি শেখার নানারকম কোর্স। গতানুগতিক চাকরির পথে না গিয়েও এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করেও নিজেকে পেশাদারি জীবনে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ রয়েছে। ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে