প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
সহ-অভিনেতার সঙ্গে মজা করাও ছিল ছবি বিশ্বাসের একটা নেশা। স্টেজে একবার খুবই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন তাঁর সহশিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছবি বিশ্বাস মজা করার জন্যই মাইকে অন্য সংলাপ বলে প্রায়শই ভানুকে বিপদে ফেলতেন। পরে আবার নিজেই সামলে নিতেন। একদিন ভানু মনে মনে ঠিক করলেন, একবার অন্তত ছবিদাকে অপ্রস্তুতে ফেলে এর শোধ নিতেই হবে। কিন্তু এদিকে তাঁর এই পরিকল্পনার কথা কীভাবে যেন আগেভাগেই জেনে ফেলেছিলেন ছবি বিশ্বাস। তাই ভানু খেলা শুরু করার আগেই তিনি একেবারে ভেল্কির খেলা দেখিয়ে ছাড়লেন।
স্টার থিয়েটারে ‘ডাক বাংলো’ নাটকে একটা দৃশ্যে মঞ্চে প্রবেশ করলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি বিশ্বাস তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মশাইয়ের নামটা?’
‘আজ্ঞে, কৃতান্ত বিশ্বাস,’ ভানু উত্তর করলেন। ছবিবাবু তখন বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে উপদেশ দিলেন ‘হুম! কাউকে বিশ্বাস করবেন না।’ ভানু বললেন, ‘এজ্ঞে, আচ্ছা।’ ছবি বিশ্বাস সঙ্গে সঙ্গে বললেন— ‘আবার কাউকে অবিশ্বাসও করবেন না।’
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় মনে মনে প্রমাদ গুনলেন। ততক্ষণে বুঝে ফেলেছেন আজ কিছু একটা গণ্ডগোল হবে। তিনি এজ্ঞে, আচ্ছা বলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। ছবি বিশ্বাস তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘আরে মশাই, চলে যাচ্ছেন যে! আমার কথাই তো এখনও শেষ হয়নি। আপনি বিশ্বাসও করবেন না, আবার অবিশ্বাসও করবেন না। তাহলে কী করবেন? সেটা তো বলে যান।’
ভানু তখন হাতজোড় করে বিড়বিড় করে বললেন, ‘ছবিদা খুব অন্যায় হয়ে গিয়েছে। আর কোনওদিন করব না।’ ছবি বিশ্বাসও তখন বিড়বিড় করে বললেন, ‘ব্যাটা, আর চালাকি করবি আমার সঙ্গে? বল বাড়ি গিয়ে ভাবব।’ ভানু সেই কথা বলেই শেষপর্যন্ত নিস্তার পেলেন।
আসলে মজা করলেও ভানুকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন তিনি। ‘ছবি জ্যাঠামশাই বাবাকে নিজের ছোটভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন। জ্যাঠামশাইয়ের জীবনের শেষ ১০-১১ বছর ফিল্ম লাইনে বাবার থেকে আপনার বলতে আর কেউ ছিলেন না। বাবা ছাড়া অবশ্য নৃপতি চট্টোপাধ্যায়কেও খুব ভালোবাসতেন জ্যাঠামশাই,’ বলছিলেন ভানু-পুত্র গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি বিশ্বাস যে তাঁর বাবার সঙ্গে মজা করতেন সেই কথাও বললেন গৌতমবাবু। শোনালেন একটা মজার ঘটনা। ‘নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে’ ছবির প্রিমিয়ার শো হচ্ছে। নির্মল দে’র সেই ছবিতে ছবি বিশ্বাস, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন ভানু-কন্যা বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শুধু অভিনয় করাই নয়, বাসবী সেই ছবিতে অভিনয় করে সেরা শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। গৌতম বলছিলেন,‘তখন আমার বোনের কতই বা বয়স হবে! সাত কি আট বড়জোর। হঠাৎ বোন এসে হল ভর্তি লোকের সামনে বলল—বাবা, আমি তো একটা বইয়ে অভিনয় করেই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাব, তুমি সারাজীবন অ্যাক্টিং করে কী করলে? বাবা প্রথমটায় থমকে গেলেও পরক্ষণেই বুঝতে পারলেন যে, এ ছবি জ্যাঠামশাইয়ের কাজ। উনিই এটা বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছেন।’
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় ‘কাঞ্চনমূল্য’ ছবির জন্য অনেক কম পারিশ্রমিকে কাজ করেছিলেন ছবি বিশ্বাস। অভিনয় ছাড়াও নানারকম পরামর্শ দিতেন প্রযোজক মশাইকে। দুপুর ২টোয় শ্যুটিং থাকলে সেটে চলে আসতেন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে। শ্যুটিং না থাকলেও মাঝে মাঝে সেটে এসে ঘুরে যেতেন। আবার শ্যুটিং প্যাক আপ হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ বসে সকলের সঙ্গে আড্ডা মারতেন। তৎকালীন ‘স্কাইরুম’ রেস্তরাঁ থেকে ছবি বিশ্বাসের জন্য রোজ বিকেলে এক প্যাকেট হ্যাম, সসেজ আসত। রেস্তরাঁ ম্যানেজার নিজে এসে স্টুডিওতে পৌঁছে দিয়ে যেতেন। তার থেকে কিছুটা ভানু আর তাঁর পুত্র গৌতমের জন্য বরাদ্দ থাকত। তবে, কাজ শেষ করে ভানু না আসা পর্যন্ত ছবি বিশ্বাস খাবারে হাতই দিতেন না। ভানু এসে বসতেন, তারপর তিনি খেতেন। খেতে খেতে শট নিয়ে আলোচনা চলত। একদিন অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায় ধরলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে—‘ছবিবাবুর ছায়াছবি কদ্দূর?’ ভানু বললেন, ‘বেশ দূর’। তখন জহর গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা ছবিবাবুকে প্রশ্ন করলেন, ‘ভানুর বই নিয়ে বেশ জড়িয়ে পড়েছেন মনে হচ্ছে?’ উত্তরে ছবি বিশ্বাস বললেন, ‘হবে না! ভেনোর ফিল্ম, যাতে ঠিকঠাক চলে সেটা দেখতে হবে তো।’
‘কাবুলিওয়ালা’ যখন বার্লিন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হল তখন সেই উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে গিয়েছিলেন ছবি বিশ্বাস। স্মৃতি রোমন্থন করে গৌতম বলছিলেন,‘বাবার আনন্দ তখন দেখে কে! বাবার ধারণা ছিল জ্যাঠামশাই নির্ঘাৎ এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাবেন। জ্যাঠামশাইকে সি-অফ করতে বাবা দমদম বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। উনি বার্লিন থেকে ফেরার পর লাগাতার প্রায় মাসখানেক আমাদের বাড়িতে বার্লিন ফেস্টিভ্যালের নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা হতো।’