প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
এই ‘দাদাঠাকুর’ ছবির আউটডোরেই ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে একটা ঘটনার স্মৃতি আজও উজ্জ্বল বিশ্বজিতের স্মৃতিতে। ভাগলপুরে আউটডোর শ্যুটিং হয়েছিল এই ছবির। বিশ্বজিৎ, ছবি বিশ্বাস, তরুণকুমার, গঙ্গাপদ বসুরা সকলে মিলে ট্রেনে করে গিয়েছিলেন। হাঁপানি ছিল বলে সারারাত ঘুমতে পারতেন না ছবি বিশ্বাস। গল্প বলে সকলকে জাগিয়ে রাখতেন। অভিনয় জগতে আসার কাহিনি থেকে শুরু করে ‘নিমাই সন্ন্যাসী’ ছবিতে প্রথম হিরো হওয়া, সব রকমের গল্পই তাতে থাকত। ওই ছবিতে উনি নিজে গানও গেয়েছিলেন। ভাগলপুরে বিশ্বজিতের একটা শ্যুটিং দৃশ্য ছিল, যেখানে তাঁকে নদীতে ঝাঁপ দিতে হবে। অনেকবার শট দিতে হয়। সারাদিন পরিশ্রমও হয় প্রচুর। শ্যুটিং থেকে ফিরে ক্লান্তিতে শুয়ে পড়েই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হন তিনি। মশারি থেকে তাঁর পা কিছুটা বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। ছবি বিশ্বাস সেখান থেকে যাওয়ার সময় বিষয়টি তাঁর নজরে পড়ে। তরুণকুমার পরের দিন বিশ্বজিৎকে গল্প করেছিলেন, ‘জানিস, তোকে ছবিদা কত ভালোবাসেন! কাল মশারি থেকে পা বেরিয়েছিল বলে ছবিদা নিজে তোর পা মশারির ভিতরে ঢুকিয়ে, গায়ে চাদর টেনে, মশারি ভালো করে গুঁজে তারপর শুতে নিজে গিয়েছিলেন।’
তরুণকুমারের মুখে একথা শুনে বিশ্বজিৎ তো লজ্জায় লাল। সঙ্গে সঙ্গে পাশের ঘরে ছুটে গিয়ে ছবি বিশ্বাসকে প্রণাম করে বলেন, ‘দাদা, আপনি আমার পায়ে হাত দিয়েছেন। ছিঃ, ছিঃ।’ ছবি বিশ্বাস তখন পাল্টা বলেন, ‘তাতে কী হয়েছে? তুমি সারাদিন খেটেছ। ক্লান্ত ছিলে।’ ছবি বিশ্বাসের কথা বলার ধরনটাই এমন ছিল যে, তিনি আর কথা বাড়াতে পারেননি। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘সবার উপরে’ ছবিটি খুব পছন্দ বিশ্বজিতের। বলছিলেন, ‘ওঁর মুখে ফিরিয়ে দাও আমার ১২টা বচ্ছর সংলাপটা যে কতবার দেখেছি আমি!’ লাইটহাউসে ‘উইটনেস ফর দ্য প্রসিকিউশন’ ফিল্মটি দেখে চার্লস লটনের অভিনয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ছবি বিশ্বাস। বিশ্বজিৎকে বলেছিলেন, ‘যাও গিয়ে দেখে এসো, কী অভিনয়! দেখে মনে হল কেন যে আমি অভিনয় করছি!’ সেই শুনে বিশ্বজিৎও পরের দিন লাইটহাউসে গিয়ে ছবিটা দেখেছিলেন।
অভিনয় নিয়েও আলাপ-আলোচনা করতেন ছবি বিশ্বাস। এরকমই একদিন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ, ‘আপনি কেন হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন না?’ তাঁর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘না না, হিন্দিতে আমি অভিনয় করতে পারব না। আমার জন্য বাংলাই ঠিক আছে। প্রথমত হিন্দি আমি জানি না। টিউটর রেখে হিন্দি আগে শিখতে হবে, তারপর অভিনয়ের প্রশ্ন। যে ভাষায় আমার দখল নেই, তাতে আমি অভিনয় করব না। তাই বম্বেতে গিয়ে কাজ করব না।’ তবে, বম্বের ডিরেক্টরের অধীনে কাজ করেছিলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। ‘জাগতে রহো’ বলে একটা ডাবল ভার্সন ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। বাংলা ছবিটার নাম ছিল ‘একটি রাত।’ রাজ কাপুরের আর কে ফিল্মসের ছবি। পরিচালনা করেছিলেন শম্ভু মিত্র-অমিত মিত্র। মতিলাল সেই যুগে বম্বের নামকরা চরিত্রাভিনেতা ছিলেন। হিন্দি ভার্সনটায় অভিনয় করেছিলেন মতিলাল আর বাংলায় ছবি বিশ্বাস। মান্না দে’র গানে ‘এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়’-এ লিপ দিয়েছিলেন ছবিবাবু। কলকাতার রাস্তায় মিডনাইটে শ্যুটিং হয়েছিল। একবার গল্পচ্ছলে বিশ্বজিৎকে তিনি বলেছিলেন, ‘জানো বিশ্বজিৎ, রাজ আমাকে এত শ্রদ্ধা করে যে, আমার পায়ের কাছে বসে থাকে।’ প্রথমে বাংলার শট নেওয়া হতো, তারপর হিন্দি শট। হিন্দি ভার্সনে গানটা গেয়েছিলেন মুকেশ। মতিলাল হিন্দি শটের সময় ছবি বিশ্বাসকে অনুরোধ করতেন তিনি যেন ওঁর সামনে না থাকেন। আসলে তিনি থাকলে অভিনয়ই করতে পারতেন না মতিলাল। ছবি বিশ্বাসের প্রতি এমনই সম্ভ্রম ছিল তৎকালীন বম্বে আর্টিস্টদেরও।
ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বজিৎ।