উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
পিশাচ আবার সাধু হয় নাকি!
সহজ এই কথাটাই ভাবছিল। সহজ মিত্র— নামটা কি খারাপ? আনকমন নাম। কিন্তু এই আনকমন নামটাকে কিছু ফালতু পাবলিক ঘেঁটে দিয়েছে। তারা তার নাম রেখেছে সহজ পাঠ। সেই সহজ পাঠকে দেখেই যেন মানুষটা থমকে দাঁড়ালেন। বেশ কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। কী দৃষ্টি রে বাপ! তারপর ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘তুই! তুই এখানে কেন? তোর এখানে কী কাম?’
‘আমি!’ বলে সহজ ঢোক গিলল। সে এখানে কেন, সে তো নিজেই জানে না। আসতে চায়নি, তবু চলে এসেছিল পাকে পাকে। পায়ে পায়ে। চাকায় চাকায়। আজ তাকে তুলে নিয়ে এসেছিল পরমেশ্বর। যে অনেকের কাছে ঈশ্বর, আবার অনেকের কাছে পরম। তার কাছে পরমেশ্বরদা। সে যেখানে এসেছে, সেটা আগে ছিল দারোগা বাড়ি। এখন ভূতুড়ে বাড়ি।
এই ভূতুড়ে বাড়ি পাঁচ ভূতের দখলে। নানা ধরনের ভূতের আনাগোনা। এখানে ভূতেরা পালাবদল করে। সকালে একদল ভূত, তো দুপুর আলাদা। সন্ধেবেলার ভূতেরা একটু নরম-সরম প্রেম পিরিতিতে মগ্ন থাকে। আর রাত আটটার পর ভূতগুলো ডেঞ্জারাস। নেশায় টইটম্বুর! আবার মাঝরাতে ভবঘুরে, পাগল-ভূতও জুটে যায় এখানে।
তবে কোনও কোনওদিন রাতের ভূতরা সকাল থেকেই এখানে হাজির হয়। সেদিন মোচ্ছব! সেদিন জোরে জোরে গান চলে। গানা বাজানা! সাত সতেরো রান্নাবান্না হয়। আর তখন এ-বাড়ির ঘরে ঘরে নৌকো চলে। নৌকা, না পানসি! চালাও পানসি বেলঘরিয়া, সেলফি তোলো মনভরিয়া! ধামাকা! ধামাকা!
সে সব দিনে ধামাকা হয়। আশপাশের মানুষজন জানে আজ কিছু একটা কাণ্ড আছে। কোনও কোনও সময় সেই কাণ্ড রাতে প্রকাণ্ড হয়ে দেখা দেয়। যেসব দিনে প্রথমে গলাগলি পরে গালিগালাজ, মারামারি। অনেকবার আধলা চার্জ হয়েছে। বোতল ভাঙা হয়েছে। ভাঙচুর। ছুরি-চাকু-ক্ষুর। দু দুবার গুলিও ফুটেছে এখানে। সকালে ধোয়া তুলসী পাতার মতো ভাব করে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়িটি।
এই বাড়িতেই মানুষটা সহজকে প্রথম দেখলেন। সহজও তাঁকে প্রথম দেখল। লম্বা, ঢ্যাঙা। গায়ে ছিটেফোঁটা মাংস নেই, কিন্তু বয়সের থেকেও টানটান, যেন খোলা তলোয়ার! গায়ে ঢোলা সাদা পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির গলায় সাবুদানা-ফুলকাজ করা। পাঞ্জাবিটা হল তরোয়াল ঢেকে রাখার খাপ। এক মাথা কাঁচা পাকা ঘাড় ঝাঁপানো ঝাঁকড়া চুল। কপালের কাছে মোটা কেঁচোর মতো রগ উঠে আছে। যেন দপদপ করছে। চৌকো শক্ত চোয়াল, ঢুকে যাওয়া গালে দু চারদিনের না-কাটা দাড়ি, ঝোলা গোঁফ। কিন্তু সবকিছু ফেলে মানুষটার চোখ দুটো জ্বলছে! তিনটে আগুন! দুটো চোখে, একটা ঠোঁটে। মোটা ঠোঁটের একদিকে একটা বিড়ি তখনও পুড়ছে।
বিড়িটায় শেষ টান মেরে আঙুলের টোকায় সেটা ছুঁড়ে দিয়ে মানুষটা সহজের দিকে তাকিয়েছিলেন। কী দেখছে রে বাপ, যেন গিলছে! ভস্ম করে দেবে!
পরমেশ্বর বলল, ‘কিছু বলবে ক্যাপ্টেন?’
‘হুমম!’ মানুষটা পেটের ভেতর থেকে একটা আওয়াজ তুলে আনল। সঙ্গে অল্প অল্প মাথা নাড়ালেন।
‘বোসো, বোসো ক্যাপ্টেন।’ পরমেশ্বর বলল।
সুজি আগেই চেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে চেয়ারে দুটো ঝাপটা দিল। বলল, ‘বোসো, ক্যাপ্টেন! এদিকে কোথায় গিয়েছিলে?’
যাঁকে বলা তিনি কিন্তু বসলেন না, কোনও উত্তরও করলেন না, বরং তীব্র চোখে সহজের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তাঁর দু পাটি দাঁতের কামড়ে কষ ফুলে ঠেলে উঠছে। নাসারন্ধ্র স্ফীত হচ্ছে ক্রমশ। সহজও তাকিয়ে আছে চোখে চোখ রেখে। সহজের বিয়ে হয়নি। বিয়ে হলে এরকম করেই বুঝি শুভদৃষ্টি হতো! দুর্ভাগ্য আজ এই ভূতুড়ে বাড়িতে একটা কেঠো-বুড়োর সঙ্গে তার শুভদৃষ্টি হচ্ছে!
মানুষটার কথা শুনে সহজ হতভম্ব! মালটা বলে কী! তার পিত্তি জ্বলে গেল। কোনও উত্তর দিল না। কী উত্তর দেব? সুজিদার মতো পাবলিক নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে চেয়ার ঝেড়ে দিচ্ছে। পরমেশ্বরদা কেমন ‘ক্যাপ্টেন বোসো, বোসো’ করছে। ক্যাপ্টেনের কী ছিরি! সাদা পাঞ্জাবির নীচে লুঙ্গির মতো করে ধুতি পরা। পায়ে ব্রাউন রঙের কাপড়ের জুতো।
‘এই বাড়িতে এদের সঙ্গে তুই কেন রে বাপ?’
মানুষটা আবার তাকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, ওঁর গলার আওয়াজ উঠছে পেটের ভেতর থেকে। সহজ উত্তর খুঁজছে। মুখে ঠিক কথা জোগাচ্ছে না।
এ-বাড়ি শিবশম্ভু দারোগার। একসময় এ-বাড়ির সামনে এসে সবাই ফিসফিস করত— এটা দারোগা বাড়ি। শিবশম্ভু দারোগা। তখন দারোগাদের মানুষ কদর করত। লালবাজারকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পাশাপাশি রাখত। এখন পুলিস নাকি দলদাস, আর দারোগা বাড়ির কী অবস্থা বুঝুন— ভূতুড়ে বাড়ি!
বাড়িটি বিশাল, চারদিকে সাত ফুটিয়া পাঁচিল। পাঁচিলের ওপর ত্রিশূল। ত্রিশূলের মাথায় জটাজুটোর মতো জড়ানো কাঁটাতার। দুটো গেট। একটা বড়, একটা ছোট। বড় গেটের ওপর রংবাহারি হয়ে বোগেনভেলিয়া। তাতে অবশ্য ধুলো, মাকড়শার জাল থেকে চীনে মাঞ্জার সুতো জড়িয়ে আছে ব্যাপক। আর ছোট গেটে মোটা চেনে দুটো তালা। তার পাশে তুলসী মঞ্চ। তুলসী গাছ নেই। দেহ রেখেছে। কিন্তু তার কাঠি কাঠি ঝোপড়া শরীরটা এখনও আছে। তুলসীর শুকনো সরু ডাল এখন কোনও কোনও মামদোর দাঁত-খুঁচুনি হয়।
যিনি শিব, তিনিই শম্ভু। একজনেরই ডাবল নাম। নামের মতোই শিবশম্ভু দারোগার দুটো বিয়ে। দুটো বউ। প্রথমপক্ষের দুটি, দ্বিতীয়পক্ষের একটি সন্তান, তিন সন্তান নিয়েও বাড়িটি ভূতের। কেননা এ-বাড়ির দু’তলায় দু-দু’বার লাশ পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমবার এ বাড়ির বড় বউয়ের। সন্দেহ শিবশম্ভু দারোগার মায়ের কীর্তি। বিষ দিয়েছিল সরবতে।
দ্বিতীয় লাশ একটি মেয়ের। সে ছিল পরিচারিকা। গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল। সন্দেহ পরিচারিকাকে মেরেছিল ছোটবউ। কাজের মেয়েটি নাকি এ-বাড়ির তিন নম্বর বউ হওয়ার তাল করছিল। দারোগাকে একেবারে আঁচলে বেঁধেই ফেলেছিল। বাড়ির মধ্যে ঘর করেছিল। ঠিক সময়ে কাজ সারে ছোটবউ। কেউ কেউ বলে দারোগাবাবুও ছিলেন। বাধ্য হয়েছিলেন। সে কেস চাপা থাকেনি। মারাত্মক থানা পুলিস হয়েছিল। শিবশম্ভু দারোগাও নাকি ধামাচাপা দিতে পারেননি। সেই মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে পুলিস ব্যাপক টাকা আর অনেক বেনামি জমিজমার হদিশ পায়। জমি জায়গা নিয়ে টানাটানি চলে। এ-বাড়িও ছেড়ে দেয় না। বেনামি জায়গা জমি দারোগাবাবুও ফেরাতে পারেননি, দিকে দিকে লুঠ হয়ে গেছে। ওদিকে গলার কাঁটার মতো বাড়ির ভেতর ট্রাঙ্ক বোঝাই টাকা। সে টাকা ছিল ঘুষের। কোথা থেকে এল এত এত টাকা? তার হদিশ দারোগাবাবু দিতে পারেননি। সরকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফিজ করে। দারোগাবাবুকে বাঁচাতে সে টাকার হদিশ দিয়েছিল ছোটবউ। কোর্টে জজসাহেবের কাছে গোপন জবানবন্দিতে বলেছিলেন— এ আমার রোজগার। আমার শরীর বেচার টাকা।
সেসব কথা ও কাহিনি এ এলাকায় মুখে মুখে ফেরে। কেউ কেউ ছোটবউকে ধন্যি ধন্যি করে। শত বদনাম কুড়িয়ে স্বামীকে বাঁচাল কীভাবে বউটি গল্পে গল্পে পল্লবিত হয়। পরমেশ্বরের কাছে শিবশম্ভু দারোগার ছোটবউয়ের কথা জানতে চেয়েছিল সহজ। সহজ তাকে নিয়ে একটা গল্প লেখার ধান্দায় আছে। গল্প লেখার কথা সহজ পরমেশ্বরকে বলেনি। কিন্তু সে ঠিক বুঝে গেছে। একদিন সে সবার আড়ালে সহজকে হালকা গলায় বলল, ‘দারোগার ছোটবউয়ের খুব খোঁজখবর করছিস— গল্প লিখবি?’
পরমেশ্বরদার কথায় সহজ হেসেছিল।
‘হাসছিস, একদিন অফিস ফাঁকা থাকলে আমাকে মনে করিয়ে দিস— দারোগার উইল দেখাব। শিবশম্ভু দারোগার উইল। কী ধুরন্ধর মাল— উইল করেছে আর চেঞ্জ করেছে। অনেক কিছু মেটিরিয়াল পাবি ওখানে। পুরো হিস্ট্রি!’
সহজ ওখান থেকেই ছোটবউয়ের নাম জেনেছে।
পরমেশ্বরদা বলল, ‘কী দেখছিস?’
সহজ বলল, ‘দারোগাবাবুর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম— সনকা’
‘মেনকা পেয়েছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘যে মরেছিল সেই কাজের মেয়েটির নাম।’
‘মেনকা দাস।’
সহজের মুখে মেনকা শুনেই পরমেশ্বরদার অফিসে হাজির অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী ভানুবাবু গুনগুন করে গেয়ে উঠল— ‘ও মেনকা মাথায় দিলি ঘোমটা!’
তারপর অমায়িক হেসে বলল, ‘বহু পুরনো গান মনে পড়ে গেল। কখনও শুনেছ— বাবু সহজ পাঠ?’
‘শুনেছি, ছোটবেলায়।’
‘কোথায়?’
‘কোথায়? মনে পড়ছে না।’
পরমেশ্বর বলল, ‘ও গান নয় প্রাণ খুঁজছে ভানুদা? ওর মাথায় এখন সনকা আর মেনকা।’
পরমেশ্বরদার কথা শুনে ভানু দুচোখ বন্ধ করে বসল। ভানুর ‘প্রাণ’ দিয়ে অন্য একটা খুব পুরনো গানের কথা মনে পড়ছে।
পরমেশ্বর বলল, ‘তুই যাবি তো?’
‘কোথায়?’
‘কেন দারোগাবাড়িতে পর্ক সসেজ বানানো হচ্ছে। পার্টি আছে। চল, একটু ঘুরে যাই। চলো ভানুদা।’
ভানু বলল, ‘কার পার্টি ভাই?’
‘সুজি পার্টি দিয়েছে। বেস্পতিবার ওর বউ সাধ খেয়েছে। সেখানে আমাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। আজ আমরা সুজিকে বাবা হবার সাধ খাওয়াব।’
সহজের যাওয়ার ইচ্ছে নেই। সুজি হল সুরজিৎ। পরমেশ্বরের প্রোমোটিং ব্যবসার পার্টনার। পরমেশ্বর যতখানি ব্যবসা করে, ততখানিই পার্টি করে। পরমেশ্বর বছর পনেরো হল মস্তান থেকে প্রোমোটার হয়েছে। পার্টি করে পরমেশ্বরের যত ক্ষমতা, প্রোমোটিং করে তার থেকে অনেক বেশি টাকা। পরমেশ্বর টাকা দিয়ে এখন এলাকা কিনে নিয়েছে। আগেও অবশ্য এই এলাকা পরমেশ্বরেরই দখলে ছিল। সেটার জন্য গুলি বোমা রক্তারক্তি করতে হতো। এখন পরমেশ্বর শান্তিপূর্ণভাবে এই এলাকায় তার দখল কায়েম রেখেছে।
সহজ পরমেশ্বরদার চামচে নয়। তার টিমের ছেলেও নয়। বন্ধুও নয়। তবু পরমেশ্বর অনেক জায়গায় তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। যেতে না চাইলেও জোর করে তুলে নিয়ে যায়। ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হয়। ভালোবাসার দাবি।
ভানু উঠে দাঁড়াল। ‘আমি চলি ভাই।’
‘কেন ভানুদা?
ভানু বিড়বিড় করল, ‘সসেজ মানে শুয়োরের মাংস? তোর বউদি জোর করে দীক্ষা দিয়ে দিল। ওরা অবশ্য বলেছে মুরগির মাংস ছাড়া সব খাবেন।’
‘এটা তো শুয়োরের মাংস।’
ভানুবাবু ঘাড় চুলকাল, ‘মুরগি বারণ করেছে। দু-পা বারণ, চার-পা কি খাওয়া যায়? না, থাক।’
ভানু গুনগুন করতে করতে বেরিয়ে গেল।
সহজ বলল, ‘তুমি যাও পরমেশ্বরদা, আমি যাব না।’
‘তোর আপত্তি কেন? তুইও কি দীক্ষা নিয়েছিস? নাকি শুয়োরের মাংস খাস না?’
‘খাই।’
‘তাহলে আপত্তি কোথায়— এত বাছবিচার, খুঁতখুঁতানি করে লেখক হবি? লেখকরা শুনেছি উত্তম মানুষ। পাঁচ পাবলিক মধ্যম। মধ্যম চলেন তফাতে। আমাদের মতো অধমদের তুই এড়িয়ে চললে লেখক হবি কী করে রে?’
‘শোনো পরমেশ্বরদা আমি লেখক হতে চাই না?’
‘তবে কী হতে চাস?’
সহজ চুপ করে থাকে।
‘ভাবিসনি। আর সত্যি যেটা ভেবেছিস সেটা বলার সাহস নেই।’
এ জীবন লইয়া কী করিব? সত্যি সহজ তেমন করে কিছু ভেবে উঠতে পারেনি। পরমেশ্বর তাকে পছন্দ করে। কেন করে সে জানে না।
পরমেশ্বর তাড়া লাগায়, ‘কী রে ভাবুক হয়ে পড়লি। চল, চল, ওখানে মদোমাতালরা এতক্ষণে গুম মেরে আছে। আমরা গিয়ে উদ্বোধনটা করে দিই। আমি না গেলে ওরা শুরু করতে পারছে না।’
অগত্যা পরমেশ্বরের বাইকে বসল সহজ। ‘একটা কথা বলব?’
‘বল।’
‘লেখালিখির ব্যাপারটা তুমি ছাড়া আর কেউ জানে না। ওদের কাছে বলো না। আমি চাই না। ওরা ঠিক নিতে পারবে না।’
‘না, আমি বলব কেন? চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পাবে। এখন তো তুই ফাঁদে পড়ে আছিস? আগে ফাঁদ কাট—’
পরমেশ্বরের বাইক ছোটে। এ-গলি ও-গলি করে দারোগাবাড়ির সামনে দাঁড়ায়। ভেতর থেকে হল্লা ওঠে। যেন বর এল! আজ রাত আটটার ভূতেরা সকাল থেকেই এখানে নৃত্য জুড়েছে। ঠিক দুপুরবেলায় পরমেশ্বরের পিছন পিছন ভূতুড়ে বাড়িতে হাজির হল সহজ। ঠিক দুকুরবেলা ভূতে মারে ঢেলা!
এদিন সত্যি সত্যি সহজকে ভূতে মারল ঢেলা। যে ঢেলা তাকে পাক্কা তেত্রিশ দিন ভোগ করতে হবে। তারপর আরও সাত মাস। তারপর হয়তো সারাজীবন! ঢ্যাঙা মানুষটা তার কাছে জানতে চাইলেন, সে এখানে কেন? কেন এসেছে? তার কাছে কোনও উত্তর নেই।
পরমেশ্বর বলল, ‘ওকে আমি নিয়ে এসেছি।’
‘তুই ভুল করেছিস পরি!’
সহজ এই প্রথম জানল এলাকার দাদা পরমেশ্বরকে কেউ পরি বলে ডাকে।
পরমেশ্বর হাসল, বলল, ‘কেন ক্যাপ্টেন?’
‘তোর নাম কী?’ মানুষটা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
‘আমার নাম সহজ। সহজ মিত্র।’
‘আমাকে চিনিস?’
‘না।’
‘কোনওদিন দেখেছিস আগে?’
‘না।’
‘আমার নাম পিশাচ সাধু!’
পাশ থেকে পরমেশ্বর বলল, ‘ওর নাম ক্যাপ্টেন।’
মানুষটা অদ্ভুত হাসলেন, ‘আমি ওকে পরি বলি। ও আমাকে ক্যাপ্টেন বলে। আমার আসলি নাম— পিশাচ! পিশাচ সাধু!’
(চলবে)
অঙ্কন : সুব্রত মাজী