উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
মণ্ডলবাবুরা একটু আগেও ওঁর কথা আলোচনা করছিলেন। ‘ব্যাপারটা কী? লোকটি তো কখনও দেরি করেন না? এখনও পাত্তা নেই কেন?’
তারপরেই ওঁর মঞ্চে প্রবেশ। কোমরে হাত দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন।
বয়স্ক প্রেসিডেন্ট সাহেবের খুবই প্রিয় মানুষ। দু’জনে শলাপরামর্শ করেন রোজ, আবাসনের ভালো-মন্দ এইসব নিয়ে। অথচ আজ রেগে-মেগে একসা!
প্রেসিডেন্ট হতবাক।
‘বলি তোমার ফ্ল্যাটের সামনে কী ফেলেছে? ফেললে, কে ফেলেছে, তা তো বলবে? না বললে বুঝব কী করে?’
মিত্রবাবু বলে উঠলেন, ‘নিশ্চয়ই উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের আবর্জনা!’
মণ্ডল অনেক ভেবে বললেন, ‘আপনার কোনও শত্রু আছে কি?’
গায়েনবাবু এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন।
তিনিও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন—
‘বলি, মেনটেন্যান্সের টাকা ক্লিয়ার আছে? সেক্রেটারি সাহেব বোর্ডে নোটিস টাঙিয়ে দিয়েছেন। তিন মাস ডিউ হলেই কোনও সার্ভিস পাওয়া যাবে না। তাই হয়তো আপনার গারবেজ কেউ তোলেনি।’
ব্যানার্জিবাবু আরও খেপচুরিয়াস—
‘ফালতু বকবেন না তো? আমার ছেলে আমেরিকায় বিশাল চাকরি করে। বিশাল বাংলো। বছরে মাইনে পঞ্চাশ লক্ষ আর আমি নিজে এক্স-মিলিটারি অফিসার। আমার টাকা কে খায় তার ঠিক নেই। আর আমি মেনটেন্যান্সের টাকা দিইনি!’
প্রেসিডেন্ট মুচকি হেসে বলেন, ‘তোমার বাড়িতে নাকি থরে থরে বিদেশি সিঙ্গল মল্ট স্কচ আছে। রোজই বলো আমাদের খাওয়াবে! কিন্তু...’
‘সে সব পরে হবে’খন। কিন্তু আপনি আমার ব্যাপারটা বিহিত করবেন, প্লিজ? রিয়েলি আই অ্যাম ইন স্যুপ’
মিত্রবাবু মজা করেন, ‘তোমার গিন্নির হাতের গারলিক চিকেন স্যুপের নাকি হেভি টেস্ট! সেটাও জুটল না আমাদের।’
‘আরে বাবা! সেই স্যুপ আর এই স্যুপ এক নয়। রিয়েলি আই অ্যাম ইন বিগ ট্রাবল।’
‘আরে ধুর, সেটা কী তা তো বলবেন।’
‘বলতে দিচ্ছেন কোথায়?... শুনুন কে বা কারা যেন আমার ফ্ল্যাটের সামনে কার্তিক ঠাকুর ফেলে দিয়েছে। আমি তো প্রথমে বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা কী? গিন্নি তো আবার ঠাকুর-দেবতা বলতে অজ্ঞান। রোজ পঁচিশটা সন্দেশ লাগে প্রসাদ হিসেবে, পঁচিশটা ঠাকুরের জন্য। গিন্নিকে ডেকে দেখাতেই সে দু’বার প্রণাম করে বলে, আজ কার্তিক পুজো। ইস্ কী সুন্দর তাই না? এখন নাকি ওই ঠাকুরকে পুজো করতে হবে। আর এটাই নাকি নিয়ম! যার বাড়ির সামনে ঠাকুর ফেলবে তাকে পুজো করতেই হবে। এবার বলুন মটকা গরম হয় কি না।’
মণ্ডলবাবুর চোখ কপালে। ‘বলেন কী মশাই? শেষে আপনার ফ্ল্যাটে?’
‘এখন আপনার বয়স কত? এই বয়েসে—’
‘হ্যাঁ, সবে সাতান্নতে রিটায়ার করেছি। বাড়িতে থেকে থেকে একটু কুঁড়েও হয়ে গিয়েছি। আর এই বয়েসে এখন পুরুতের খোঁজ করতে হবে নাকি?’
‘কথাটা তা না। আপনার তো সোনার টুকরো ছেলে রয়েছে। তা সত্ত্বেও আপনার ফ্ল্যাটে কার্তিক ফেলল? ডেঁপোমির একটা লিমিট থাকা উচিত প্রেসিডেন্ট সাহেব। সত্যি এর একটা বিহিত করতে হবে। সাধারণত বিয়ের পর যাদের বাচ্চা-কাচ্চা না হয় তাদের বাড়িতে কার্তিক ফেলে। ব্যানার্জিবাবু তো আর তা নয়। তবে?’
প্রেসিডেন্ট সাহেব বললেন, ‘তবে আর কী ঠাকুরটি জলে ভাসিয়ে দাও। ল্যাটা চুকে যাবে। আমারও একই কেস হয়েছিল। বহুবছর আগে। বিয়ে করার ঠিক এক বছরের মাথায় পাড়ার ছোঁড়াগুলো দরজার সামনে কার্তিক ফেলে পালায়। আমার বাবা ছিলেন প্রচণ্ড রাসভারী লোক। বাবা তো খেপে লাল। শেষে বাড়ির কাজের লোককে দিয়ে পুকুরে ডুবিয়ে দিতে বললেন। মা দৌড়ে এসে বাধা দিলেন। এসব করলে নাকি পাপ হবে। শেষমেশ, পাড়ায় নাথবুড়িকে দিয়ে দিলেন। সঙ্গে টাকা। সে-ই পুজো আচ্চা যা করার করল। আর ছোঁড়াগুলো সাতজনের লিস্ট দিয়ে ঠাকুরটার গায়ে লটকে দিয়েছিল। এখনও নামগুলো মনে আছে ফচে, বাটুল, ভোম, কালু...। কি না তাদের পেটপুরে খাওয়াতে হবে! তারা আর ভয়ে বাবার সামনে আসেনি! পরে একদিন আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম। তারা প্রায় কেঁদে ফেলে। দাদা, কার্তিক কেনার দামটা অন্তত দিয়ে দিন। আমরা বেকার। কোনরকমে টাকাটা জোগাড় করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল পাতপেড়ে খাওয়া। বুঝলে, ব্যানার্জি ওঁদের সেই করুণ মুখ দেখে কেমন মায়া হয়েছিল। কিছু টাকা দিয়ে বলেছিলাম, যা একদিন মাংসভাত খেয়ে নিবি। সেই খুশি খুশি মুখগুলো কী আনন্দই না পেয়েছিল। তারাও হয়তো কত বুড়ো হয়ে গিয়েছে। পুরনো পাড়া ছেড়ে আসার পর আর যাওয়া হয়নি।’
মিত্রবাবু শুনে বললেন, ‘তা আপনাকে কোনও লিস্ট দিয়েছে?’
‘উহু! দিলে তো হয়েই যেত।’
‘কাউকে সন্দেহ করেন?’
‘মনে হচ্ছে মর্নিংওয়াক করা ছোকরাগুলো।’
‘যারা পুকুরপাড়ে বসে আড্ডা মারে?’
‘হুম! কিন্তু প্রমাণ তো কিছু নেই।’
গায়েনবাবু রামদেবের ফোঁস ফোঁস করা বন্ধ করে বললেন, ‘যান আগে সামনের মন্দিরে গিয়ে দেবু পুরোহিতকে খুঁজুন। ফস্কে গেলে সমস্যায় পড়ে যাবেন। বিশ্বকর্মা আর সরস্বতী পুজোর মতো আজও কিন্তু কার্তিক পুজোর ডিমান্ড আছে! এখন কোভিডের জন্য সব ব্যাটার ওয়ার্ক ফর্ম হোম। অফুরন্ত সময় হাতে। তাই বদমাইশি করে বেড়াচ্ছে। কানাঘুষো শুনছি, এবারে নাকি টার্গেট বয়স্করা।’
ব্যানার্জি হন হন করে হাঁটা লাগালেন। আঙুল তুলে বলে গেলেন, ‘তবে আমি কিন্তু খুঁজে বের করবই। যে লোক শত্রুপক্ষের বিভিন্ন স্পট খুঁজে বের করে মিসাইল চালাবার প্ল্যান করে দিতে পারত তার কাছে এসব জলভাত।’
‘তা ওদের ক্ষেত্রেও কি মিসাইল চালাবেন না কি?’
‘হ্যা...হ্যা করবেন না! নিজের হলে বুঝতেন। এখন পুরুত পাওয়া দুষ্কর।’
দুই
এদিকে দেবু পুরোহিত তো হাঁ হয়ে গেল। ‘বলেন কি স্যার আপনার ফ্ল্যাটে!’ ব্যানার্জিবাবু একটু ধাক্কা খেলেন যেন।
‘হ্যাঁ। আসলে দেখেছে আমার গিন্নি একটু ঠাকুর ভক্ত। তাই কেউ এইসব বদমাইশি করেছে।’
‘তা ঠিক। ম্যাডাম তো প্রতি শনি, মঙ্গলবার পুজো দিতে আসেন। দুঃখ করে বলেন, বুঝলে দেবু, ছেলেটা আর দেশে ফিরবে না! ছেলে থেকেও নেই।’
‘এইসব বলে বুঝি। এখন তুমি বল দিকি, ওই ঠাকুরের দায়িত্ব নিয়ে যা করার করে জলে ভাসিয়ে দিতে পারবে কি না! গিন্নিকে যে করে হোক তোমাকেই বোঝাতে হবে...’
ঠিক তখনই ভাস্কর, তমাল, সৌরভদের দেওয়া কড়কড়ে দু’শো টাকার নোটটা ওর পকেটে চারাপোনার মতো ছরছর করে উঠল। বেচারা এখন কোনদিকে যাবে? ছোঁড়াগুলো পই পই করে বলে গিয়েছে। তুমি কেবল বাড়ি গিয়ে পুজো করতে যাবে। পুজো যেন ওই ফ্ল্যাটেই হয়! অন্য কোনও কিছুতে রাজি হবে না। দায়িত্ব তোমার। বুঝতে পারছ, ফ্ল্যাটে পুজো হলেই ভালো-মন্দ খাওয়া জুটবে। ব্যাটা, হাড় কিপটে, শুধু ডলারের গল্প।
একটু বাজিয়ে দেখার জন্য দেবু পুরোহিত জিজ্ঞেস করল। কিন্তু স্যার কাজটা কারা করল, কিছু আন্দাজ করতে পারছেন?
‘ও নিয়ে ভেবো না। সে আমি বুঝে নেব, মিলিটারির লোক আমি। বাড়িতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পিস্তল আছে। মাথার খুলি যদি না উড়িয়ে দিয়েছি তো আমার নাম কর্নেল ব্যানার্জি নয়। শালা, কর্নেলের বাড়িতে কার্তিক!’
‘কী সাহস!’
ব্যস, পিস্তলের নাম শুনে দেবুর আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। যদি একবার দানা পুরে দেয়। খেল খতম, পয়সা হজম। কিন্তু এদিকে ছেলেগুলো সব জিম করা জিমজিমে চেহারা। একটা মারও বাইরে পড়বে না। এই প্রথম তার পুরুত জীবনের প্রতি রাগ হতে থাকে। ধুস, বাপের লাইনে না এলেই ভালো হতো। গ্র্যাজুয়েট হয়ে চাকরি নেই। বাড়িতে অভাব বাড়তে থাকে। ভাইবোনেদের পড়াশোনা চালানো মুশকিল হল। তখন ওর বাবা বলেছিল, দেখ, বামুনের গলায় পইতে আর ফসলি জমি এক। পইতে ঝুলিয়ে সংস্কৃত মন্ত্র শিখে লাইনে নেমে পড়। যজমানি করে সারা বছর যা টাকা পাবি, চলে যাবে। ব্যস, তারপর থেকে দেবু পুরোহিত!
কর্নেল গম্ভীর গলায় বলে। ‘হলটা কী? কিছু তো বল?’
‘স্যার, শাস্ত্রে কিন্তু আছে এসব ক্ষেত্রে বাড়িতেই পুজো করতে হয়। না হলে কার্তিক ঠাকুর রুষ্ট হবেন, তিনি আপনার মতো কর্নেল নন ঠিক কথা, কিন্তু তিনি স্বয়ং ইন্দ্রের সেনাপতি। বিশাল যোদ্ধা! তাছাড়া, ম্যাডাম শাস্ত্রের বাইরে গিয়েছি জানলে, আমাকে আস্ত রাখবেন না। আপনাকেও ছাড়বেন না।’
‘ইস্, কি বেইজ্জতি ব্যাপার বুঝতে পারছ? আমার আমেরিকান ছেলে জানতে পারলে কী ভাববে বল দিকি।’
‘বলবেন, ঠাকুর দেবতার ব্যাপার কিছু করার ছিল না। আর ম্যাডাম তো বলেছেন ছেলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’
ব্যানার্জি একটু উদাসীন হলেন, আকাশের উড়ন্ত কালো মেঘটা যেন মুখ ঢাকা দিল।
একটু থতমত খেয়ে বললেন, ‘যাকগে একটা ফর্দটর্দ দাও। বাজারে যেতে হবে তো।’
‘তা দিচ্ছি। পুজোর ফর্দ জেরক্স করাই আছে। তবে যে বা যারা ফেলেছে তাদের অবশ্যই প্রসাদ সমেত পেটপুরে খাওয়াবেন। এটাও শাস্ত্রে লেখা আছে। জানাবার কথা তাই জানালাম। পরে ম্যাডাম হয়তো বলে বসবেন, দেবু তুমি জানাওনি কেন?’
‘নিকুচি করেছে শাস্ত্রের! একজন কর্নেলকে এসব বুজরুকি দিচ্ছো?’
‘না স্যার! যা সত্যি তাই বললাম। এটা আমার কর্তব্য। ম্যাডাম পরে জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
একটু বোমকে গেলেন কর্নেল ব্যানার্জি। ‘তাদের জানলে তো!’
‘ঠিক জেনে যাবেন স্যার।’
যাইহোক ব্যানার্জিবাবু, যতই মিসাইল ম্যান হোন না কেন গিন্নির কাছে একেবারে কেঁচো। ওই একটা ডোজেই উনি ব্যাগ নিয়ে বাজারে ছুটলেন।
মিসেস ব্যানার্জি পুজো করতে ভালোবাসেন। ফুলের গন্ধ, ধূপধুনোর সুবাস, শাঁখের শব্দ ওঁকে টানে। তাই আবাসনের যত পুজো হয় সবটাতেই ব্যানার্জি আন্টি বা কাকিমা আবাসনের সবার প্রিয়। উনি কার্তিক ঠাকুরের বেদি রঙিন কাগজ দিয়ে সাজাচ্ছিলেন। বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। উনি বাঁ-হাত দিয়ে মুচ্ছিলেন। কিন্তু কেন? এই ক’দিন আগেও বারান্দায় ব্যানার্জিবাবুর সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। রাত জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছিল বিশ্ব চরাচর। বহুদূর আকাশে মিটমিট করছে তারা। ঠিক সেই সময়ে একটা উড়োজাহাজ মুহূর্তের জন্য দেখা দিয়ে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। সেই প্রথম ব্যানার্জিবাবু ওঁর স্ত্রীর হাতটা ধরে কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, হ্যাঁ গো ছেলেটা সত্যি আর ফিরবে না? ও যে এত দুর্ব্যবহার করবে ভাবতে পারিনি। কেন রে বাবা, বাবা-মা কি তোকে মানুষ করেনি! বুঝলে নীচের রায়বাবু একদিন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘দাদা সত্যিই কি আপনার ছেলে মানুষ হয়েছে?’ আমি রেগে বলেছিলাম, ৫০ লক্ষ টাকার চাকরি, বাংলো সবই আছে। একে কী বলে? মানুষ হওয়া নয়? শুনে উনি আবার প্রশ্ন করেছিলেন,
—আর...
—আর আবার কী?
বুঝলে,আমার দুর্বলতা ধরা পড়ার ভয়ে আমার ছেলে যা নয় তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলি। সেটা কেউ বোঝে না। আমি সেই সুখেই ছিলাম। কিন্তু আজকের উড়োজাহাজটা মনে হল আমার ছেলে! মনটাকে ভেঙে তছনছ করে দিয়ে— আকাশে মিলিয়ে গেল।
ডোরবেলের শব্দে মিসেস ব্যানার্জির সংবিৎ ফিরল। উনি দরজা খুলে দিলেন। ব্যানার্জিবাবুর সেই কালসিটে মুখ উধাও। হাল্কা শরতের মেঘ যেন উড়ছে। লোকটা ওইরকমই। এই রাগ, এই অভিমান, আবার হিমশীতল, ফুরফুরে শরতের বাতাস!
‘কী গো, দেবুর সঙ্গে কথা বলেছ?’
‘হ্যাঁ! ও আসবে।’
‘তাহলে ফর্দটা নিয়ে বাজারটা করে আনলে না কেন?’
ইতিমধ্যে মিসেস গরম চা নিয়ে এসেছেন। ব্যানার্জিবাবু চুমুক মেরে বললেন, ‘বাজারের দিকে গিয়েও কেনা হলো না। কারণ...’
মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজটা মেলে ধরলেন।
‘কাকু, অপরাধ নেবেন না। কাকিমার হাতে একটু ভোগ আর পায়েস খাবার ইচ্ছে হয়েছিল, তাই এই দুষ্কর্মটি করে ফেলেছি। বিনীত— পুকুর পাড়ের আড্ডাবাজরা।’
মিসেস ব্যানার্জি হেসে ফেললেন। ‘পাগল ছেলে সব। ওরা বলতেই পারত। মিছিমিছি কার্তিক ফেলার কী দরকার ছিল?’
‘এই প্রথম ওই হাসিখুশি, আড্ডামারা ছেলেগুলোর মুখের মধ্যে আমার প্রকৃত সন্তান খুঁজে পেলাম। ওরাই তো যত্ন করে পিকনিকে নিয়ে যায়, হঠাৎ ইলিশ উৎসব করে ডাক দেয়। সেবার ঠিক পুজোর একাদশীর দিন আমার বুকে ব্যথা হয়েছিল, ওরা কাল বিলম্ব না করে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিল। মনে আছে?’
‘তবে—’
‘তবে আর কী? একটা ভালো করে লিস্ট করে দাও। আমি উত্তরে ওদের আসার কথা বলে দিই।’
মিসেসের মুখে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।
ঠিক তখনই প্রেসিডেন্ট সাহেবের ফোন।
‘হারামজাদারা আমার ফ্ল্যাটের সামনেও কার্তিক ফেলেছে। আসলে গতকাল মেয়ের ফ্ল্যাটে ছিলাম। সকালে ওখান থেকেই মর্নিংওয়াকে গিয়েছিলাম। তাই জানতাম না। এখন আমার গিন্নির কড়া আদেশ পুজো করতে হবে। কী ফ্যাসাদ বল তো। আমার ছেলেও তো বিদেশে। যদিও সে এ দেশের মুখ দর্শন করে না। বলে ওখানে কী আছে? একটা মৃত শহর।’
ব্যানার্জিবাবু হেসে বললেন, ‘ওরা একটা মেসেজ দিতে চাইছে, বিশেষ করে ছেলে বিদেশে থাকা বাপেদের কাছে।’
‘বুঝলাম না। কী মেসেজ।’
বলতে চাইছে, ‘আমারও তোমাদের দেশি ছেলেপুলে। হা হা হা...’