প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
এই একই রোগ রয়েছে কংগ্রেসেরও। তাদের আবার একজন করে অবজার্ভার থাকে। তাঁরা এসে মিটিং করেন। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন। সুপারিশ করেন হাইকমান্ডের কাছে। এক্ষেত্রেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয় দিল্লির ২৪ নং আকবর রোড থেকে। এবং সিপিএম। একটি বাক্যে সিপিএমের বাঙালি আত্মচেতনাই স্পষ্ট। সেটি হল, সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি নামক একটি কাঠামো বাঙালিকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিল না। সিপিএম দলের সবথেকে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন জ্যোতি বসু। নব্বইয়ের দশকে যুক্তফ্রন্টের সময়ে সুযোগ এসেছিল জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। অথচ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো সেই সুযোগে জল ঢেলে দেয় নীতির অজুহাত দেখিয়ে। সেই নীতি মাত্র কিছু বছরের মধ্যে কোথায় গেল? কংগ্রেসের জোট সরকারকে সমর্থন করা হল ২০০৪ সালে। ২০০৮ সালে সেই সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হল। আবার ২০১৬ সালে বাংলায় সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে।
ঠিক এমতাবস্থায় একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে বাংলার দল বলা যায়। কারণ, মমতার কোনও হাইকমান্ড নেই, দিল্লির অবজার্ভার নেই, পলিটব্যুরো নেই যে বাংলার সিদ্ধান্ত তারা নেবে। অবশ্যই বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম বলতে পারে যে, আমাদের তো জাতীয় দল। তৃণমূল তো একটি আঞ্চলিক দল। সুতরাং জাতীয় দলের একটি কাঠামো থাকে। সর্বভারতীয় শৃঙ্খলা থাকে। নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, এটা তো স্বাভাবিক। একদম সঠিক যুক্তি। জাতীয় দল সেরকমই হবে। আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তার পার্থক্যটাই তাই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল, বাংলার স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা বেশি কেন? কই বিধানচন্দ্র রায় তো পাত্তা দিতেন না দিল্লিকে বেশি! কেন বাংলার নেতারাই অনেক বেশি ব্যক্তিত্ব ও ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারছেন না? কেন এইসব দলের দিল্লি অথবা অন্য রাজ্য থেকে আসা মাঝারি মানের নেতারা বাংলার নীতি নির্ধারক হবেন? জাতীয় দলের বাংলা ইউনিটের সদস্য হলেই নিছক অনুগামী আর নির্দেশ পালনকারী হতে হবে এটা কে বলল? আমরা সাধারণ বাঙালি দেখতে চাই বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম, যেই হোক, আদতে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বাংলার স্বার্থ, বাংলার কৌশল, বাংলার নেতাদের জনপ্রিয়তার লড়াই, পারস্পরিক বাগ্মিতার যুদ্ধ, উন্নয়ন বনাম পাল্টা উন্নয়নের বুদ্ধিদীপ্ত প্রকল্প প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। একদিকে চলছে ব্যক্তিগত কুৎসা আর আক্রমণের তরজা। আর অন্যদিকে দিল্লি থেকে বাংলার রাজনীতিকে কন্ট্রোল করার একটি প্রবণতা। আমরা চাই প্রতিটি দলের নীতি নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের চাবিকাঠি যেন বাংলার হাতেই থাকে। বিজেপি তৃণমূলকে পরাস্ত করে সরকার গঠন করতে চাইতেই পারে। স্বাভাবিক। ২০২১ সালে তারা সফল হতে পারে। ব্যর্থও হতে পারে। সেটা ভোটের লড়াইয়ের ভিন্ন প্রশ্ন। বিজেপি বাঙালি আবেগকে জাগ্রত করতে বাংলার মনীষীদের বন্দনা করার কর্মসূচি নিয়েছে। সুখবর। কিন্তু সেই মনীষীরা তো আত্মশক্তিতে বলীয়ান ছিলেন। তাঁরা কখনও চেয়েছেন যে বাইরে থেকে আমাদের নীতি আদর্শ অনুপ্রেরণা এবং নেতৃত্ব আমদানি করা হোক? নেতাজি কংগ্রেসে থাকলেও সর্বদা নিজের পথে এগিয়েছেন। বিদ্রোহ করেছেন।
দেখা যাবে, বাংলার তিন মনীষী রবীন্দ্রনাথ, স্বামীজি এবং নেতাজি, আত্মশক্তি এবং কর্মযজ্ঞের প্রমাণ হিসেবে তিনটি উদাহরণ স্থাপন করে গিয়েছেন। তাঁদের বাকি সব পরিচয় বাদ দিয়ে তাঁরা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন সাংগঠনিক শক্তি এবং নেতৃত্বপ্রদান ক্ষমতার পরিচয়জ্ঞাপক তিনটি সাধনা। স্বামীজি গঠন করে গিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। যা কোটি কোটি মানুষের কাছে আজও শিক্ষা, চিকিৎসা, আধ্যাত্মিকতার প্রাণকেন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ তৈরি করে গিয়েছেন বিশ্বভারতী। যা মানবসম্পদ উন্নয়নের এক উৎকৃষ্ট তপোবন। আর নেতাজি স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য আবেদন নিবেদনের পথ ছেড়ে সরাসরি আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ আত্মবিশ্বাসের ভিত। ভারতের অন্তরে প্রোথিত করে গিয়েছেন মানুষের ইচ্ছা আর লক্ষ্যপূরণের শক্তিকে। অর্থাৎ তাঁরা তিনজনই একটি করে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গিয়েছেন। যা ভারতে নজিরবিহীন। বাংলার এই তিন মনীষী আছেন। বাঙালি অন্ধ অনুসরণকারী নয়, দিশানির্দেশকারী জাতি। আত্মমর্যাদা চায়। এটা বুঝতে হবে তো! আমাদের আবার নতুন করে নীতি আদর্শ শিখতে হবে কেন?