প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
স্বামী বিবেকানন্দের জীবন সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে চাই। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি, উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবীর ঘরে জন্ম হয় নরেন্দ্রনাথ দত্তের। ছোটবেলা থেকেই মেধায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। নিতান্ত বাল্যকালেই তাঁর মধ্যে অধ্যাত্মচেতনার বীজ বপন হয়েছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ আলোকে ও শক্তিসিঞ্চনে তা অঙ্কুরিত এবং ক্রমে বৃক্ষে পরিণত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে থেকে তিনি হয়ে ওঠেন জ্যোতির্ময় এক পুরুষ। ১৮৮১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান নরেন্দ্রনাথের জিজ্ঞাসু মনের পিপাসা মেটান শ্রীরামকৃষ্ণ। নরেন্দ্রনাথকে নির্বিকল্প সমাধির স্বাদ অনুভব করান ঠাকুর। সাধনার মাধ্যমে নরেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক জীবনের সর্বোচ্চ অনুভব অনুভূত হয়।
‘জীবসেবাই শিবসেবা’ এই মহামন্ত্রও শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রনাথকে দিয়ে গিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষিত, অদ্বিতীয় মেধাবী, শ্রুতিধর, সঙ্গীতজ্ঞ, দার্শনিক, সাহিত্যিক, এক আধারে কোটিগুণের আধার এক তরুণ—তিনি চাইলেই ঐহিক জীবনের সমস্ত সুখ পেতে পারতেন। কীসের তাড়নায় তবে এই কঠোর জীবন বেছে নেওয়া? শুধু স্বধর্মের জন্য, গুরুর কাজের জন্য নয়, তাঁর মন পড়েছিল সমগ্র ভারতবাসীর জন্য। তাই তিনি স্বামীজি, শাশ্বত ভারতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বামী বিবেকানন্দের অনুগামী। তাঁর জীবন ও আদর্শ ছাত্রজীবনেই আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করি, আমার জীবন ও রাজনীতি তাঁর দ্বারা প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত। আমাদের সময়ের ছাত্র রাজনীতিকে তাঁরই পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়াসী ছিলাম আমরা।
যুবসমাজ ও স্বামীজি
আত্মিক উন্নতির জন্য স্বামীজি যে ধরনের অভ্যাসের কথা বলেছেন, তা একটি স্বতন্ত্র যাপনের স্পষ্ট নির্দেশ দেয়। যে যাপন বা অনুশীলন প্রৌঢ় বা বৃদ্ধাবস্থায় সম্ভব নয়। স্বভাবগত প্রবৃত্তি দূর করতে হলে তা তরুণ বয়স থেকেই অভ্যাস করা দরকার। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, গাছ, চারা থাকতেই বেড়া দিতে হয়, না হলে গোরু-ছাগলে মুড়িয়ে খায়। স্বামীজি বলছেন, “অসংযত ও উচ্ছৃঙ্খল মন আমাদের নিয়ত নিম্ন থেকে নিম্নতর স্তরে নিয়ে যাবে এবং চরমে আমাদের বিধ্বস্ত করবে, ধ্বংস করবে। আর সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত মন আমাদের রক্ষা করবে, মুক্তিদান করবে।”
তারুণ্যের উদ্যম ও শক্তির উপর গোটা দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করে। তাই তাঁর বাণী, জীবন, রচনা তরুণ হৃদয়েই প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। তিনি প্রতিনিয়ত তাঁর বাণীতে উৎসাহ যুগিয়ে চলেছেন, আজও। “সাফল্য লাভ করিতে হইলে প্রবল অধ্যবসায়, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকা চাই। অধ্যবসায়শীল সাধক বলেন, ‘আমি গণ্ডূষে সমুদ্র পান করিব। আমার ইচ্ছামাত্র পর্বত চূর্ণ হইয়া যাইবে।’ এইরূপ তেজ, এইরূপ সংকল্প আশ্রয় করিয়া খুব দৃঢ়ভাবে সাধন করো। নিশ্চয়ই লক্ষ্যে উপনীত হইবে।” আমরা দেখেছি, ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে, কত কত বিপ্লবী তাঁর আদর্শে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য সমর্পিত হয়েছেন, তার জ্বলন্ত উদাহরণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। মাস্টারদা সূর্য সেন কতখানি বিবেকপ্রেমী ছিলেন, তার সাক্ষ্য পাওয়া যায় তাঁর সহকর্মী অনন্ত সিংহের লেখায়, “মাস্টারদা ... বিনয়ের সঙ্গে অথচ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে চারজন বিপ্লবী বন্ধুকে বললেন, ‘আমরা চট্টলার বুকে বসে মাত্র এই পাঁচজনে ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবের পরিকল্পনা করছি। আমার মনে হয় বর্তমানে মূলত আনন্দমঠের আদর্শে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলা উচিত এবং মা-কালীর পূজা, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের বাণী ও গীতাপাঠ কর্তব্য হওয়া প্রয়োজন, ইত্যাদি ইত্যাদি।’’
স্বামীজীর অনুপ্রেরণায় ভগিনী নিবেদিতা ঝাঁপিয়ে পড়েন কলকাতার প্লেগ মহামারীর কাজে। বাংলার অনেক স্বনামধন্য হিন্দু মহাপুরুষরা যখন পালাচ্ছেন কলকাতা ছেড়ে, তখন বিদেশিনী এক মহিলা রাস্তার জঞ্জাল সাফ করে মহামারীকে জয় করার চেষ্টা করে চলেছেন। এতটাই দীপ্ত ছিল এই তরুণ সন্ন্যাসীর আবেদন। শুধু মহামারী নয়, নারীশিক্ষাতেও ভগিনী নিবেদিতার অবদান ছিল। স্বামীজি বলেছিলেন, যেদিন ভারতবর্ষের নারীরা শিক্ষিত হবে, সেইদিন ভারত শিক্ষিত হবে। সেই আদর্শ ও শ্রীশ্রীমা সারদা দেবীর আশীর্বাদে ও উৎসাহে ভগিনী নিবেদিতা বাংলার মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করেন, নানান কারিগরি বিদ্যায় প্রশিক্ষিত করে স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করেন।
এক নতুন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বামীজি, যেখানে দারিদ্র্যের মোচন এবং চেতনার উন্মেষ ঘটবে। এই কাজে প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ যুবশক্তি। ১৯৮৫ সাল থেকে ভারতে জাতীয় যুব দিবস পালিত হচ্ছে। একটাই উদ্দেশ্য, তাঁর জীবন থেকে দেশের যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করা। পশ্চিমবঙ্গে এই কাজে নেমেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা ভারতের যে নতুন রূপরেখা তৈরি করে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছেন, সেই যাত্রায় পশ্চিমবঙ্গকে জুড়তে হবে। আমি বাংলার গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছি, সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মুষ্টিভিক্ষা চাইছি, আহার গ্রহণ করছি তাঁদের সঙ্গে আর বাংলার যুবসমাজের কাছে বিবেকানন্দের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি—“হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। ওঠ, জাগো, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের ভিতরেই আছে। একথা বিশ্বাস করো, তা হলেই ওই শক্তি জেগে উঠবে।”
সাধারণ মানুষের আশীর্বাদে, আগামিদিনে পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে, বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষীদের স্বপ্নের বাংলা আবার গঠিত হবে। যুব সমাজের নেতৃত্বে নবচেতনার প্রভাতী সূর্য আবার বাংলার দিগন্তে আশার আলো ফোটাবে। আর এই নবজাগরণে স্বামীজির মহান আদর্শ আমাদের পাথেয় হবে। আজ ১২ জানুয়ারি ২০২১ কেবল একটি তারিখমাত্র নয়। বর্তমান এই প্রান্তিক সময়ে নতুন যুগের আহ্বানে এই তরুণ সন্ন্যাসীই হোন ভারতের নবজাগরণের আদর্শ।
লেখক বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। মতামত ব্যক্তিগত