উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কথা বলে অবন্তিকা নীচে নেমে এসেছে। ড্রয়িংরুমে তখন বাবা আর ছেলে লাস্ট মিনিট কিছু কথাবার্তা সেরে নিচ্ছে। এই যেমন দত্তপুকুরে তাদের পৈতৃক ভিটেটা আর জমি জমা পুকুর সমেত কম তো নয়। এতটা দিন উন্মীলনের ভরসাতে রাখা ছিল। উন্মীলন সেই কোন ছেলেবেলা থেকে বলে আসছে ওই জায়গাটা কিছুতেই বিক্রি কোরো না বাবা, আমি ছুটিতে যখন আসব, তখন ওখানে সময় কাটাব। ওই পুকুরটাকে সংস্কার করতে হবে, মাছ চাষ করতে হবে। পুকুরটার পাড় বাঁধিয়ে ওখানে একটা গার্ডেন বানাব। বাবা, রিটায়ার্ড লাইফে ওখানে গেলে খুব ভালো লাগবে। তোমার কত পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। আমারও কত বন্ধু আছে। যদিও তারা অনেকেই এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তবে এক সময়ে তারা ঠিক দেশে ফিরে আসবে।
কথাগুলো একবিন্দুও মিথ্যে বলেনি উন্মীলন। বিপুলবাবুরও যে ওই জায়গাটা বিক্রি করবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। এখনও দেশের বাড়ির পুরনো দিনের বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব বেঁচে আছেন। উনি এসেছেন শুনলে তাঁরা সকলে চলে আসেন গল্প করতে। শৈশব এসে দাঁড়ায় দরজায়। কৈশোর মেতে ওঠে তাদের হাসিতে। তারুণ্যে মুখরিত হয় গোটা বাড়িটা।
বছর পনেরো হল উন্মীলন কলকাতা ছেড়েছে। সেই যে এইচএসের পরে প্রথমে মাদ্রাজ আইআইটিতে ঢুকল তারপর সেখান থেকে এমটেক করে সোজা ক্যালিফোর্নিয়া। সেখানে পাঁচ বছর হায়ার স্টাডিজ করে বেঙ্গালুরুতে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করল। তারপর ফের ক্যালিফোর্নিয়া চলে গেল। দুই বছরের মাথায় একবার এসেছিল। এখন নিউ ইয়র্কে থাকে ওরা।
‘এই তোমরা দেখেছ কেউ ওমকে?’
অবন্তিকার গলায় উদ্বেগ।
অহর্নিশকে সকলে ওম বলেই ডাকে। এটি ওর মায়ের দেওয়া নাম। আর বার্থ সার্টিফিকেটে দাদাইয়ের দেওয়া নাম— অহর্নিশ মুখার্জি।
‘কেন, ওম কোথায়?’
উন্মীলন ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে। পিছনে অবন্তিকা দাঁড়িয়ে। বেশ একটু টেন্সড হয়ে আছে মনে হচ্ছে।
‘আমি তো সেই একই কথা জানতে চাইছি। ঘড়ির দিকে খেয়াল আছে? ক’টা বাজে বলো তো?’
‘ক’টা বাজে?’
উন্মীলন সামনের দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সবে মাত্র তিনটে বাজে। এত তাড়াহুড়োর কী আছে, এইটুকু তো মাত্র পথ। বড়জোর আধ ঘণ্টা লাগবে।’
‘বিকেলের দিকে কেমন জ্যাম থাকে জানোই তো যশোর রোডে। সেবার তো পাক্কা দেড় ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। ভুলে গেলে?’
‘না, ভুলিনি। সেদিনের কথা আলাদা। সেদিন সম্ভবত পিএম আসার কথা ছিল তাই অনেক রাস্তাই বন্ধ ছিল। আজ তো আর তেমন কিছু নেই। কিন্তু ওম কোথায় গেল? ছাদে যাইনি তো? তিনতলার সব ঘর দেখেছ? কোথাও আবার ঘুমিয়ে পড়েনি তো? ও তো ভাত খেয়ে উপরে গেল দেখলাম।’
‘সব দেখা হয়ে গিয়েছে। কোত্থাও নেই।’
‘মা কোথায়? পাশের বাড়িতে দেখেছ? সামনের রাস্তায় আবার ঘুরছে না তো? ওকে তো কয়েকবার বলতে শুনেছি, বাবা, এই রাস্তাটা কি সুন্দর না? এখানে ছুটির দিনে সবাই কেমন রাস্তায় ক্রিকেট খেলে, আমার খুব ভালো লাগে ওদের সঙ্গে খেলতে।’
বিপুলবাবুকেও বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। ‘তাই তো দাদুভাই কোথায় যেতে পারে, কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমি কি একবার দেখব?’
‘কোথায় দেখবে বলো তো? আমি তো সামনের রাস্তায় দেখে এলাম। আশপাশের বাড়িতেও খোঁজ নিলাম। কোথাও নেই।’
‘তোমাদের মা কোথায় গেলেন?’
‘মা রুপুদির বাড়িতে গিয়েছেন।’
‘রুপুর বাড়িতে! কেন? এখন আবার রুপুর বাড়িতে কী দরকার? সে তো কাজকর্ম সব করে দিয়ে সেই দুপুরবেলায় চলে গিয়েছে।’
‘কী জানি বাবা, ওম আবার রুপুদির বাড়িতে চলে গেল না তো? এই ক’দিন রুপুদির ছেলের সঙ্গে তো ভালোই খেলাধুলো করছিল।’
ওম সেদিন রুপুদের বাড়িতে ঘুরে এসে অবন্তিকার কাছে জিজ্ঞাসা করে, ‘মা, রুপু পিসিরা অমন ভাঙা চোরা বাড়িতে থাকে কেন? মা জানো, আমি দেখলাম, রুপু পিসি যা খাবার নিয়ে গেল, তাই ওরা তিনজন মিলে খেল। মা, একজনের খাবারে তিনজনের পেট ভরেছে?’ ইত্যাদি কত প্রশ্ন।
রুপুর দুই ছেলে— রুই আর কাতলা। রুইয়ের সঙ্গে ভারী ভাব হয়েছে ওমের। ওমকে অনেক খেলা শিখিয়ে দিয়েছে রুই। নিউ ইয়র্কের বাড়িতে ওম ছুটিতে একা একাই কম্পিউটারে নানা গেম খেলে সময় কাটায়। এখানে এসে এক বিন্দু কম্পিউটারের সামনে বসেনি। সারাটাদিন আশপাশের বাচ্চাদের সঙ্গে না হলে রুই আর কাতলার সঙ্গে খেলেছে। একদিন নাকি ওদের স্কুলেও গিয়েছে। রুপুদের বাড়ির পাশেই একটা সরকারি ইস্কুল আছে। প্রাইমারি স্কুল। আশপাশের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করে।
‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে...’
এ কয়েক দিনে সহজপাঠের বেশ কিছু কবিতা নিমেষে মুখস্থ করে ফেলেছে অহর্নিশ ।
রাতে দাদু ঠাম্মির কাছে শুয়ে শুয়ে কত যে গল্প শুনেছে। কত নাম জেনেছে লেখকদের। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায়, লীলা মজুমদারের বই পড়ে শুনিয়েছে ঠাম্মি। বাবার ছেলেবেলার কতরকম মজার মজার গল্পের বই। কমিক্স, অঙ্কের ধাঁধা, কেমিক্যাল ম্যাজিকের বই। ভাবতেই কেমন যেন রোমাঞ্চ জেগেছে ওমের। সকালে উঠেই ওদের লাইব্রেরিতে গিয়ে দাদুকে বলে বইগুলো বের করেছে। তারপর অন্ধের মতো সেই বই এর প্রতিটা লেখার উপরে হাত বুলিয়েছে।
অবন্তিকাকে গিয়ে বলেছে, ‘মা, আমি বাংলাতে কথা বলি, কিন্তু বাংলা লিখতে বা পড়তে পারি না কেন? এই যে আলমারি ভর্তি এত এত বই, দাদুর নিজের লেখা কত বই— অথচ আমি একটা বইও পড়তে পারছি না? তোমরা আমাকে বাংলা পড়তে শেখাওনি কেন? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি এই বইগুলো পড়তে পারছি না বলে।’
সেদিন বাড়িতে না বলে রুই, কাতলাদের স্কুলে গিয়েছিল ওম। টিচারদের সঙ্গেও পরিচয় হয়েছে ওমের। বাড়িতে ফিরে বলেছে, বাচ্চারা কী সুন্দর সকলে একসঙ্গে মিলে মিড ডে মিল খায়। ওমও সেদিন ওদের সঙ্গে ডিম-ভাত খেয়েছে।
রাতে ডিনার করার সময়ে মিড ডে মিলের কথাটা যখন সকলকে বলেছে তখন সে কি হাসি অবন্তিকা আর উন্মীলনের। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিপুলবাবু ও বিশাখাদেবীও।
উন্মীলন বলল,‘সাবাশ বেটা, তুই তো দেখছি ছুটিটা ষোলোআনা উশুল করে নিলি? আর কিছু বাদ থাকল?’
উন্মীলন আসছে ওর বউ ছেলেকে নিয়ে।
যেদিন থেকে শুনেছে সেদিন থেকে দিন গুনছেন বিশাখা। সেই কোন ছোটোবেলায় দেখেছিল নাতিকে। কত বছর বাদে আসছে উন্মীলন।
এই ফ্ল্যাটটা উন্মীলনের জন্যই কেনা হয়েছিল। বিপুলবাবু সেই সময়ে বীরভূমের একটা কলেজে অধ্যাপনা করতেন। উন্মীলন ওখানেই হয়েছিল। তারপর একটু বড় হলে বিশাখাই একদিন বলল, ‘চলো, এবারে আমরা কলকাতায় ফিরে যাই।’
উন্মীলনে পড়াশোনার কথা ভেবেই বিপুলবাবু কলকাতায় চলে এলেন । আর গোরা বাজারে একটা ফ্ল্যাট কিনে নিলেন।
উন্মীলন সেন্ট স্টিফেন্সে পড়ত। খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। সকলের চোখ ছিল ওর দিকে। উন্মীলন বলার মতোই রেজাল্ট করেছিল বোর্ড এগজ্যামে। ওয়েস্ট বেঙ্গল টপার তো বটেই ইন্ডিয়াতে প্রথম দশের ভিতরে ওর নাম ছিল। তারপর আইআইটি-তেও টুয়েলফথ পজিশান পায় ও। ইচ্ছা করেই মুম্বই বাদ দিয়ে চেন্নাই আইআইটিতে নিজের পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে ভর্তি হল। তখনও পর্যন্ত বিপুলবাবু আর বিশাখা দেবী ছেলের চিন্তাতেই বিভোর হয়ে থাকতেন। একটু একটু করে দিন কেটে গেল। ছেলে হায়ার স্টাডিজ করতে ইউএসএ চলে গেল। তারপর পড়াশোনা শেষ করতেই একটা ভালো চাকরির অফার পেয়ে গেল। সেই থেকে ওখানেই জব করা শুরু করল।
বিশাখা দেবী নিজের হাতে বাড়ির মধ্যে একটু একটু করে গড়ে তোলা লাইব্রেরিটার সামনে মাঝেমধ্যে এসে দাঁড়ান। আর মনে মনে বলেন, কী হবে এই বইগুলোর ভবিষ্যৎ? আমরা যতদিন আছি, ততদিনই এদের যত্ন করতে পারব। তারপর তো সব হারিয়ে যাবে। কে আর এদের দেখভাল করবে? বাবুরা দুই-তিন বছরে একবার আসবে তখন কী এই বইগুলোর দিকে তাকানোর সময় পাবে? আর আমরা চলে গেলে ওরা আর কীসের টানে এ দেশে আসবে?
আমাদের সাধের তিল তিল করে গড়ে তোলা এই লাইব্রেরিটা একদিন আমাদের মতোই হারিয়ে যাবে। কালে কালে বই হাতে নিয়ে পড়াটাও বুঝি আর থাকবে না। সবই তো ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রন্থাগার, বইয়ের আলমারি ইত্যাদি কথাগুলি আস্তে আস্তে অবলুপ্ত হয়ে যাবে।
বিশাখা দেবী কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতে কত নামী-দামি পুরনো বই বিক্রি হতে দেখেছেন। এর মধ্যে কত বই একেবারে নতুনের মতো। তখন ভাবতেন, কারা এইসব ভালো ভালো দুর্মূল্য বই বিক্রি করে দেন? কতদিন কত পুরনো বই হাতে নিয়ে পড়েছেন, পছন্দ হলে কিনেও এনেছেন। এমন অনেক বই আছে যেগুলো আর ছাপা হয় না। ওদের আলমারিতে সেই সব বই পরম নিশ্চিন্তে বিরাজ করছে। ওরা চলে গেলে এই বইগুলোর আবার সেরকম হাল হবে না তো? হয়তো রাস্তায় পড়ে থাকবে নিতান্ত অবহেলায়। হয়তো কারও অপেক্ষায় থাকবে। আবার অন্য কেউ একজন হয়তো ওদের পরম মমতায় হাতে তুলে নেবেন।
হাঁটতে হাঁটতে বিপুলবাবু আর উন্মীলন রুই-কাতলাদের বাড়িতে চলে এসেছে। হাতে আর খুব বেশি সময় নেই।
এখানে এসে শোনে রুই আর কাতলার সঙ্গে ওম ওদের হেড স্যারের বাড়িতে গিয়েছে।
‘সর্বনাশ! এখন কোথায় খুঁজতে যাব?’
উন্মীলন ঘড়ি দেখে। উত্তেজনায় টেনশনে এই শীতেও দরদর করে ঘামছে।
টেন্সড হয়ে আছেন বিপুলবাবু আর বিশাখাদেবীও। আর কিছুক্ষণের মধ্যে যে করেই হোক ওদের বেরিয়ে পড়তে হবে। অথচ ছেলের দেখা নেই।
উন্মীলন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, ‘মা, তোমরাই বলো আমি এখন কী করব। আমার পরশু একটা মিটিং আছে। এখান থেকে গিয়ে সেই মিটিংয়ে থাকতেই হবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং।’
‘তাই তো, আমি তো কিছুই ভাবতে পারছি না।’
এর ভিতরে অবন্তিকা ঘন ঘন ফোন করছে, ‘কী গো, খোঁজ পেলে?’
ফোনের ভিতরে কাঁদছে অবন্তিকা। সেই কান্নার অভিঘাত এসে পড়ছে উন্মীলনের বুকে।
ছেলেকে না নিয়ে ফিরতেও পারবে না উন্মীলন।
ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটা বাজতে চলেছে। হঠাৎ দূর থেকে ওমকে দেখতে পেল ওরা।
ভাগ্যিস একটা রানিং ট্যাক্সি পেয়ে গেলে ওরা অর্জুনপুর বাজারে। সেটাকেই পাকড়াও করে বাড়ির সামনে দাঁড় করানো হল।
সকলে দেখল ওমের হাতে একটা প্যাকেট।
ও দৌড়ে এসে মায়ের হাতে দিয়ে বলল, ‘এটা ব্যাগের ভিতরে যত্ন করে ঢুকিয়ে রাখো।’
শেষ মুহূর্তটা যে কি টেনশনে কাটল। একটু আদর পর্যন্ত করতে পারলেন না নাতিকে বিশাখা দেবী। বিপুলবাবু আর বিশাখাদেবী এয়ারপোর্টে এসেছিলেন।
সিকিওরিটি চেকিংয়ের আগে পর্যন্ত যতটা সময় দেখা যায় জল ভরা চোখে দাঁড়িয়েছিলেন বাইরে। কাচের ভিতর দিয়ে দেখছিলেন ছেলে বউমা আর নাতি এগিয়ে যাচ্ছে।
ঘরে ফিরে এলেন এক বুক শূন্যতা নিয়ে। চোখের জল বাঁধ মানছে না। আবার কবে দেখা হবে!
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল।
ওম ফোন করেছে।
বিশাখা দেবী কানে দিতেই শুনতে পেলেন ওমের গলা ,‘ঠাম্মি, এবারে আমি যখন আসব, তখন দেখবে আমি নিজেই সব বাংলা বই পড়তে পারব। রুই-কাতলাদের স্কুলের হেড স্যার আমাকে ক্লাস ওয়ান আর টু-এর সমস্ত বাংলা বই দিয়েছেন। তোমায় তো তখন বলতে পারিনি। একদিন দেখবে আমি আলমারির সমস্ত বই পড়ে ফেলব। তুমি আলমারির বইগুলোকে যত্নে করে রেখো কিন্তু।’
বিশাখা দেবী উঠে এসে দাঁড়ালেন বইয়ের আলমারির সামনে। তারপর পরম মমতায় হাত বোলাতে লাগলেন দেওয়াল জোড়া আলমারির গায়ে। পাখির মতো দুই হাত প্রসারিত করে ছুঁয়ে থাকলেন আলমারিটা, আর বিড়বিড় করে বললেন, ‘আমি বলেছিলাম না, তোমাদের যত্ন করার লোক এসে গিয়েছে, এবারে বিশ্বাস হল তো?’
অলঙ্করণ : সোমনাথ পাল