প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন খসড়া বাজেট তৈরি করবেন এবং এই প্রসঙ্গে তাঁর বিবৃতি ‘এমন বাজেট কখনওই হয়নি’ পড়ার পর আমি বস্তুত এমনটাই বলেছিলাম।
ত্রুটিপূর্ণ আইনগুলোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন সকলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির চার সদস্যের নাম (যাঁদের সকলেই কৃষি আইনের সমর্থক) পড়ার পরেও অনেকে এই কথাটা উচ্চারণ করেছিলেন।
উদ্ধত ভঙ্গি
যে-দেশে আমরা আজ বাস করছি সেটা দিনে দিনে অচেনা এবং বিস্ময়কর হয়ে যাচ্ছে। এটা খুব অবাক ব্যাপার নয় কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটা সরকার তার পুরনো গোঁ ধরেই বসে থাকবে, বিশেষ করে দিল্লির ভয়ানক শীতের মধ্যেও কৃষকদের প্রতিবাদ আন্দোলন যখন ৫৬ দিনে পা দিয়েছে? এটা অদ্ভুত নয় কি একদিকে মন্ত্রী এবং পার্টির নেতারা প্রতিবাদী কৃষকদের খালিস্তানি (অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতাবাদী) বলে বিঁধছেন আর অন্যদিকে সরকার তাঁদেরকেই আলোচনার টেবিলে ডাকছে?
বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো নিভৃত জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে। তথ্যের অধিকার (আরটিআই) বিষয়ে এক উৎসাহী কর্মী হলেন অঞ্জলি ভরদ্বাজ। কৃষি আইনগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য দাবি করে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আরটিআই অনুসারে আবেদন করেছিলেন। তিনি বিশেষ করে জানতে চেয়েছিলেন ‘প্রস্তাবিত আইনের জন্য পরামর্শ গ্রহণের আলোচনার তারিখগুলো’ এবং ‘ওই সমস্ত বৈঠক/ আলোচনার সংক্ষিপ্ত কার্যবিবরণী’। সমস্ত সেন্ট্রাল পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার (সিপিআইও) রিপোর্ট দিলেন যে ‘এই বিষয়ে এই সিপিআইও-র কাছে কোনও রেকর্ড বা তথ্যাদি থাকে না।’ ফলে অঞ্জলি দেবী একের পর এক দপ্তরে তাঁর প্রশ্নমালা পাঠিয়ে গেলেন। তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে সরকার দাবি করল যে ‘কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংসদ কোনও ইস্যুতে কখনওই পরামর্শ গ্রহণ কিংবা খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যায়নি—প্রতিবাদীরা এই যে ভুল ধারণা ফেরি করেছেন, তা দূর করার জন্যই’ এই হলফনামা দেওয়া হচ্ছে। খেয়াল করুন—‘প্রতিবাদীরা ফেরি করেছেন’ শব্দগুলো হলফনামার মতো একটা বিধিসম্মত গুরুগম্ভীর জিনিসের ভিতরে তাচ্ছিল্যভরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরটিআই থেকে কোনও উত্তরই মেলেনি, এটা সংবাদপত্রে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কৃষিমন্ত্রক তড়িঘড়ি ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছে যে, বিষয়টা অনেকগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই দেওয়া যাবে না! অ্যালিসের মতোই বলা যায়, এটা আরও বিভ্রান্তিকর ঠেকছে।
কোনও পরামর্শ করা হয়নি
সত্যিটা এই যে, ২০২০ সালের ৫ জুন অর্ডিন্যান্সগুলো জারি করার আগে প্রস্তাবিত কৃষি বিলগুলো নিয়ে না কৃষক, না কৃষি অর্থনীতিবিদ কারও সঙ্গেই পরামর্শ/আলোচনা করা হয়নি। এমনকী, বিস্তারিত আলোচনা (অথবা সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো) ‘এবং’ ভোটাভুটির মাধ্যমে ‘ডিভিশন’-এর দাবি এড়িয়ে গিয়েই বিলগুলো তথাকথিত ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। কৃষকদের একটা বড় অংশই এই ক্ষতিকর আইনগুলো চান না। তাঁরা বিহারের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যেখানে নীতীশ কুমার সরকার কয়েক বছর আগে এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) আইন বাতিল করেছে। পরিণাম এটাই হয়েছে: যখন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ১৮৫০ টাকা তখন সেখানকার কৃষকরা এক কুইন্টল ধান বিক্রি করেন মাত্র ৮০০ টাকায়।
কৃষকরা চান আইনগুলো প্রত্যাহার করা হোক, আর সরকার আইনের পক্ষে সাফাই গেয়েছে এবং কৃষক প্রতিনিধিদের বলেছে, আইনগুলোর ধারা ধরে ধরে আলোচনা করতে! অদৃষ্টের পরিহাসটাও দেখুন: যে সরকার ধারা ধরে ধরে আলোচনা কিংবা ভোটাভুটি ছাড়াই বিলগুলো রাজ্যসভার মাধ্যমে গছিয়ে দিল, সেই সরকারের উচিত হচ্ছে কি সিংঘুরের রাস্তায় ‘ক্লজ বাই ক্লজ’ ডিসকাশনের জন্য অফার করা!
অবশ্যকর্তব্য, কিন্তু করবেন না
এর মধ্যে আমরা পেলাম অর্থমন্ত্রীর কৌতূহলোদ্দীপক ঘোষণা। তিনি কী করতে পারেন এবং করবেন, সেটার থেকে তাঁর অবশ্যকর্তব্যটা ভীষণ আলাদা। প্রত্যেক নামী অর্থনীতিবিদ একমত যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে অনেক কিছুই করা উচিত ছিল, কিন্তু ভয়, দুর্বলতা অথবা অজ্ঞতার কারণে সেসব করা হয়নি:
১. সবচেয়ে গরিব মানুষগুলোর অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা ট্রান্সফার করা হয়নি।
২. পরোক্ষ করগুলো, বিশেষত জিএসটির হার, কমানো হয়নি।
৩. সরকারের মূলধনী ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
৪. অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) পুনরুজ্জীবন প্রকল্পটাকে—সংস্থাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি বাঁচাবার মতো করে সাজানো হয়নি।
ডঃ অরবিন্দ পানাগড়িয়া, ডঃ সি রঙ্গরাজন এবং ডঃ জাহাঙ্গির আজিজ-সহ অনেক অর্থনীতিবিদ উপর্যুক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা উচিত বলে বারবার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তত এখনকার মতো এই পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। মহামারীর আগের তিন বছরের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) দিকে তাকানো যাক, যা নিত্যমূল্যে (কনস্ট্যান্ট প্রাইস) নির্ধারিত: ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১৩১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ সালে ১৩৯.৮১ লক্ষ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ সালে ১৪৫.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। ফার্স্ট অ্যাডভান্সড এস্টিমেটস অনুসারে, ২০২০-২১ সালের জিডিপি হবে ১৩৪.৪০ লক্ষ কোটি টাকা। তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে, ২০১৯-২০ সালের জিডিপির স্তরে পৌঁছতেও ২০২১-২২ সালের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারকে ৮.৩৭ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বৃদ্ধির হার এর চেয়ে যে-কোনও পরিমাণ কম হওয়ার অর্থ ২০২০-২১ সালে অর্থনীতি ১১ লক্ষ কোটি টাকা (কনস্ট্যান্ট প্রাইসে) হারাবে, যার জেরে ২০২১-২২ সালেও নতুনভাবে আর্থিক ক্ষতির সমস্যায় পড়তে হবে। আর বর্তমান মূল্যে (কারেন্ট প্রাইস), সাধারণ মানুষের পক্ষে যা সহজে বোধগম্য, ২০২০-২১ সালে ক্ষতির পরিমাণটা দাঁড়াবে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বা ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২১-২২ সালে বৃদ্ধির হারটাকে ৮.৩৭ শতাংশে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী কী করতে পারেন? রাজস্ব নিয়ে চাপের ভিতরে (কারণ অর্থনীতির অবনমন ঠেকানোর জন্য যতটা করা জরুরি ছিল তা করা হয়নি) থাকাকালে ক্যাশ ট্রান্সফার বা করের হার কমানোর পথে তিনি যাবেন কি না তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। সমস্ত সরকারি ব্যয় তিনি বাড়াতে পারতেন এবং (১) এমএসএমই-র জন্য ‘রেসকিউ প্ল্যান’ কার্যকর ও (২) পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করতে পারতেন। অন্যদিকে, (৩) প্রতিরক্ষা এবং (৪) স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতেও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য উচ্চকণ্ঠে দাবি উঠবে। কিছু দিতে হবে এবং আমার মনে হয় সেটা হবে এমএসএমই রেসকিউ প্ল্যান এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।
যদি পরোক্ষে ২০২১-২২ সালের বাজেটের ‘কনটেক্সট’-এ অর্থমন্ত্রী ওই কথাটা বলে থাকেন তবে তিনি ঠিক। আশা করি, ‘কনটেন্ট’-এর প্রশ্নেও তিনি দেশবাসীকে হতাশ করবেন না, যেমনটা তিনি মহামারী মোকাবিলার বছরে করে ফেলেছেন।